আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মফিজ ক্যানভাসার ২০

২০ হাতেম আলীকে ছয় বোতলের টাকা বুঝিয়ে দিয়ে আতাহারকে নিয়ে বাড়িতে যেতে যেতে বললাম, ‘আতাহার আলী তোমার বাঁশির সুর নেশা ধরায়। একটা গানে আছে ‘আমার মন কেড়ে নিলো সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি। ’ তোমার বাঁশির সুর সে রকম। তোমাকে দিয়ে আমার কাজ হবে। আমার ক্যানভাসের ফাঁকে ফাঁকে তুমি বাঁশি বাঁজাবে।

বেশী লোকজন না হলে লেকচার দিয়ে মজা নাই। ’ আতাহার আলী এ কথা শুনে আবার আমার কদমবুচি করে দোয়া চাইলো। আমি বললাম, ‘তোমার জন্য আমার সব সময়ের দোয়া থাকবে। ’ ময়না বিবি আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘আপনার সাথে লোকটা কে ?’ ‘ময়না বিবি, লোকটা বড় দুংখী। বাবা মারা গেছে অনেক আগেই।

মা আবার বিয়ে বসেছে। সন্তানের খবর রাখে না। আমার কাছে একটু আশ্রয় চাইলো নিয়ে আসলাম। লোকটার নাম আতাহার আলী। আমার মত একজন বড় ক্যানভাসার হওয়ার স্বপ্ন তার।

এখন থেকে আমাদের সাথেই থাকবে সে। ’ টুনি তার রুমের বেড়ার ফাঁক দিয়ে আতাহার আলীকে দেখে। লম্বা লম্বা চুল, বড় বড় গোঁফ। এই লোক তার বাবার মত একজন ক্যানভাসার হতে চায়। টুনির কাছে বেশ আশ্চর্য লাগলো বিষয়টা এবং তার বাবাকে নিয়ে বেশ গর্ব হলো কারণ তার বাবা একজন বড় ক্যানভাসার।

আতাহার আলী নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। ঠিকমত ঘুমাতে পারে না তাই যেখানে কাত সেখানেই রাত। সে আসায় নতুন করে রান্না বসাতে হয়েছে ময়না বিবির। এই ঘরে কখনও বাড়তি রান্না হয় না। ময়না বিবি টুনিকে বললো, ‘তোর বাবাকে খেতে আসতে বল।

’ স্ত্রীরিরা তার সন্তানদের মাধ্যমে স্বামীর সাথে কোন কোন সময় কথা বিনিময় করে মজা পায়। আতাহার আলীর নাক ডাকা ঘুম ভাঙ্গা ঠিক হবে না ভেবে আমি একাই খেতে বসে গেলাম। ময়না বিবি জিজ্ঞাসা করলো, ‘আপনার মেহমান কোথায় ?’ ‘লোকটা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে তাকে এই কাঁচা ঘুমে জাগানো ঠিক হবে না। অনেক দিন মনে হয় ঠিক মত ঘুমাতে পারে নাই। মানুষের দুংখ দেখলে আমার কষ্ট কিছুই মনে হয় না।

আমাদের চেয়ে অনেকে অনেক খারাপ অবস্থায় আছে। আল্লাহ যেভাবে রাখছে অসীম শুকরিয়া জানাই। আল্লাহ যেন দুনিয়ার সকলকে ভাল রাখে। ’ ময়না বিবি বললো, ‘দুপুরের খাবার না খেয়ে ঘুমায় কিভাবে ? সারা রাত কি চুরি করেছে ? ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা আমার একদম সহ্য হয় না। ’ এ কথা শুনে টুনি বললো, ‘মা তুমিও ঘুমের মধ্যে নাক ডাকো।

’ ময়না বিবি বললো, ‘হইছে হইছে আপনার আর এ নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। এখন ভাত খেতে আসেন। ’ আমি বললাম, ‘ময়না বিবি লোকটা খারাপ না। যে এত সুন্দর করে বাঁশি বাজাতে পারে সে লোক খারাপ হতে পারে না। আদব-লেহাজও ভাল।

গরীবের ঘরের সন্তান, লেখা-পড়া শিখতে পারে নাই কিন্তু শিক্ষার প্রতি সম্মান আছে। সব দিক মিলিয়ে ছেলেটা ভালই। ’ হঠাৎ আতাহার আলী ঘুমের চোখে বলছে, ‘ওস্তাদ সব বোতলতো ওরা নিয়ে যাচ্ছে, আপনি একবার ওয়াডার দেন ওদের শেষ করে দেই। ’ কথা শুনে মনে করলাম আতাহার আলীর ঘুম ভাঙ্গছে। ‘আতাহার আলী খেতে আসো।

’ কিন্তু কোন সাড়া নাই। টুনি বললো , ‘বাবা, লোকটা ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করে বলছে, ওস্তাদ সব বোতলতো ওরা নিয়ে যাচ্ছে, আপনি একবার ওয়াডার দেন সবগুলোকে শেষ করে দেই। ’ এ কথা শুনে আমি বললাম, ‘সজাগ থাকলে মানুষ যা পারে না ঘুমের ঘোরে তা করার চেষ্টা করে। ’ টুনি বললো, ‘বাবা, লোকটা ঘুমের মধ্যে বলছে কাকে যেন শেষ করে দিবে। ’ ‘ঘুমের ঘোরে মানুষ অনেক কিছুই বলতে পারে।

লোকটা মনে হয় কোন দুঃস্বপ্ন দেখছে। ’ আমি আবার ডাক দিলাম, ‘আতাহার আলী ঘুম থেকে জেগে খাওয়া-দাওয়া সেরে নাও। ’ বিকালে আতাহার আলীকে নিয়ে গেলাম মোখলেসের চায়ের দোকানে। আক্কাস মিয়া সেখানে। আক্কাস মিয়া আতাহার আলীকে দেখে বললো, ‘কি মফিজ ভাই, সাথে এটা কে ?’ আমি বললাম, ‘আমার ছেলে।

’ আক্কাসঃ ‘তোমার ছেলে আমরা চিনবো না! কোথায় রেখেছিলে এতদিন ?’ ‘অনেক সময় কাছের মানুষকেও চিনা যায় না। ’ আক্কাস মিয়া দোকানে বসে সিগারেট টানছে। আমি তাকে বললাম, ‘ভাই একটা পরামর্শ দেই, সিগারেট ছেড়ে দাও। সিগারেট ছেড়ে দিলে কি লাভ সে সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ২৩ আগষ্ট, ২০১১ এর জনসচেতনতামূলক একটি লেখা তোমাকে শুনাচ্ছি, ‘ধরা যাক একজন ধুমপয়ী যিনি রোজ একপ্যাকেট সিগারেট খান , সিদ্বান্ত নিলেন আর সিগারেট খাবেন না, তাহলে ২০ মিনিটের মধ্যে রক্তচাপ, দেহের উঞ্চতা ও নাড়ির গতি স্বাভাবিক হবে। ৮ ঘন্টার মধ্যে স্মোকার্স ব্রেথ থাকবে না।

রক্তে কার্বন মনোঅক্্রসাইডের মাত্রা হ্রাস পাবে। অক্্িরজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা কমবে। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ¯œায়ুতন্ত্রের শেষ প্রান্তলা আবার একত্রিত হওয়া শুরু করবে। স্বাদ ও গন্ধ নির্ণয়ের ক্ষমতা বাড়বে।

একদিনের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হবে। ২-৩ মাসের মধ্যে রক্ত সঞ্চলনে স্বাভাবিকতা ফিরে আসতে শুরু করবে। ফুসফুসের ক্ষমতা ৩০ শতাংশ বৃদ্বি পাবে। হেটে চলাচল করলেও হাপিয়ে পড়বে না, স্বাভাবিক থাকবে। ১-৯ মাসের মধ্যে সাইনাসের সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে।

ছোট শ্বাস নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমবে। কাজ করার শক্তি, ক্ষমতা বাড়বে। ১ বছরের মধ্যে করোনারি আর্টরী ডিজিজের মতো সাংঘাতিক মরন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অধূমপায়ীর সম্ভবনার মতই হয়ে যাবে। ২ বছরের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা অন্য অধূমপায়ীদের সম্ভাবনার মতোই হয়ে যাবে। ৫ বছরের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা ধূমপায়ীদের সম্ভাবনা থেকে ৫০ শতাংশ কম হবে।

স্টোক হওয়ার ঝুকি কমবে। মুখ গহবর, গলা, খাদ্যনালীর ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ধূমপায়ীদের তুলনায় অর্ধেক হ্রাস পাবে। ১০ বছরের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা একজন অধুমপায়ীর মতোই হবে। ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাযুক্ত কোষগুলো ভালো কোষ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে। ১৫ বছরের মধ্যে করোনারি হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একজন স্বাভাবিক অধূমপায়ী ব্যক্তির সঙ্গেই তুলনীয়।

এখন বুঝলে ধূমপান না করা কত ভাল। পেপার কাটিংটা পকেটে ছিল তাই পড়ে শুনাতে পারলাম। এখন ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা কর। ’ আক্কাস বললো, ‘যারা দৈনিক এক প্যাকেট খায় তাদের জন্য এ কথা, আমার জন্য না। ’ ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাই এই অভ্যাস ছেড়ে দেওয়াই ভাল।

’ দোকানদার বললো, ‘আক্কাস ভাই, তোমার কাছে বিশ হাজার টাকা পাই। কবে এগুলো শোধ দিবে। আক্কাস বললো, ‘আমি সিদ্বান্ত নিয়েছি, তোর দোকানে ১ লক্ষ টাকার সিগারেট বাকী খেয়ে তারপর টাকা শোধ দিবো। আমি একটা রেকর্ড করতে চাই। বাকীতে সিগারেট খাওয়ার রেকর্ড।

গ্রীনিচ বুকে নাম উঠাতে চাই। তুই কি জানিস কত টাকার সিগারেট বাকীতে খেলে আমার নাম গ্রীনিচ বুকে উঠবে ?’ দোকানদার বললো, ‘আদার বেপারীর জাহাজের খবর রেখে লাভ কি ? আমার পেট চলবে কিভাবে সেই খবরই রাখতে পারি না আবার ইন্টারন্যাশনাল খবর রাখবো। তুমিতো একটা হারামির বাচ্চা। আমার দোকানে বিশ হাজার টাকা বাকী বাঁধিয়ে, দোকানে লাল বাতি জ্বাালিয়ে এখন বলছো এক লক্ষ টাকার সিগারেট বাকীতে খেয়ে গ্রীনিচ বুকে নাম লেখাবে কিন্তু সে আশা তোমার পূর্ণ হবে না। আমি সংসার চালাতে পারি না আর তুমি টাকা না দিয়ে আমার সাথে তামাশা করছো।

আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে যদি আমার পাওনা টাকা না দেও তা হলে তুমি শয়তানের বাচ্চা । ’ আক্কাস বললো, ‘এই আমি শয়তানের বাচ্চা না তবে শয়তান কিন্তু এক লক্ষ টাকার সিগারেট বাকীতে খেলে গ্রীনিচ বুকে নাম উঠবে না তা তুই কিভাবে জানলি ?’ দোকানদার বললো, ‘আমার এসব জানা-টানার দরকার নাই। টাকা পবো টাকা দিবে আমি আর এক পয়সাও তোমাকে বাকী দিব না। আক্কাস বললো, ‘আরে ব্যাটা পকেটে টাকা আসলেই দিয়ে দিব, তোর সাথে একটু মশকরা করলাম। ’ টুনি দোকানে এসে বললো, ‘বাবা তোমাকে মা ডাকছে, এক্ষুণি যেতে বলছে।

’ আমি বাড়ী গেলাম। আতাহার আলী দোকানে বসে চা খাচ্ছে। আগের প্রশ্নের উত্তর: ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট। প্রশ্ন: কুসুন্দা ভাষার শেষ উত্তরাধিকারীর নাম কি ? উত্তর: আপনার উত্তরটি সঠিক হয়েছে কিনা পরের অধ্যায়ের শেষে মিলিয়ে নিন । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।