ফ্রম দ্যা হার্ট অফ ডার্কনেস
ইজরায়েলি নাগরিক অভি শ্লেইম(Avi Shlaim ) অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ষাটের দশকে তিনি ইজরায়েল সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। তাঁর এই আর্টকেলটি ৭ই জানুয়ারী,২০০৯ -এ দ্যা গার্ডিয়ানে প্রথম প্রকাশিত হয়।
মুললেখাটি পাবেন এখানে
অনুবাদের প্রথম পর্ব
....................................................................................................।
ইজরায়েল স্বৈরতান্ত্রিকতার জগতে নিজেকে গণতন্ত্রের এক দ্বীপ হিসেবে চিহ্নিত করতে ভালবাসে।
তবু ইজরায়েল তার দীর্ঘ ইতিহাসে আরবদেশগুলোতে গণতন্ত্র বিকশিত করতে কখনোই কোন অবদান রাখেনি বরং গণতান্ত্রিক চেতনাকেই অবদমিত করতে যথেষ্ঠ ভুমিকা নিয়েছে। দীর্ঘসময়ধরে ইজরায়েল প্রতিক্রিয়াশীল আরবরাষ্ট্রগুলোর সাথে গোপনে হাত মিলিয়ে ফিলিস্তিনি জাতিয়তাবাদকে দমন করতে চেয়েছে। সমস্ত ধরনের বাধাবিপত্তি সত্বেও সম্ভবত লেবাননের বাইরে আরববিশ্বে একমাত্র ফিলিস্তিনি জনগণই সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সফল হয়েছেন।
জানুয়ারী,২০০৬ সালে এক স্বচ্ছ এং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনি আইন পরিষদে হামাস নেতৃত্বধীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ঘটনাক্রমে ইজরায়েল গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হামাস সরকারকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে এই বলে যে হামাস নিছক এক সন্ত্রাসী সংগঠন ছাড়া আর কিছুই নয়।
ফিলিস্তিনের নির্মম ইতিহাসে নির্যাতিতরাই বরাবরের মতো আবারো তঁদের দুর্ভাগ্যের জন্য দোষী সাব্যস্ত হন। ইজরায়েলের প্রোপাগান্ডা যন্ত্র বিরামহীনভাবে প্রচার করতে থাকে
ফিলিস্তিনিরা সন্ত্রাসী, তারা ইহুদী রাষ্ট্রের সাথে সহাবস্থান প্রত্যাখান করেছে, তাদের জাতীয়তাবাদ এন্টিসেমিটিজমের(ইহুদীবাদ বিরোধিত) চেয়ে বেশি কিছু নয়,হামাস কতিপয় ধর্মান্ধের সংঘঠন এবং ইসলাম গণতন্ত্রের সাথে অসামন্জস্যপুর্ণ। কিন্তু সরল সত্য হলো ফিলিস্তিনি জনগণ স্বাভাবিক আকাংখা সহ স্বাভাবিক মানুষ। তাঁরা অন্য জাতিগোষ্ঠীর চেয় ভালো কিংবা খারাপ কিছু নয়। সর্বোপরি তাদের আকাংখা নিজেদের একখন্ড জমি ভুমি যেখানে তারা স্বাধিনতা এবং সম্মানসহ জীবনযাপন করতে পারবে।
অন্যান্য ধর্মীয় আন্দোলনের মতোই হামাস ক্ষমতায় অধিষ্ঠানের পরে তাদের রাজনৈতিক কর্মসুচীকে মডারেট করতে শুরু করে। মতাদর্শিক প্রত্যাখানের কর্মসুচি থেকে সরে এসে তারা দুই-রাষ্ট্র ভিত্তিক বাস্তব সমাধানের দিকে ফিরতে শুরু করে। ২০০৭ সালের মার্চ মাসে হামাস এবং ফাতাস এক ঐক্যমতের সরকার গঠন করে যারা ইজরায়েলের সাথে এক দীর্ঘমেয়াদি অস্ত্রবিরতিতে যেতে রাজি ছিলো। কিন্তু ইজরায়েল হামাস অন্তর্ভুক্ত কোন সরকারের সাথে আলোচনায় যেতে অস্বীকার করে।
প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিনি গোষ্ঠির মধ্যে,"ডিভাইড এন্ড রুল", ইজরায়েল সেই পুরনো চাল চালতে থাকে।
৮০ দশকের শেষভাগে ইজরায়েল নবজাতক হামাসকে সমর্থন দান শুরু করে ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ, সেক্যুলার জাতিয়তাবাদী আন্দোলনকে,
দুর্বল করতে। আর এখন ইজরায়েল দুর্ণীতিবাজ এবং নতজানু ফাতাহ নেতৃত্বকে সাহস যোগাচ্ছে তাদের ধর্মীয়-রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হামাসকে উৎখাত করতে এবং ক্ষমতা পুণরায় কুক্ষিগত করতে। উগ্র মার্কিন নব্যরক্ষণশীলরা (neoconservatives)
ফিলিস্তিনি গৃহযুদ্ধ শুরু করার এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। জাতীয় ঐক্যমতের সরকার ব্যবস্থা ভেংগে পড়া এবং হামাস কতৃক গাজা হতে ফাতাহকে উচ্ছেদে তাদের হস্তক্ষেপ প্রধানতম ভুমিকা রাখে।
২৭ শে ডিসেম্বর গাজায় ইজরায়েল যুদ্ধঘোষনা হামাস সরকারের সাথে তাদের একাধিক দ্বন্দ-সংঘাতের এক চুড়ান্তীকরন।
বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে এই যু্দ্ধ ইজরায়েল এবং ফিলিস্তিনি জনগণ যারা হামাস সরকারকে নির্বাচিত করেছিলো তাদের মধ্যকার লড়াই।
যুদ্ধের ঘোষিত লক্ষ্য হামাসকে দুর্বল করা এবং তার নেতাদের উপর প্রচন্ড চাপ প্রয়োগ করা যাতে ইজরায়েলি শর্তাধীনে তারা নতুন এক অস্ত্রবিরতিতে বাধ্য হয়। আর অঘোষিত লক্ষ্য বিশ্ববাসীরসামনে গাজাকে শুধুই এক মানবিক সমস্যা হিসেবে উপস্থাপন এবং এভাবেই স্বাধিনতা এবং সার্বভৌমত্বের জন্য ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামকে লক্ষ্যচ্যুত করা।
যুদ্ধের দিনক্ষন নির্ধারিত হয়েছে রাজনৈতিক উপযোগিতাকে সামনে রেখে। ১০ই ফেব্রয়ারি নির্বাচনের দিন ঠিক হয়েছে; প্রধান সকল প্রার্থীই তাদের দৃঢ়তার প্রদর্শনের সুযোগ খুঁজছে ।
২০০৬ সালের জুলাই মাসের যুদ্ধে হেজবুল্লাহর কাছে পরাজয়ে তাদের গৌরবে যে কালিমা লেগেছিলো সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা হামাসকে সমুলে নির্মূল করে তা মুছে ফেলতে চায়। ইজরায়েলের ধূর্ত নেতৃত্ব নপুংশক পশ্চিমাপন্থী আরবনেতৃত্বের উদাসীনতা এবং ক্ষমতার শেষভাগে বুশ প্রশাসনের অন্ধ সমর্থনও মাথায় রাখতে পারে। বুশ চটদলদি এই সংকটের জন্য সমস্তদোষ হামাসের ঘাড়ে চাপিয়ে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে ভেটো প্রদান করে ইজরায়েলের অনুগত থেকেছে এবং তাকে গাজায় স্থল আক্রমন চালানোর ফ্রি পাস দিয়ে দিয়েছে।
বরাবরের মতো শক্তিশালী ইজরায়েলের দাবি তারা ফিলিস্তিনি আগ্রাসনের শিকার কিন্তু দুপক্ষের মধ্যকার পাহাড়প্রমান শক্তির পার্থক্য কোন সন্দেহের অবকাশই রাখেনা কারা সত্যিকারের শিকার। এ যেন সত্যিকারের ভেডিড ও গোলিয়াথের লড়াই যেখানে বাইবেলের চিত্রটাই শুধু উল্টানো- এক ক্ষুদ্র এবং ঢালবিহীন ফিলিস্তিনি ভেডিড মুখোমুখি বহুবিধ অস্ত্রসজ্জিত, দয়ামায়াহীন এবং দৈত্যাকৃতি ইজরায়েলি গোলিয়াথের সাথে।
ব্রুট সামরিক শক্তির সাথে বরাবরের মতো যোগ হয়েছে নির্যাতিতের কাঁপুনিগাথা বাগাম্বড় এবং সেই সাথে আত্মশুদ্ধির মোড়কে নিজকে করুনা করা। হিব্রুতে একে বলে
বোখিম ভে ইওরিম (bokhim ve-yorim) এর সীনড্রোম, কান্নার সাথে শত্রুবধকরন (‘crying and shooting’)
নিশ্চিতভাবেই হামাস এই সংঘর্ষে সম্পূর্ন নিস্পাপ কোন পক্ষ নয়। নির্বাচনের জয়ী হয়েও ক্ষমতা আহরনে অস্বীকৃত হয়ে এবং এক অসৎ প্রতিপক্ষের সাথে লড়াইয়ে,তারা দুর্বলদের শেষ অস্ত্র "সন্ত্রাস" বেছে নেয়। হামাস এবং ইসলামিক জেহাদের যোদ্ধারা গাজা সীমান্তবর্তী ইজরায়েলি বসতিতে কাসাম রকেট(Qassam rocket) ছুড়তে থাকে গতজুনে মিশরীয় মধ্যস্থতায় ৬মাস ব্যাপি যুদ্ধবিরতির আগ পর্যন্ত। সেকেলে এইসব রকেটের ক্ষতিসাধন করার ক্ষমতা সীমিত কিন্তু তার মনোস্তাত্বিক প্রতিক্রিয়া ব্যাপক, ইজরায়েলি জনগণকে সরকারের কাছে তাদেরকে রক্ষা করার ব্যবস্থা নিতে
প্রণোদিত করে।
এই পরিস্থিতিতে ইজরায়েল অধিকার আছে নিজেকে রক্ষা করার কিন্তু
রকেট হামলার প্রতিক্রিয়ায় তার গৃহীত পদক্ষেপ পুরোপুরি অসামন্জস্যপূর্ন
(disproportionate)। সংখ্যায় কথা বলে। তিন বছর আগে গাজা থেকে প্রত্যাহারের পর রকেট হামলায় নিহত ইজরায়েলির সংখ্যা ১১; অন্যপক্ষে শুধুমাত্র ২০০৫-৭ সালের ইজরায়েলি সেনাবাহিনী ২২২ জন শিশুসহ ১২৯০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
[দীর্ঘ অনুবাদ। পাঠকের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটতে পারে।
বিধায় এই পর্বে পুরোটা দিলাম না। ]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।