আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বগত আলাপ ০১: নিকেলব্যাক এর কনসার্টে....

জ্বলে উঠার অপেক্ষায় নিভু নিভু প্রদীপ।
দেশে থাকতে বাড়ীর সামনের ক্রিকেট খেলার মাঠে একদিন কেউ একজন বলেছিল 'জীবনটা লাইফ হয়ে গেছে'। শুনে আমরা শুধু হাসাহাসিই করিনি। এর পর থেকে এটা বলে সবাই তাকে ক্ষ্যাপাইতাম। এখানে আসার পরে এখন মনে হচ্ছে জীবনটা আসলেই লাইফ হয়ে গেছে।

মানে রোবট হয়ে গেছি। আগে বলতাম তেজপাতা হয়ে গেছে। কিন্তু তেজপাতার ও কিছু অনুভূতি আছে। বিদেশে থেকে আমাদের অনুভূতি ভোঁতা হয়ে গেছে। তারপরও মাঝে মাঝে খেলা দেখে(চেলসিতে গিয়ে) কনসার্ট ফনসার্টে গিয়ে অনুভূতি ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করি।

যাইহোক, আজ কানাডিয়ান রক ব্যান্ড 'নিকেলব্যাক' এর কনসার্টে গিয়েছিলাম। আমি যদিও ওদের তেমন ভক্ত নই। আমার শ্রীলন্কান বন্ধু আবদুলের অনুরোধে যাবো বলেছিলাম। তবে, আজকে কনসার্টে গিয়ে মনে হয় ওদের ভক্ত হয়ে গেছি। ওদের গানে একটা নিজস্বতা কিংবা স্বকীয়তা আছে।

যেটা আমার ভালো লাগে। তবে, গানের মধ্যে খুব একটা ভেরিয়েশন নেই বললে চলে। সবগুলো গান খুব কাছাকাছি সুরের মনে হয় কিংবা একটা গানের সাথে আরেকটার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যেটা 'মেটালিকা' কিংবা 'ড্রিম থিয়েটার' এর গানে পায় না। তারপরও কিছু গান আমার অনেক আগে থেকেই ভালো লাগত।

কনসার্টের ভেন্যু 'দি ০২' আমার বাসার কাছেই। পূর্বে 'মিলেনিয়াম ডোম' নামে এটা পরিচিত ছিল। 'মিলেনিয়াম ডোম' ব্যবসায়িকভাবে অসফল হওয়ায় বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। পরে ২০০৭ এ (যেদিন টনি ব্লেয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল) এটা 'দি ০২ এরেনা' নামে পুনরায় চালু করা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে এটাই এখন পৃথিবীর সবচে সফল ভেন্যু।

প্রতি সপ্তাহে দু একটা কনসার্ট তো থাকবেই। এটা আয়তনে এত বিশাল যে, ভিতরে ঢুকলে মনে হবে একটা শহর। শহরের মধ্যে ছোট্ট শহর। যাইহোক, কনসার্টের কাহিনীতে ফিরে আসি। সন্ধ্যা পাঁচটায় বাসা থেকে বের হয়ে ০২ এরেনা'তে গিয়ে হাজির হই।

তখনো আমার বন্ধু এসে পৌছায়নি দেখে তাকে ফোন করলাম। সে তখন ইফতারির জন্য 'টর্টিলা চিকেন র‌্যাপ' কিনতে ব্যস্ত। বেশ কিছুক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরাঘুরির পর আবদুল আসলে দুজন গিয়ে লাইনে দাড়ায়। গেট খুলবে সাড়ে ছয়টায়। কনসার্ট শুরু হবে তারও এক ঘন্টার পর।

তো লাইনে অপেক্ষা করার পর যখন গেট খুলল। আমরা দুজন আস্তে আস্তে সামনে যেতে থাকি। সমস্যা হল আমাদের হাতে খাবার আছে। এটা নিয়ে ভিতরে যেতে দিবে কিনা এটা নিয়ে দুজনের মধ্যে সংশয় ছিল। গেটের কাছাকাছি গিয়ে যখন সুন্দরী রমণীকে টিকেট দেখালাম হাতে আর্মব্যান্ড পরিয়ে যেতে দিলেও সামনের জন (যিনি সবার হাতের ব্যাগ কিংবা প্যাকেটে কি আছে দেখছে) আমাদের খাবার নিয়ে ভিতরে ঢুকতে দিবেন না।

এখন কি করি? তারপর তার কাছে জিগেস করে আমার দুজন এক কোণায় ইফতারের সময় হওয়ার জন্য দাড়িয়ে কাউন্ট ডাউন করছিলাম। ইফতারের সময় হলে দুজনে যেই খাওয়া শুরু করি সামনে সিকিউরিটির একজন এসে হাজির। বলে এখানে খাওয়া যাবে না। তাকে বললাম আমরা রোযা রাখছি তাই ইফতার করি। মানুষের ক্ষতি তো আর করছি না।

সমস্যা কোথায়। সে বলে এখানে খাওয়া নিষিদ্ধ। তারপর অন্যজন এসে বলে 'ইটস ওকে, বাট বি কুইক'। কি আর করা। তাড়াহুড়া করে অর্ধেকের মতো পেটে চালান দিয়ে ভিতরে ঢুকে পরলাম।

প্রায় ঘন্টাখানেক বসে থাকার পরে অতিথি ব্যান্ড 'ষ্টেইনড' ষ্টেজে আসে। আগে কখনো নাম শুনিনি। এটা নাকি অলটারনেটিভ রক ব্যান্ড। যাইহোক, ওরা সাতটা-আটটার মতো গান করে অত্যাচার থেকে রেহাই দেয়। অবশ্য দু একটা গানের গিটারের টিউনটা ভালো লেগেছে।

রাত নয়টার দিকে দুমদাম বোমা ফাটিয়ে ষ্টেজে আসে 'নিক্যালব্যাক'। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম। হার্ডরক ধাঁচের গান 'এনিম্যাল' দিয়ে ওরা যাত্রা শুরু করে। এটা আগে শুনেছি তবে, খুব বেশি ভালো লাগে না। পরের গানটা আমার শুনা ছিল না।

তাই পাঁচ মিনিটের মতো হা করেছিলাম। তারপরের গান 'লুক এট দিস ফটোগ্রাফ, এভরি টাইম আই ডু ইট মেকস মি লাফ' গানটা আমার খুব প্রিয়। গত দুদিন রিপিট করে শুনছিলাম। গানটা এক কথায় অসাধারন। এটা শুনলে যে কেউ নষ্টালজিক হবেন।

আমি যতবারই শুনি আমার স্কুল, শৈশবের কথা মনে পড়ে। এরপরের গানটা ছিল ছ্যাঁকা খাওয়াদের জন্য। 'ফার এওয়ে' । এ গানটা শুনলে আমার এক পুরনো বান্ধবীর কথা মনে পড়ে। এটার লিরিক্স দিয়ে একবার তার অভিমান ভাঙ্গাতে সক্ষম হয়েছিলাম।

(কেউ চাইলে চেষ্টা করতে পারেন। ) 'টু ব্যাড' গানটি শুরু করার আগে 'চাদ ক্রোয়েগার' (ব্যান্ডের ভোকাল) সবাইরে উপর নিচ লাফালাফি করতে কইল। গান শুরু হওয়ার পরে দেখি সবাই সত্যি সত্যি ন্যাংটাকালের মতো লাফানো শুরু করল। দেখাদেখি আমিও দলে যোগ দিলাম। আশে পাশে যারা ছিল তাদের ভালো করে দেখিয়ে দিলাম আমিও লাফাতে পারি।

কনসার্টের মাঝামাঝি সময়ে আমার পাশের দু তিনজন মিলে সিগারেট ফুকছে দেখে ইচ্ছে করতেছিল দু-তিনটে থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়। এদিকে আমার পাশের সুন্দরী পায়রাবানু বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিল দেখে আমি সিগারেট খাইনা বলে তার সন্দেহ থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করি। যাইহোক, এরপর ওদের সবচেয়ে জনপ্রিয় গান 'দিস ইজ হাউ ইউ রিমাইন্ড মি' দিয়ে দর্শক মাতাই। পাঁচ ছয় বছর আগে তৌফিকের কাছে এই গানটা প্রথম শুনেছিলাম। গানটা শুনে বেশ ভালো লাগছিল।

কিছু গান আছে সবার ভালো লাগে। এটা সবার ভাল লাগার মতো একটা গান। তারপর নিয়ে আসে 'ইফ এভরিওয়ান কেয়ার্‌ড' । এটা মানবতার আহবানের গান। এই গানের মিউজিক ভিডিও গানের মতোই চমৎকার।

'সেভিন মি' , অল দ্যা থিংস উই ফাইট ফর' সহ আরো কিছু গান গেয়ে ওরা ষ্টেজের পিছনে চলে গেলে আমরা মনে করেছিলাম কনসার্ট শেষ। এদিকে সবাই 'রকষ্টার' 'রকষ্টার' বলে চিল্লানো শুরু করছে। 'রকষ্টার' গানটি ইতিমধ্যে সবাই হয়তো শুনেছেন। এটা এখনকার অন্যতম জনপ্রিয় একটা গান। এ গানের লিরিক্স যেমন মজার, ভিডিওটা ও খুব মজার।

যারা দেখেননি তারা এখুনি ইউটিউবে দেখে নিতে পারেন। এখানের রেডিওতে প্রায় প্রতিদিনই এটা শুনা যায়। কিছুক্ষণ পর ওরা আবার ষ্টেজে হাজির হয়। তারপর 'আই ওয়ানা বি এ রকষ্টার' দিয়ে সবাইরে ভালোই নাচিয়েছে। সবচে ভালো লাগছে প্রতিটি গানের পরে ওরা কিছু একটা নিয়ে মজা করছিল।

মোটকথা আমি ওদের বিগ ফ্যান না হয়েও একশোতে একশো দিতে রাজী। নিচে আইফোনে তোলা কিছু ছবি দিলাম। 'দি ০২' বাইরে থেকে যেমন দেখায়। 'দি ০২' তে কি, কোথায় আছে সেটার ম্যাপ। ঢুকতে বিএমডব্লিউ'র এই এ্যড চোখে পড়ে '০২ এরেনা'র প্রবেশ পথ।

নিকেলব্যাক এর টি শার্ট,ক্যাপ, পোষ্টার ইত্যাদি বিকিকিনি চলছে। ভিতরের যে পাশে সিনেমা থিয়েটার, আইস স্ক্যাটিং, রেষ্টুরেন্ট ইতাদি অবস্থিত। দাবা খেলায় ব্যস্ত কনসার্ট শুরু হওয়ার পূর্বে। অতিথি ব্যান্ড 'ষ্টেইনড' পারফর্ম করছে। নিকেলব্যাক।

এ বছরের ডিসেম্বরে 'কোল্ডপ্লে' দেখতে যাবো। তখন নাহয় ওটা নিয়ে লিখব। ততক্ষণ পর্যন্ত টা টা, বাই বাই। (পোষ্টটি শুক্রবারে লেখা)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।