আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সব মহলেই চলছে কমবেশি আলোচনা।
নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা কেমন হবে, কে হবেন ওই সময়ের সরকারপ্রধান, কার অধীনে হবে এ নির্বাচন- চায়ের কাপে যখন এ নিয়ে বইছে ঝড়, এমনই এক মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুলে ধরলেন নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা। আর নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে সর্বশেষ অবস্থান জানিয়েছেন, এর বিশ্লেষণধর্মী খুঁটিনাটি বেরিয়ে এলো ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের কলম থেকে। ডেইলি স্টারে গতকাল মন্তব্য প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। মন্তব্য প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় সরকারি ও বিরোধী দলের সর্বসময়ের অবস্থানও।
এ লেখার মাধ্যমে অবশ্য সমঝোতায় পেঁৗছানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে উভয় পক্ষকে। পাশাপাশি এও উল্লেখ করা হয়েছে, সমঝোতায় পেঁৗছাতে না পারার পরিণতি কী হতে পারে সে সম্পর্কে। মাহফুজ আনাম আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সমঝোতা যদি না হয় তবে জাতির জন্য অপেক্ষা করছে এক ভয়াবহ দুর্দিন। তিনি লিখেছেন, নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার সর্বশেষ ঘোষণায় রয়েছে ৪টি উপাদান। আর তা হচ্ছে_ ১. বর্তমান সংসদের মেয়াদেই নির্বাচন হবে; ২. নির্বাচনের সময় সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে না।
৩. বর্তমান সরকারই ক্ষমতা পরিচালনা করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে; ৪. নির্বাচনের সময় নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান। তিনি লিখেছেন, বর্তমান সংসদের মেয়াদে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই আমরা। একটা সরকারের মেয়াদে কখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিশেষ ক্ষমতা স্পষ্টতই রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে। জনগণের ম্যান্ডেট চাওয়ার যে কোনো পদক্ষেপ, যদি এটি বিলম্বের স্থলে দ্রুতও হয়, তা স্বাগত পাওয়া উচিত। এবং এটি আমরা করেও থাকি।
কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের দ্বিতীয় পয়েন্ট নিয়ে। কারণ এখানে তিনি বলেছেন, নির্বাচনের সময় বর্তমান সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে না। অর্থাৎ নতুন সংসদ না আসা পর্যন্ত বহাল থাকবে বর্তমান সংসদ। এ ব্যবস্থায় বর্তমান সব সংসদ সদস্য নিজ পদে বহাল থেকেই অংশ নিতে পারবেন নির্বাচনে। অবশ্যই তারা ওই সময় পাবেন প্রটোকল ও বিশেষ অধিকার।
স্বাভাবিকভাবেই বহাল সংসদ সদস্যকে অন্য প্রার্থীদের চেয়ে আলাদা গুরুত্ব দেবে সরকারি ব্যবস্থাপনা। অথচ গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থার সঙ্গে কখনোই সংগতিপূর্ণ নয় এসব বিষয়। কারণ ভোটার, আইন ও নির্বাচন কমিশনের চোখে সব প্রার্থী সমান। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশ_যেমন ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্যসহ কোনো দেশেই প্রচলিত নেই এ ধরনের ব্যবস্থা। ওই দেশগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সংসদ ভেঙে দিয়েই।
অথচ প্রধানমন্ত্রী বলছেন, অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতোই আমাদের এখানে নির্বাচন হবে। ঠিক বলেননি প্রধানমন্ত্রী। কারণ অন্যান্য দেশকে এ ক্ষেত্রে মোটেই অনুসরণ করা হচ্ছে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, তা আমরা কেন গ্রহণ করব। তবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের তৃতীয় পয়েন্ট সঠিক।
নির্বাচনের সময় সব গণতান্ত্রিক দেশেই অন্তর্ব্র্তীকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকে ক্ষমতায় থাকা সরকার। তারাই পরিচালনা করে থাকে দৈনন্দিন কার্যক্রম। আর ওই সময় নির্বাচনের আয়োজন করে থাকে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা নির্বাচন কমিশন। যেসব দেশের কথা এর আগে বলা হয়েছে, সেগুলোতে এভাবেই নির্বাচন হয়। আমরা তাহলে কেন অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের রীতি অনুসরণ করব না।
কারণ_১. কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই বিরোধী দল ধারাবাহিকভাবে সংসদ বয়কট করে না। ২. অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দলকে এভাবে নিপীড়ন করে না সরকার। সব সরকারের আমলেই বিরোধী সংসদ সদস্য শিকার হন পুলিশের পিটুনির। এটিই হচ্ছে আমাদের গণতন্ত্রের দুঃখজনক ছবি। ৩. কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে পরস্পরের প্রতি আক্রমণ করেন না সংসদ নেতা ও বিরোধী দলের নেতা।
ভেবে দেখুন, ২৩ বছরে আমাদের দুই নেত্রী দেশের সংকট নিয়ে সংলাপে বসেননি একবারও। অথচ প্রধানমন্ত্রী অথবা বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে তারাই নেতৃত্ব দিয়েছেন আমাদের। ৪. কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই এমন পরিস্থিতি হয় না যে বিরোধী দলের আনা কোনো প্রস্তাব পাস তো দূরের কথা আলোচনাই হয় না। ৫. নির্বাচনের এক মাসের মধ্যেই কোনো দেশে সরকার পতনের ডাক দেয় না বিরোধী দল। ৬. কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই অর্থনীতির কথা চিন্তা না করে ধারাবাহিকভাবে হরতাল দেওয়া হয় না।
৭. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় না কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই। এ তালিকা কেবল বাড়ানোই সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান পুরনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে। আগেই বলেছি প্রধানমন্ত্রীর ওই অবস্থান ভুল। বিএনপি যদি এখন ক্ষমতায় থাকত এবং বর্তমান সরকার যে কারণ দেখিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে একই কারণে যদি বিএনপি তা বাতিল করত, তবে কি সেই নির্বাচনে অংশ নিত আওয়ামী লীগ? আওয়ামী লীগ বিচারপতি কে এম হাসানের অধীনে নির্বাচনে যায়নি।
এর পেছনে তাদের যুক্তি ছিল, বিচারক হওয়ার বহু আগে বিচারপতি কে এম হাসান বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আর আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে এবার নির্বাচনের সময় সরকারপ্রধান হিসেবে বিএনপি মেনে নেবে, এতটা কল্পনাপ্রবণ হতে পারি কি আমরা?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।