আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবনের প্রথম রক্তদান

:)

১৪-১২-০৮ এই দিনে আমি আমার জীবনের প্রথম রক্ত দিলাম। আমি এই জিনিসটাকে খুবই ভয় পেতাম। তাই আগে কখনওই রক্ত দেয়া হয়নি। কিন্তু দেয়ার পর বুঝতে পারলাম এটা কোন ভয় এর কাজ না। তাই সুস্থ যে কোন ব্যক্তিরই প্রয়োজন এ রক্তদান করা উচিত।

আর জরুরী ভিত্তিতে যখন কারো রক্তের দরকার হয় তখন আর মানুষের মাথা ঠিক থাকেনা। আমি নিজেও এরকম পরিস্থিতিতে পড়েছি। ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাস। আম্মুর ৩য় বারের মতন হারনিয়া অপারেশন হওয়ার কথা। এটা আম্মুর ৬ নং অপারেশন।

তাই এক সাথে ইউট্রাস ও অপারেশন করার কথা। আমার একদিন আগে মাত্র বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এম্নেই মন খারাপ পরীক্ষা আশানুরূপ হয়নি আর এটা বাদে আর কিছুর জন্য প্রস্তুতি ও নেই নি । কথায় ভর্তি হব জানিনা... । আমাদের পক্ষে কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এও ভর্তি হওয়া সম্ভব না।

আর ফলাফল দিতে ১/২ সপ্তাহ বাকি । তার উপর আম্মুর অপারেশন!!!। যেদিন অপারেশন হওয়ার কথা সেদিন সকালে আমি আর আম্মু গেলাম মনোয়ারা হাসপাতাল এ আম্মুকে ভর্তি করানোর জন্য। ভাইয়ার তখন ৩-২ এর টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা, তাই আমি বাদে আর কেউ নাই আম্মুর সাথে তখন। হঠাৎ ১১ টার সময় ডাক্তার বললেন অপারেশন এর সময় ১/২ ব্যাগ রক্ত লাগতে পারে।

আমি তখন একা হাসপাতাল এ, কিভাবে কি করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সবার আগে ভাইয়াকে ফোন করলাম । বেচারাও কিছু বুঝে উঠতে পারতেসিলো না। তাও ও ওর পরিচিত সবাইকে ফোন করে খোঁজ করতেছিল। কি কপাল আমাদের ২ জনের !!!!!!! ২ জনের ই রক্তের গ্রুপ ও নেগেটিভ ( O -ve )।

প্রয়োজনের সময় কেউই আম্মুকে রক্ত দিতে পারতেছিনা। আম্মুর রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ (A +ve) । খুবই কমন রক্তের গ্রুপ। কিন্তু কি কপাল ও দিন ই কাউকে পাওয়া যাইতেছিল না। আমার যে তখন কি লাগতেছিল আমি কাউকে বুঝাতে পারব না।

এদিকে ভাইয়াও একটু পর পর ফোন করতেসে যে ও কাউকে পাইতেসেনা। একা একা হাসপাতাল এ আমার কান্না পাইতেসিল । শেষে পাওয়া গেল আমার ছোট ফুফার রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ। উনি আবার ঐ দিন রোজা ছিলেন। আমি তাও ফুফাকে ফোন করে বললাম আসার কথা।

উনি রোজা রেখেও আসলেন রক্ত দিতে। ওনাকে দেখে আমি কিছুটা স্বস্তি পেলাম । তারপর ফুফা রক্ত দেওয়ার পর ওনাকে ইফতার করালাম । বিকালে থেকে একে একে সব আত্নীয় স্বজনরা আসা শুরু করলেন। আমি মনে মনে বলি আসলেন সবাই আরো আগে আসলে কি হইত!!!!!! তারপর আম্মুকে মনে হয় ৭/৭:৩০ এ অপারেশনথিয়েটার এ ঢুকানো হল।

১২ টা বাজে তখন ও অপারেশন শেষ হয়না। সবাই ই তখন চলে গেসে প্রায়। ভাইয়াকে তখন জোর করেই বাসায় পাঠায় দেয়া হইসে। অপারেশনথিয়েটার এর বাইরে তখন শুধু আমি , আমার ছোট মামা আর আমার বড় ফুফু। আমার যে কি ভয় লাগতেসিল!!! ।

অপারেশনথিয়েটার এ ঢুকানোর সময় ই আম্মু খুব কানতেসিল। আগে এতগুলো অপারেশন হইসে আম্মুকে কখনও এত ভ্য় পাইতে আমি দেখি নাই। আল্লাহর রহমতে পৌনে একটায় অপারেশন শেষ হল। সেদিন এর কথা মনে করলে আজকেও আমার কান্না আসে। তাই ওদিন যখন আমার ক্লাসমেট আমাকে তার আত্নীয় এর জন্য রক্ত দেয়ার কথা বলল প্রথমে আমি মানা করসিলাম।

কারণ আম্মু ভ্য় পায়,নিজে বলে কলেজে থাকতে কোন সংস্থা রক্ত নিতে আসলে ভ্য় এ লুকায়ে থাকত :-p ,তাই হয়্ত আমাকে রক্ত দিতে দিবেনা (আগেও একবার মানা করসিল)। ভাইয়া ও আম্মুকে না বলে ৩/৪ বার রক্ত দিসে। পরে অবশ্য বলসে। ও বুয়েটের বাঁধন এর সদস্য ও ছিল। এখন পর্যন্ত মোট ৮/৯ বার রক্ত দিসে।

আগেরদিন রাতে আমার ক্লাসমেট আমাকে তার আত্নীয় এর জন্য রক্ত দেয়ার কথা বলসিল। আমি ওকে বলসি আমি না দিলেও আমার ভাইয়া দিবে কালকে রক্ত। সকালে উঠে আমি আম্মুকে বললাম রক্ত দেওয়ার কথা। আম্মু যেন কেমনে রাজিও হয়ে গেল । ভাইয়া আমাকে নিয়া গেল স্কয়ার এ ।

ওর সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে রক্ত নেয়া শেষ হ্য়এ গেল আমি বুঝি ই নাই। ও ভাবছিল আমি ভয় পাব , কিন্তু আমি একটুকুও ভ্য় পাই নাই । শেষ পর্যন্ত হল আমার জীবনের প্রথম রক্তদান ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.