প্রতিটি দিনের কাছে অনেক যে ঋণ...
বিষয়টি সারাক্ষণ কষ্ট দিচ্ছিল আমাকে। না লিখে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না। ...
গত ৫ এপ্রিল ২০০৮ দৈনিক প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায় ''পড়ানোর সময় অন্য ধর্মকে কটা করেন ড. হাসানুজ্জামান'' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের নীতিবর্হিভূত চিন্তাভাবনার কথা পড়ে বারবার চমকে উঠেছিলাম বারবার। পরে অনেকের সাথে বিষয়টা নিয়ে আলোচনায় অংশ নিলাম এবং সবাই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত শ্রেষ্ঠ একটি বিদ্যাপীঠে এ ধরণের ঘটনাটি বস্তুতপক্ষ্ই চরম আপত্তিজনক ও সংশোধনযোগ্য।
ধর্ম নিয়ে যার যার নিজস্ব দর্শন বা মতাদর্শ থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা কারো উপর বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়াটা চরম অন্যায় এবং অপরাধের সামিলও বটে।
একজন ছাত্র ওই প্রতিবেদকের কাছে বলেছেন, ''আমি লজ্জায়, ঘৃণায় মাথা নত করে ফেলেছিলাম যখন তিনি বলেছেন 'শ্রীকৃষ্ণ' নামটি অশ্লীল। ...'' এ রকম ধর্মকে নিয়ে অসংখ্য বাঁকা মন্তব্য রয়েছে ওখানে।
প্রসঙ্গেক্রমে উল্লেখ আবশ্যক, লালনদর্শন বিশ্বের অন্যতম একটি সেরা দর্শন হিসেবে আজ স্বীকৃত।
পৃথিবীর বহু বিখ্যাত গবেষকেরা লালন দর্শন নিয়ে গবেষণা করে চলছেন। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত তাঁর দর্শনের মধ্যে এমন কিছুকে আবিষ্কার করেছিলেন যা বিশ্বভান্ডারে অপ্রতুল। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ নিজেই ওই দর্শনের সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে একাত্ত হয়ে বাউলঅঙ্গের অসংখ্য গান তিনি রচনা করে নিজে সুর সংসোজন করেছেন। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ তাঁর অর্ন্তদৃষ্টি দিয়ে প্রত্য করেছেন লালনের সৃষ্ট বাউল সঙ্গীতের মধ্যে ঈশ্বর প্রেম এবং মানব প্রেমের মৌলিকত্ব আমাদের নিচতা, হীনতা, ক্ষুদ্রতা, স্থানভেদ, কালভেদ, পাত্রভেদ এবং সর্বপরিই সাম্প্রদায়িকতার সমস্ত গন্ডিকে অতিক্রম করে এমন এক উচ্চাসনে সুপ্রতিষ্ঠিত যার সুফল শুভমানুষদের সারাজীবনের মনুষ্যত্বে পথে পরিচালিত করে।
ধর্ম হচ্ছে- এককভাবে ধারণ করার কিছু বিষয়।
সম্পূর্ণতার ভিতর দিয়ে নিজস্ব বিশ্বাসের স্থান। আমি কিভাবে, কিরূপে একটি নির্মল মতাদর্শ বা দৃষ্টিভঙ্গিকে নিজের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে ধারণ করে প্রতিদিন পরিমার্জিত, সংশোধিত পথে পা বাড়িয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমাজের, দেশের কিছুটা উপকার সাধনে সচেষ্ট হবো সেটাই বোধ করি আমার জীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমার নিজস্ব ধার্মিক মতামত অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়াটা কখনোই আমার সুস্থ বুদ্ধির পরিচয় নয়। তা নিঃসন্দেহে আমার মানসিক বিকারগ্রস্থের ফলাফল।
'৫২ কিংবা '৭১ এর রাষ্ট্রীয় বিরাট তাৎপর্যময় পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী দেশমাতৃকার ডাকে সরাসরি ঝাপিয়ে পড়ে দেশপ্রেমের মহান দৃষ্টান্তকে ধর্মের অনেক উর্ধ্বে তুলে ধরেছিলেন।
আজ কী বিশ্বায়নের অমৃত সময়ে এসে এমন শিক্ষকেরা তাঁদের মতামত দিচ্ছেন বিভ্রান্ত হও?... অন্য ধর্মকে ছোট করে দেখো?... নিজে সঙ্কুচিত হও?...
অসাম্প্রদায়িক চেতনার আলোকদাতা শিক্ষার্থীরা ও প্রগতিশীল-সৃজনশীল মানুষেরা। তাঁরাই জাতির মননশীলতার ধারক ও বাহক। তারাই নতুন প্রজন্মকে ''বিশ্বমানুষ হওয়া'' এর স্বপ্ন দেখাবেন। নতুন প্রজন্ম বিশ্বমানুষ হয়ে নিজের দেশের গৌরবকে, মহত্ত্বকে, মেধাকে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরবে। জাতীয় কবি বলে গেছেন, 'কান্ডারী বলো, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার...।
'
তাহলে আমরা কী ধরে নিতে পারি - ড. হাসানুজ্জামান একজন সৌখিন মানসিক রোগী...? তিনি আমাদের করুণার পাত্র...?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।