ফ্রম দ্যা হার্ট অফ ডার্কনেস
ইজরায়েলি নাগরিক অভি শ্লেইম(Avi Shlaim ) অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ষাটের দশকে তিনি ইজরায়েল সেনাবাহিনীর সদস্যা ছিলেন। তাঁর এই আর্টকেলটি ৭ই জানুয়ারী,২০০৯ -এ দ্যা গার্ডিয়ানে প্রথম প্রকাশিত হয়।
মুললেখাটি পাবেন এখানে
..................................................................................................।
ইজরায়েলের এই বোধবুদ্ধিহীন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিত বোঝার একমাত্র উপায় একে ইতিহাসের নিরিখে বিশ্লেষণ করা।
মে, ১৯৪৮ সালে ইজরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ছিলো ফিলিস্তিনিদের প্রতি ভীষন এক অবিচার। ব্রিটিশ কর্মকর্তারা এই শিশু রাষ্ট্রের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট মার্কিন অংশদারিত্বকে তীব্রভাবে প্রত্যাখান করেছিলো। ২রা জুন, ১৯৪৮-এ স্যার জন ট্রুটবেক বিদেশ সচিব আর্নেষ্ট বেভিনকে লিখেছিলো যে একদংগল অসাধু নেতৃত্ব দ্বারা পরিচালিত এই দূর্বৃত্ত রাষ্ট্রের জন্মদানের জন্য আমেরিকানরাই দ্বায়ী। আমার মনে হয়েছিল এই মুল্যায়ন খুব বেশি বিবেচনাপ্রসুত নয় কিন্তু গাজার জনগনের উপর ইজরায়েল নির্মম আক্রমন এবং তাতে বুশ প্রসাশনের আত্মতৃপ্তি প্রশ্নটিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।
আমি এমন একজন হিসেবে লিখছি যে মধ্য ৬০-এর দশকে ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর এক অনুগত সদস্য ছিল এবং যে কখনোই ১৯৬৭পূর্ব সীমানায় ইজরায়েল রাষ্ট্রের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেনি।
জুন,১৯৬৭ যুদ্ধের পরবর্তি প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিম তীর এবং গাজা ভুখন্ডে ইজরায়েলি দখলদ্বারিত্বের সাথে তার নিরাপত্তার সংযোগ যৎসামান্য এবং পুরোটাই সম্প্রসারণবাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত। মুল উদ্দেশ্য ছিলো ফিলিস্তিনি ভুখন্ডের উপর স্থায়ী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক নিয়ন্ত্রনের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর
ইজরায়েলের প্রতিষ্ঠা। এবং তার ফলাফল সমসাময়িক ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এবং নিষ্ঠুর সামরিক দখলদ্বারিত্ব।
চার দশকের ইজরায়েলি নিয়ন্ত্রন গাজা ভুখন্ডের অর্থনৈতিতে এক
অপরিমাপযোগ্য ক্ষতিসাধন করে। ৪৮ সালের উদ্বাস্তুরা অতি ক্ষুদ্র এক ভুখন্ডে মাথা গোজাগুজি করে আশ্রয় নেই যেখানে না ছিলো কোন অবকাঠামো না ছিলো কোন প্রাকৃতিক সম্পদ, গাজার ভবিষ্যত কখনোই উজ্জল ছিল না।
তবে গাজা শুধু এক সহজ সরল অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতার দৃষ্টান্ত নয়, সেই সংগে ইচ্ছাকৃত অনুন্নয়নের এক নির্মম উদাহরণ। বাইবেলের বাণী ব্যবহার করতে গাজার অধিবাসীদেরকে কাঠুরে এবং পানি উত্তোলকে পরিণত করা হয়, সস্তা শ্রম ও ইজরায়েলি পণ্যের দখলীকৃত বাজারে পরিণত করা হয়। স্থানীয় উৎপাদনকে প্রবলভাবে বাধাদান করা হয় যাতে ফিলিস্তিনিরা কোনভাবেই ইজরায়েল নির্ভরতা শেষ করতে না পারে এবং অর্থনৈতিক ভিত তৈরি করতে না পারে যেটা সত্যিকার রাজনৈতিক মুক্তির জন্য অপরিহার্য।
গাজা উত্তর-ঔপনিবেশ যুগে ঔপনিবেশিক শোষনের এক ধ্রুপদি দৃষ্টান্ত। অধিকৃত ভুমিতে ইহুদি স্থাপনা অনৈতিক, অবৈধ এবং শান্তির পথে এক অনাতিক্রম্য বাধা।
তারা একই সংগে শোষনের উপকরন এবং ঘৃন্য দখলদ্বারিত্বের প্রতিক। ২০০৫-এ গাজায় ইহুদি দখলদারীর সংখ্যা ছিল ৮০০০ তুলনায় স্থানীয় অধিবাসীর সংখ্যা ১৪ লক্ষ। তা সত্বেও বসতিস্থাপনকারিরা মোট ভুখন্ডের ২৫ ভাগ, চাষযোগ্য ভুমির ৪০ ভাগ এবং দুস্প্রাপ্য পানির সিংহভাগ কুক্ষিগত করে রেখেছিলো। এইসব বিদেশি অনুপ্রবেশ কারীদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে, স্থানীয় জনসংখ্যার বৃহদাংশ নিদারুন দ্ররিদ্রতা এবং অকল্পনীয় দু:খকষ্টে দিনানিপাত করে। শতকরা ৮০ ভাগ এখনো দৈনিক দুই ডলারের নীচে জীবিকা নির্বাহ করে।
গাজায় তাদের এই জীবনযাপন সভ্যতার বোধগুলোর প্রতি এক চটোপঘাত, প্রতিরোধের এক শক্তিশালি নিয়ামক এবং রাজনৈতিক চরমপন্থার এক উর্বর প্রজননক্ষেত্র।
২০০৫ সালের আগষ্টে অ্যারিয়েল শ্যারনের নেতৃত্বাধীন লিকুদ সরকার গাজা থেকে একপাক্ষিকভাবে ইজরায়েলি প্রত্যাহার মন্চন্স্থ করে' তারা ৮০০০ বসতিস্থাপনকারীর সবাইকে সরিয়ে ফেলে, ধংসকৃত বাড়িঘর এবং কৃষি অবকাঠামো পিছনে ফেলে/হামাস,
ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন ইজরায়েলিদের গাজা থেকে বের করে দিতে এক কার্যকর প্রচারণা চালায়। এই প্রত্যাহার ছিলো ইজরায়েলি সামরিক বাহিনীর জন্য এক অবমাননা। শ্যারন গাজা থেকে প্রত্যাহার কর্মসুচিকে বিশ্ববাসীর কাছে দুই রাষ্ট ভিত্তিক শান্তি প্রক্রিয়ায় তাদের অবদান হিসেবে উপস্থাপন করে। কিন্তু পরের বছরেই পশ্চিমতীরে আরো ১২০০০ ইজরায়েলি বসতি স্থাপন করে, একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্ভবনাকে আরো সংকুচিত করে।
জমিদখল আর শান্তিস্থাপন কোনভাবেই একসাথে চলতে পারেনা। ইজরায়েলের বেছে নেওয়ার উপায় ছিলো এবং সে শান্তির পরিবর্তে জমিকেই বেছে নিয়েছে।
মুল উদ্দ্যেশ্য ছিলো পশ্চিম তীরে প্রধান দখলীকৃত স্থাপনা সমুহকে যুক্ত করে বৃহত্তর ইজরায়েলের সীমানা এক পাক্ষিকভাবে পূণর্নির্ধারণ। গাজা থেকে প্রত্যাহার ফিলিস্তিনি কতৃপক্ষের সাথে শান্তিস্থাপনের পুর্বপদক্ষেপ ছিলোনা,ছিলো পশ্চিম তীরে জায়ানিষ্ট সম্প্রসারনবাদের পুর্বপদক্ষেপ। এটা ছিলো ইজরায়েলি জাতীয় স্বার্থে এককভাবে নেয়া আমার দৃষ্টিতে এক ভুল ইজরায়েলি পদক্ষেপ।
ফিলিস্তিনি জাতীয় পরিচয়কে মুলগতভাবে প্রত্যাখানের নীতিতে গৃহীত গাজা প্রত্যাহার ছিলো ফিলিস্তিনি ভুমিতে ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিক অস্তিত্বকে অস্বীকার করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ।
বসতিস্থাপনকারিদের সরিয়ে নেওয়া হলেও ইজরাইলি সৈন্যরা স্থল, সমুদ্র এবং আকাশপথে গাজা ভখন্ডের সমস্ত প্রবেশদ্বারকে নিয়ন্ত্রন করতে থাকে। গাজা রাতারাতি এক খোলা-আকাশ কারাগারে রুপান্তরিত হয়। এই অবস্থান থেকেই ইজরায়েলি বিমানবাহিনী সেখান বোমা ফেলার এক বাধাহীন অধিকার উপভোগ করতে শুরু করে, নীচু ভাবে উড়ে বিকটশব্দে শ্রবণসীমা অতিক্রম করে এবং সেই কারাগারের হতভাগ্য অধিবাসীদের আতংকিত করতে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ নির্লজ্জভাবে ইজরায়েলের পক্ষাবলম্বন করে হামাস সরকারকে একঘরে এবং দোষারোপ করতে থাকে এবং রাজস্ব আয়, বৈদেশিক সাহায্য আটক করে তার পতন ঘটানোর চেষ্টা করতে থাকে।
এভাবে এক পরাবাস্তব অবস্থার তৈরি হয় যেখানে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হয় দখলকারীর বিরুদ্ধে নয়,দখলীকৃতদের বিপক্ষে, অত্যাচারীর বিপক্ষে নয়;অত্যাচারিতদের বিপক্ষে।
(আগামী পর্বে সমাপ্য)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।