আমি নারায়ণগঞ্জে থাকলেও ঢাকার ‘বলাকা’গুলোর সাথে আমার একটা সু-সম্পর্ক আছে। প্রতিদিন কারো সাথে দেখা হলে যা হয় আর কি! অফিস থেকে ফেরার পথে প্রতিদিন বলাকাগুলোর পাশ দিয়ে রিকশায় করে বাসষ্ট্যান্ডে যাই। যাওয়ার পথে বলাকাগুলোর সাথে দেখা হয়না বা তাকাইনা এমন দিন খুব কম-ই আছে। নিজের ইচ্ছায় না তাকালেও; চোখ পড়েই। কারন,অফিস ছুটির সময়তো আছেই,এমনিতেই ওই জায়গায় প্রতিদিনই ছোটখাটো জ্যাম লেগে থাকে।
সে সুত্রেও বলাকাগুলো থাকে চোখের সামনে। কদিন আগেও সাদা সে বলাকাগুলোকে দেখে মাঝে মাঝে কষ্ট লাগতো। বলাকার আশেপাশে পার্কিং করা গাড়ীর সুযোগ্য ড্রাইভারগন ‘পান’খেয়ে পিক ফেলে বলাকাগুলোর পা লাল করে রাখতো। পিক ফেলার ডিজাইন দেখে মনে হতো,তারা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে এই কাজ করে। মেজাজ খারাপ হতো,শালার ড্রাইভার সৌন্দর্য কি ধরতেই পারলি না।
শুধু ‘গিয়ার’ধরে জীবন পার করে দিলি। কিন্তু কখনো প্রতিবাদ করতে ইচ্ছে হয়নি। বুঝতে পারতাম দিন দিন কীভাবে মেরুদন্ডহীন হয়ে পড়ছি ...।
২.
পানের পিক ফেলে বলাকার পা’গুলোর সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়ায় কষ্ট হতো। কদিন আগে রাতের আধাঁরে ‘একদল’মানুষ সেই বলাকার পা ভেঙ্গে ফেলেছে।
খবরটা শুনে,কিছুক্ষণ ভাবলাম। তারপর দেখে দেখে দুদিন অপক্ষা করলাম। সামান্য কিছু বড় বড় কথা ছাড়া,কোথাও তেমন কোন প্রতিবাদ নেই। লালনের ভাষ্কর্য ভাঙ্গার পরের ঘটনাও একই রকম ছিল। সামান্য হইচই ...তারপর চুপ।
আমার এক ছোট ভাই মুন্না (সন্দীপন বসু মুন্না) বলাকা ভাঙ্গার সে রাতে সঙ্গে সঙ্গেই ফোন করল। জিজ্ঞাসা করল,এগুলো কি হইতেছে? আমগো কি মেরুদন্ড নাই?
বুঝতে পারলাম শুধু আমারই না আমাদের সকলের মেরুদন্ড-ই মনে হয় ভেঙ্গে গেছে। যে কারনে আমরা বেশিক্ষণ সোজা হয়ে থাকতে পারিনা।
বরং ভেবে অবাক হই, আমাদের চেয়ে অনেক বেশি শক্ত মেরুদন্ড মৌলবাদীদের। ধর্মান্ধ উগ্রবাদীদের।
তাই মেরুদন্ড সম্পন্ন মানুষ দেখতে সাধ জাগে প্রতিদিন। কারন ছোটবেলায় পড়ে পড়ে বড় হয়েছি,মানুষ মেরুদন্ডী প্রাণী।
৩.
আজ একদল মেরুদন্ড সম্পন্ন মানুষ দেখলাম। সেই বলাকা ভাঙ্গা মানুষগুলো। রিকশায় বঙ্গবাজারের সামনে আটকে আছি।
সঙ্গে মুন্না। ছোটখাটো জ্যাম। পাশে একটা মাইক্রোবাস। সেটার পেছনের সিটে একদল হুজুর টাইপের লোক। চেনা চেনা লাগছে।
চেনা লাগছে মুন্নারও। আমি আর মুন্না দুজনেই দ্রুত খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। কিন্তু হিসাব মেলাতে পারছিনা। কোথায় যেন দেখেছি? অবশেষে সামনে অস্ত্র নিয়ে বসে থাকা পুলিশ দেখে ধারণা করলাম,তারা কারা? তারপরও শিওর হবার জন্য পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলাম। নিশ্চিতও হলাম।
তারাই ওরা। একদল মেরুদন্ড সম্পন্ন মানুষ। যারা মেরুদন্ড সোজা করে,মাথা উচু করে একের পর এক ভাষ্কর্য ভেঙ্গে যায়। ভেঙ্গে যায় লালন,ভেঙ্গে যায় বলাকা ...।
হঠাত হতাশায় চোখ ঘুরিয়ে নিই।
চোখ ঘুরিয়ে নিই বেদনায়।
অবাক হই,পাশে একটা ভাষ্কর্য।
আবার তাদের দিকে ফিরে তাকাই। মেরুদন্ডী হিসেবে তাদের সন্মানে অথবা মেরুদন্ডহীন হিসেবে নিজেদের প্রতি বিরক্তে কেন জানি তাদের জানাতে ইচ্ছে করে,এই যে ভাইজান দেখেন এইখানেও একটা ভাস্কর্য রইছে? এইটার নাম ‘প্রত্যাশা’। এইটাও মৃনাল হক বানাইছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।