"ব্লগকে সিরিয়াসলি নেবার কিছু নেই"...গরীব স্ক্রীপ্ট রাইটার
আমার পাশের বাসার এক আপু আছে তার বাবার(আমরা মামা বলি) একসময় একটা বেকারি, একটা ওষুধের দোকান সহ আরো কিছু টুকিটাকি ব্যবসা ছিল। সেটা প্রায় ১৭/১৮ বছর আগের কথা। ওই মামা আরো বেশি কিছু করার লোভে সবকিছু বিক্রি করে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন দালাল ধরে...সৌদিতে যেয়ে উনার লাভ এই হয়েছে উনি হজ্জ্ব করে ফিরে এসেছেন। এরপর ওই মামা সবকিছু শেষ করে ছোটখাটো দোকানে কাজ করে কোনমতে সংসার চালাচ্ছিলেন। উনার ৫ মেয়ে এক ছেলে।
ছেলের প্রতি স্বভাবতই উনাদের ছিল একটু বেশি আশাই আর তাই মেয়েদের কিছুটা অবহেলা আগে থেকেই করতেন ওই মামা মামী। উনার পারিবারিক স্বচ্ছলতা যখন কমে গেল তখন ওই আপু যার আগের থেকেই পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ কম ছিল সে ছেড়ে দিল। ক্লাস সেভেন বা এইটের পর আর পড়াশুনা করে নি আপু।
এর কয়েকবছর পর আপুর প্রেম হয় তারই এক বান্ধবীর বড় ভাইয়ের সাথে। বিয়ের কথা যখন পাকাপাকি হবে তখন ওই ছেলে একটা মোটর সাইকেল চেয়ে বসলো।
বলা বাহুল্য আপুদের তিন বেলা খাওয়াটাই কষ্টের কাজ সেখানে মোটর সাইকেল! হলো না আপুর আর বিয়ে
এরপর আপুর দিন কেটে যাচ্ছিল এই ভেবে যে হয়তো তার কোন রকম একটা বিয়ে শাদী হবে সে সেটেলড হবে। কিন্তু বেশ কয়েক জায়গা থেকেই কথা হলেও টাকার প্রশ্নে থেমে যায়। কিন্তু থেমে থাকে না মানুষের মুখের কথা!! বিয়ে কেন হয় না এত বয়স হয়ে গেছে....কেন কারো হাত ধরে চলে যায় নি সময় থাকতে এগুলো সবখানেই শুনতে হয় তাকে।
শেষ যে ঘটনা টা হয়েছে..সেটা বলি। ওই আপুর ছোটবোন একটা বাচ্চাকে প্রাইভেট পড়াতো।
সেই বাচ্চার মা ২মাসের টাকা দিচ্ছিল না, আপুর তার বোনের হয়ে টাকা চাইতে গেছিলো। ওই বাচ্চার মা সেটাকে সালিশ পর্যায়ে নিয়ে গেলো এবং সালিশ এ এলাকার এক মাথা লোকজনের সামনে চড় মারে ওই আপুকে। আপু আমাদের বাসায় এসে অসহায়ের মত কেদে ফেললো। আমরা শান্ত্বনা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারি নি!!
বারবার সবখানে হেনস্ত হতে হতে আপু ইদানীং কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। বাসায় উল্টাপাল্টা করে।
চিৎকার চেচামেচি ভাংচুর। কিন্তু এখন বাসার লোকজনও তার সাথে অত্যন্ত বাজে আচরণ করছে। তাদের কথা একটা পাগল তারা সামলাতে পারবে না। পাবনাতে পাঠানোর চিন্তাভাবনা তাদের। ৩দিন সে না খেয়ে ছিল কিন্তু সবাই তাকে পানির সাথে ঘুমের ওষুধ গুলিয়ে খাওয়াতে বেশি আগ্রহী...বুঝিয়ে সুঝিয়ে খাবার খাওয়ানোর চেয়ে।
আমার আম্মু ৩দিন আগে তাকে খাইয়ে এসেছিলো এরপর থেকে সে শুধু পানি খেয়েই ছিলো। আম্মু এসে বলছিলো সেদিন ওর বোনেরা হাসছিলো পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে। আজকে আমাদের বাসায় এসেছিলো আমরা জোর করেই ভাত খাওয়ালাম। আমাদের বাসায় এসে আম্মুকে বলছিলো, ছোটফুপু (আমার ছোটখালা) কে বলেন তার বাসায় কাজের লোক হিসেবে আমাকে রাখবে নাকি। আমাকে কিছু দেয়া লাগবে না শুধু খেতে পরতে দিলেই হবে।
আমি আপুকে অনেক পছন্দ করি। একবার আম্মু আর মেজখালা ছোটখালার বাসায় গেল তখন আমার খালাতো বোনের ব্রেইন টিউমার অপারেশন হয়েছিলো ওকে দেখতে। মামী ঢাকাতে ছিল। বাসায় আমরা ৫ ভাইবোন ছাড়া আর কেউ নাই। এদের মধ্যে আমার অবস্থান মেজো হলেও দায়িত্ব ছিল আমার উপর কারণ বুবু সবসময়ই একটু বেসামাল।
নানী অসুস্থ হয়ে পড়লো, আপু তখন আম্মুরা না আসা পর্যন্ত নানীর অনেক সেবা করেছিলো যা আমি কখনই করতে পারতাম না।
এই আপুই প্রথম আমাদের বাসায় তাবলীগের মহিলাদের নিয়ে আসে। এরপর যখন আমাদের তাবলীগের ঘরটা তৈরি হয় তখন ও এই আপু অনেককিছু করেছে। যদিও পরবর্তীতে তাকেই ওখান থেকে বের হতে বাধ্য করা হয়েছে। তাবলীগের কাহিনী আরেকদিন লিখবো।
এই আপু কোন এক অজানা কারণে আমাকে অনেক পছন্দ করে। আমি অনেক মানুষকেই দেখি আমাকে চেনে এবং শুনি আপু নাকি আমার কথা অনেক বলে। আমার ধারণা, আমি যদি কোন মানুষকে অপছন্দও করি কিন্তু যদি শুনি সে আমাকে পছন্দ করে তবে তার প্রতি এক ধরনের দুর্বলতা কাজ করে। যেটা আমার ঐ আপুর প্রতি বেশি দুর্বলতার হয়তো বা আরো একটা কারণ!
যে কথা বলছিলাম, আপু আজকে এসে এতো আসহায়ভাবে আমাকে বলছিলো, আউলা তুমি বলো আমি কি করবো? আমার তো কিছূ করে খেতে হবে। আমার আব্বা চোখটা বুজলেই আমার ভাই আমাকে বের করে দিতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করবে না।
তুমি বুঝবে না আমি কেন বিয়ে করতে চাই। কেন বিয়ে না হবার জন্য টেনশন করি....আমি একটা নিরাপত্তা... একটা নিরাপদ আবাসস্থল খুজি ...জীবনে কিছুই পাই নি...আব্বা কখনওই আমাদের একটা জামা দিতে পারে নি কাউকে কখনও বলি নি। কোন আক্ষেপও ও নেই তবে আজকে আমার একটা কিছু করা খুবই দরকার! বল না আমি কি করবো?
আপু চলে গেছে প্রায় ২ ঘন্টা হলো..আমার তার করুন করে বলা কথাটাই কানে বাজছে, কি করা যায় বলো তো...কিন্তু আমি শুধু তার জন্য কি করা যায় ভাবতেই পারি কিন্তু কিছুই করতে পারি না...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।