আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে

অতীত খুড়ি, খুঁজে ফিরি স্বজাতির গুলিবিদ্ধ করোটি

সজীব ওয়াজেদ জয়ের লেখা এই আর্টিকেলটা ডেইলি স্টারে পড়লাম। তাড়াহুড়ো অনুবাদ। মতামত দেন। গত বছর দুয়েক ধরেই আমরা রাজনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের নানা সুপারিশ শুনছি। সব বুড়ো নেতাদের ছুড়ে ফেলে নতুন করে শুরু করতে হবে।

নতুন নীতিমালা করতে হবে। এবং অবশ্যই নতুন করে লিখতে হবে আমাদের সংবিধান যাতে সেই স্বপ্নরাজ্য বাস্তবায়ন করা যায়, যেখানে সবাই সুখে-শান্তিতে বাস করবে। দু বছর ধরে আমাদের নেতা ও ব্যবসায়ীদের হেনস্থা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আইনের চরম অপব্যবহার শেষে দেখা যাচ্ছে যে শতকরা ৯৬ ভাগ মানুষই গণতন্ত্রে ফিরতে মরিয়া। গত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সীমাহীন দূর্নীতিতে ভীষণরকম ক্ষতিগ্রস্থ আমাদের অর্থনীতিকে ভরাডুবির হাত থেকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন একদল উচ্চশিক্ষিত লোক। এমনকি আমাদের রাজনীতিও ফিরে গেছে আগের জায়গাতেই।

কথিত সেই বিপ্লব এখন মৃত। প্রায়ই দেখি বিভিন্ন জায়গায় ছাপা হচ্ছে দেশের দুই বড়দলের মধ্যে আদতে কোনো তফাত নেই, দুই ‌'বেগম'ও একইরকম ইত্যাদি ইত্যাদি। লেখকদের বেশীর ভাগই ওই একই ঘরানার। বিশেষ কিছু সমালোচক এসব কথাকেই শ্লোগান মানছেন। যেন এসবের বাইরে আর কিছু বলার নেই তাদের।

ভূমিকার পরপরই এসব কথা কেনো বলছি? এজন্য বলছি যে দুপক্ষই বিপ্লব ঘটানোর জন্য তড়পাচ্ছেন। প্রথমে দেশে এবং এরপর রাজনৈতিক দলগুলোতে। সেনাবাহিনীর তরফে সর্বাত্মক চেষ্টার পরও দুটোর কোনটাই ঘটেনি। আমরা যারা রাজনীতি করি, তারাই শুধু কারণটা ধরতে পারি। স্রেফ ডিগ্রীর জোরে, এমনকি তা প্রিন্সটন বা অক্সফোর্ডের হলেও এসব অনুধাবন করা যায় না।

তাদের অজানা রহস্যটা হচ্ছে যা আমরা রাজনীতিকরা জানি- একমাত্র স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধেই বিপ্লব সম্ভব। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে তা অকার্যকর। বিপ্লব তখনই সফল হয় যখন তাতে সাধারণ মানুষ যোগ দেয়। এটা ছাড়া সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলও তাদের সাংগঠনিক সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও বিপ্লবের ধারেকাছেও যেতে পারবে না। গণতন্ত্রে রদবদল ঘটানোর উপায় একটাই যার কার্যকর পরিভাষা হচ্ছে নির্বাচন।

গণতন্ত্রকে উন্নত করার একমাত্র উপায় হচ্ছে এর বিবর্তন ঘটানো। এটি হচ্ছে বিপ্লবের বিপরীত একটি প্রক্রিয়া যা ধাপে ধাপে দীর্ঘমেয়াদে ঘটে। প্রায়ই মনে হবে যে আসলে কোনো কিছুই বদলাচ্ছে না। তবে পরিবর্তনটা অবশ্যম্ভাবী, সেজন্য শুরুর পর যুতসই অনুষঙ্গও জরুরী। কারণ এজন্য দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতাও প্রয়োজন।

নাহলে কিছুই হবে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে ক্রমবিকাশের এই ধারায় সেরারাই টিকে থেকে পরিকাঠামোর উৎকর্ষ ঘটায়। গণতন্ত্রে যেসব নেতা ও দল জনোন্নয়নে বেশী ভূমিকা রাখে তারাই স্থায়ী এবং আরো শক্তিশালী হয়। আর যারা ব্যর্থ, তারা আস্তে আস্তে জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে এবং একসময় গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক বিবর্তনের মূল কথা এটাই।

টিকে থাকার এই প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ নিজের অসামান্য সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছে। সিকি শতাব্দী ধরে চলা আমাদের স্বাধিকার আদায়ের লড়াইয়ে ত্যাগ স্বীকারকে গোনায় নাইবা নিলাম, কিন্তু নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার দলের শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতৃত্ব হারানোর ধাক্কা সয়েছে তারা। এরপর ১৫ বছর ধরে চলেছে স্বৈরশাসনের রাজনৈতিক দমনপীড়ন। ক্ষমতায় ফিরতে নির্বাচনে কারচুপি করে সফল বিএনপির দুটো মেয়াদ পার করতে হয়েছে তাদের। শেষমেষ দুবছর ধরে পরোক্ষ সেনাশাসনে দলটিকে ধ্বংসের জন্য দেশের ক্ষুরধার সব মস্তিষ্কপ্রসূত নানা পরিকল্পনার ধকলটাও সামলে টিকে গেছে তারা।

এই টিকে থাকার কারণ হচ্ছে গোটা সময়কালে ধীরগতিতে নিজের বিবর্তন ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রাকৃতিক বিবর্তনের মতোই অনেক ক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদেও কোনো পরিবর্তন আসেনি। তারপরও এই পর্যায়কালে অর্জনও কম নয় তাদের। এসব সাফল্য ছিলো দেশের বেশীরভাগ মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নকে কেন্দ্র করে। এজন্যই আওয়ামী লীগ শুধু টিকেই যায়নি, একই সঙ্গে আরো শক্তিশালী হয়ে বেড়ে উঠেছে।

উদাহরন হিসেবে আমি একটি খাতে আমাদের সাফল্যকে তুলে ধরতে চাই- অর্থনীতি। এদেশের সিংহভাগ জনগনের সবচেয়ে বেশী উদ্বেগ এই খাতেই। যে অর্থনৈতিক সাফল্যটি জনগনের একটি বিশাল অংশকে প্রভাবিত করেছিলো তাহচ্ছে মুদ্রাস্ফিতি নিয়ন্ত্রণ। নব্বই দশকের শেষদিকে গোটা এশিয়া মহাদেশে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেও আমরা মূদ্রাস্ফিতির হার শতকরা ১.৫৯ ভাগে ধরে রেখেছিলাম। প্রতি কেজি চালের দাম ছিল ১২ থেকে ১৫ টাকা।

বাংলাদেশের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো ধানে বাম্পার ফলনে ঘটেছিলো, আর সেই উদ্বৃতির উল্লেখযোগ্য অংশ রপ্তানী করতেও সক্ষম হয়েছিলাম আমরা। বলুন তো প্রথম কখন আমরা এই খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিলাম? সেটা ছিলো আমার নানা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রথম দফা শাসনে। বিএনপি সরকার প্রথম দফা ক্ষমতায় থাকাকালে সেই সাফল্য ছুঁতে তো পারেইনি, বরং দ্বিতীয়দফা ক্ষমতায় ফিরে উদ্বৃতির বদলে ঘাটতির জন্ম দিয়েছে। সুবাদে দাম বেড়েছে আরো। এর পেছনে ভাগ্য বা সুযোগের অভাব দায়ী নয়।

এটা ছিল আসলে দুটো দলের নীতির বৈপরীত্যের নীতির প্রত্যক্ষ ফল। আওয়ামী লীগ মনে করে খাদ্য একটি মৌলিক চাহিদা এবং তা সবার জন্য সুলভ হতে হবে। দেশের বাইরের ঘটনাবলীর প্র্রভাব আমাদের খাদ্যের উৎস এবং মূল্যের প্রভাবক হতে পারে না। এ কারণে আমরা কৃষকদের ও সার উৎপাদনে ভর্তূকি দিয়েছি এবং উৎপাদন বাড়াতে উন্নত বীজ ব্যবহারের মতো নতুন প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করেছি। অন্যদিকে বিএনপির বিশ্বাস ছিলো যে আমরা বিশ্ববাজার থেকে চাল এবং সার কম দামে কিনতে পারবো, তাই কৃষকদের ভর্তূকি দেয়ার কোনো কারণ নেই।

পাশাপাশি শাসকমহলের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ীকে এসব পণ্য আমদানীতে ফায়দা লুটার সুযোগ দিয়েছে তারা। পরিকল্পনাটা সাফল্য পাবে ততদিনই, যতদিন বিশ্ববাজারে পন্যের দাম কম থাকবে। কিন্তু বিশ্ববাজার সবসময়ই ওঠানামার মধ্যে থাকে এবং তা অনুমান করা দুঃসাধ্য। যদি এবং যখন সেখানে দাম বাড়ে, বাংলাদেশেও বাড়ে। ঘটেছেও ঠিক তাই।

অন্যসব অর্থনৈতিক খাতে সফল পরিকল্পনা এবং উন্নতির সিংহভাগ কৃতিত্ব আওয়ামী লীগের। মোবাইল টেলিফোন নেটওয়ার্ককে বেসরকারীকরন করেছিলাম আমরা যা সেলুলার ফোনকে বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে সুলভ করে তুলেছে। পূর্ববর্তী বিএনপি সরকার তাদের একজন মন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছিলো এর একচেটিয়া ব্যবসা! সেজন্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে ছিলো তা। জ্বালানি উৎপাদন বেসরকারীকরণ করে এই খাতে উদ্বৃতি হয়েছিলো আমাদের। এবার পরবর্তী বিএনপি সরকার তা চরম ঘাটতিতে রূপ দিয়েছে।

এই ঘাটতি ও সেইসঙ্গে তাদের সরকারের সীমাহীন দূর্নীতি মিলে আমাদের ব্যবসা-বানিজ্য ভীষণ ক্ষতিগ্রস্থ করেছে যার ফলস্বরূপ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আমাদের অর্থনীতিও। সংবাদমাধ্যম, বিমান, ব্যাংক এরকম আরো অনেককিছুই বেসরকারীকরণ করেছিলো আওয়ামী লীগ। এর ফলে প্রতিযোগিতা বেড়েছে, বেড়েছে মান এবং ভোক্তারা এসব পরিসেবা পেয়েছে কম দামে। ব্যবসায়িক পরিমন্ডলে একটি ইতিবাচক পরিবেশের জন্ম নিয়েছিলো এত যা সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানগুলোর সমৃদ্ধির সুযোগ করে দিয়েছে। সুবাদেই নতুন কাজের সুযোগ হয়েছে, বেকারত্ব কমেছে এবং বেড়েছে মধ্যবিত্তের সংখ্যা।

মধ্যবিত্ত বাড়লে দেশের পন্যবাজারও বিস্তার নেয়। এতে ব্যবসায় মুনাফা বাড়ে এবং চক্রটা উর্ধ্বগতি পায়। আওয়ামী লীগের এই নীতি যদি ধরে রাখা হতো তাহলে আমাদের অর্থনীতিও ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ হতো। দুর্ভাগ্য দেশের বেশীরভাগ মানুষের, তা ঘটেনি। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে আপনারা যাই বলুন না কেনো, আমি বলবো সেবার আসলে দুদলই খুব কাছাকাছি অবস্থানে ছিলো।

জনপ্রিয়তার বিচারে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুদলই ছিলো সমান-সমান। সবচেয়ে বড় কথা আওয়ামী লিগ মোটেও জনসমর্থন হারায়নি। বরং জিতে আসা আগের নির্বাচনেরচেয়ে বেড়েছিলো ভোটের সংখ্যা। প্রকৃতির বিবর্তনের মতোই আওয়ামী লীগ এখন পরিবর্তনের মুখোমুখি। অনেক নতুন নেতা এবং সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী উঠে এসেছেন।

এই রূপান্তর কারো নির্দেশে ঘটেনি। বরং এই নতুন প্রার্থীদের সবাই মাঠ পর্যায় থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। দলকে ধ্বংসের পরিকল্পনা সফলভাবে ঠেকিয়ে এই নতুন নেতৃত্ব উঠে এসেছেন দলীয় কর্মীদের সমীহ এবং সমর্থন নিয়ে। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে এবং নেতৃত্বে উঠে এসেছেন তারা যারা দলের দুঃসময়ে এর অস্তিত্ব বাঁচাতে লড়েছেন। রাজনৈতিক বিবর্তনের আদর্শ উদাহরণ এটি যা দলের জন্য সুফল বয়ে এনেছে।

এখন দল আরো শক্তিশালী। অর্থনীতি নিয়ে আলোচনাটায় ফিরে জানাচ্ছি আবারও একই কাজ করবে আওয়ামী লীগ। অর্থনৈতিক খাতে আমাদের নীতিকে আলোচিত সাফল্য বলেই মনে করি আমি। আসন্ন নির্বাচনে আমার বিশ্বাস আমরা জিতবো, আর জিতলে আগের চেয়ে ভালো কিছু করে দেখানোর আশা রাখি। অর্থনীতিকে আরো মুক্ত করে দেবো আমরা, তবে তা করবো পরিকল্পিতভাবে এবং দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে।

দলের নেত্রী ক্ষুধা, নিরক্ষরতা, জ্বালানী ঘাটতি ইত্যাদি দূর করার জন্য ‌'ভিশন ২০২০' নামে এক পরিকল্পনা পেশ করেছেন। এর বাস্তবায়ন শুধু সম্ভবই নয়, আমরা দেখিয়ে দিয়েছি যে একমাত্র আমাদের পক্ষেই তা সম্ভব। আমাদের একমাত্র বাধা বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতা। আমাদের উন্নতির জন্য বরাবরই দাতাদের কাছে হাত পাততে হয়েছে। এটা সম্ভবত আর প্রয়োজন হবে না বলেই আমার বিশ্বাস।

আমাদের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের দিকে তাকান। মধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও বাড়বে। আর এর ফলে আমাদের নিজস্ব পুঁজিবাজার দিয়েই আমরা উন্নয়ণ প্রকল্পগুলোর বিশাল অবকাঠামোতে বিনিয়োগ ঘটাতে পারবো। অবশ্য এটা নির্ভর করে বিনিয়োগের জন্য মধ্যবিত্তের হাতে যথেষ্ট অর্থ থাকার ওপর। সাবেক বিএনপি-জামাত জোট সরকার ও বর্তমান শাসনে দ্রব্যমূল্যের অব্যহত উর্দ্ধগতিতে বেহাল অবস্থায় আছে আমাদের মধ্যবিত্তরা।

আমাদের অর্থনীতির চাকাকে আবারো পূর্ণশক্তিতে ঘুরানো জরুরী হয়ে পড়েছে। গত ১৭ বছরের অভিজ্ঞতা বলছে একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে এই কাজটি সাফল্যের সঙ্গে করে দেখাতে। বেসরকারীকরণ আমরা চালিয়ে যাবো তবে আরো নিয়ন্ত্রিতভাবে। আমাদের পরিকল্পিত পদক্ষেপের একটা উদাহরন হিসেবে আমি আদমজী পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি বলতে চাই। আমার মাও এটা করতে চেয়েছিলেন, তবে শুধু বন্ধ করে দেয়ার বদলে তার পরিকল্পনা ছিলো এর কর্মচারীদের আগে পুনর্বাসন করা।

কর্মচারীরা ছাড়াও সেই মিলকে ঘিরে একটি ছোটো প্রতিবেশ গড়ে উঠেছিলো। শ্রমিক-কর্মচারীদের পরিবার ছিলো যারা থাকতো সেখানে। তাদের পন্য ও অন্যান্য পরিসেবা দিতে চা-দোকান, মুদি খানা থেকে শুরু করে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ছিলো সেখানে। ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শুধু শ্রমিকরাই নয়, এদের জীবনযাত্রাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শ্রমিকের যদি আয় না থাকে, সে সদাই কিংবা কাপড় কেনার টাকা পাবে কোথায়।

এভাবেই আদমজী বন্ধ করে বিশাল সংখ্যক মানুষকে কর্মহীন করে দেয়া হয়েছে। মায়ের পরিকল্পনা ছিলো আগে ওই অঞ্চলে একটা বিকল্প শিল্পখাত গড়ে তোলা। পরিকল্পনায় স্টিল মিলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও যে কোনো একটি শিল্প কারখানা হলেও সমস্যা হতো না। আদমজী শ্রমিকদের সেই কারখানায় কাজ করার সুযোগ দেয়া হতো। আর তা চালু হওয়ার পর আদমজী বন্ধ করে দেয়া হতো।

এর ফলে বেশীরভাগ শ্রমিকই চাকরীতে থাকতেন এবং আশপাশের ছোট ব্যবসায়ীরাও টিকে যেতেন। বেসরকারীকরণে আমাদের পরিকল্পনার মূল অংশই হবে এ ধরণের পুনর্বাসন। যদিও এতে সরকারের ব্যয় কমবে না। এতে সময় বেশী লাগবে, কিন্তু তারপরও এতে সরকারী মালিকানাধীন সংস্থাগুলোর কর্মচারীদের জন্য অনেক ভালো হবে। বিএনপির এমন কোনো পরিকল্পনা ছিলো না।

তারা স্রেফ সবাইকে ছাটাই করে দিয়েছে। বেসরকারী খাতের সমৃদ্ধিতে সেখানে কাজের সুযোগ আরো বাড়বে যার পারিশ্রমিক সরকারী খাতের চেয়ে ভালো। এতে বেসরকারী খাতে যোগ দিতে উৎসাহী নতুন শ্রমিক বাড়বে। ভবিষ্যতে সরকারের আকার কমাতে সমর্থ হবো আমরা। এর অনেক ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এতে আমলাতন্ত্র ও লাল ফাইলের দৌড়াত্ম থেকে রেহাই মিলবে সবার। এতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অন্য খাতগুলোয় কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো যাবে। সরকারী বেতন বাড়লে তাদের দূর্নীতি করার চাহিদা এবং সুযোগও কমবে। এতে দূর্নীতি কমিয়ে আনা যাবে। গত দুবছর এবং এর আগেও সামরিক হস্তক্ষেপের সময় আমরা দেখেছি যে গণতন্ত্রকে দমিয়ে এবং লাগাতার গ্রেপ্তারের মাধ্যমে দূর্নীতি কমানো যায় না।

নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় দূর্নীতিও হয় লাগামছাড়া আর গত দুবছরে আমরা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং সেনাবাহিনীতে দূর্নীতি আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে দেখেছি। এই মতামত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের যারা দূর্নীতির বিরুদ্ধে ঢাকঢোল পিটিয়ে জেহাদে নেমেছিলো। ২০০৬ সালের অক্টোবরে প্রতিবাদী আন্দোলনে নামায় নানা সমালোচনার জবাবে বলি, ভাবুন একবার, আওয়ামী লীগ তা না করলে বাংলাদেশের কি অবস্থা হতো? এখন ফের ক্ষমতায় বহাল থাকতো দূর্নীতিবাজ বিএনপি-জামাত সরকার। আমাদের অর্থনীতির অবস্থা হতো আরো মারাত্মক। আর নিশ্চিতভাবেই পাঁচ বছর পর আরেকটি কারচূপির নির্বাচন দেখতে পেতাম আমরা।

দুটো দলকে এক পাল্লায় মাপতে গিয়ে লোকে ভুলে যায় দেশবাসী একবারই শুধু শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর দেখেছে- ২০০১ সালে আওয়ামী লিগের মেয়াদ শেষে। প্রতিবারই নির্বাচনে কারচুপির পথ ধরেছে বিএনপি। দুই দলের চরিত্রের মৌলিক পার্থক্য এটা। বিএনপি আমাদের আইন, সংবিধানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় যেতে এবং টাকা কামাতে আগ্রহী। প্রতিবারই তারা সেটা করেছে।

একমাত্র আওয়ামী লীগেরই রয়েছে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সদিচ্ছা ও দূরদৃষ্টি। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগই জনগনের মৌলিক অধিকার ও চাহিদার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। শুধু পরিবারের কারণে আমি আওয়ামী লীগের সমর্থক নই। আমি সেটা করি একটা ভরসা থেকে। বাংলাদেশের একমাত্র বড় এবং সত্যিকারে গণতান্ত্রিক দল এটি।

নিশ্চিতভাবেই আভ্যন্তরীন গনতন্ত্র চর্চার কারণে মাঝেমাঝে ভুল সিদ্ধান্তও নিয়েছে তারা। সিংহভাগের সমর্থনে নেয়া সিদ্ধান্ত সবসময় কিন্তু সেরা নয়। যাহোক হাভার্ডে আমার এক অধ্যাপক বলেছিলেন- গণতন্ত্র হচ্ছে একমাত্র পদ্ধতি যেখানে সরকার নিজেকে শুধরানোর ক্ষমতা রাখে। আওয়ামী লীগের নিজেকে শুধরানোর ক্ষমতা আছে। বিএনপি ও জামাতের নেই।

লেখাটি এর আগে সচলায়তনে প্রকাশিত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।