জীবন্ত মানব সত্তার অস্তিত্বই নিঃসন্দেহে মানবের সকল ইতিহাসের প্রথম আরম্ভ...
সমস্ত মুম্বাই জুড়ে যে সন্ত্রাস আর হত্যাযজ্ঞ চলছে তা সন্ত্রাসের এক নতুন মাত্রা নির্দেশ করছে, এত পরিকল্পিত এবং ব্যাপক মাত্রার আক্রমন সম্ভবত ইন্ডিয়া আগে দেখেনি- বুধবার রাত্রের ঘটনার পর ৪০ ঘন্টারও বেশী সময় কেটে গেছে- পরিস্থিতির উপর পুরা নিয়ন্ত্রন এখনও আসেনি। আতঙ্কের মুহুর্ত গুলোতে দিশাহারা সাধারন নাগরিক অপেক্ষা করে আছে তাদের এ দুঃস্বপ্ন কখন শেষ হবে-আর কত প্রান এর মধ্যে ঝড়ে যাবে।
ভারতের বানিজ্যিক রাজধানী মুম্বাই এর নির্মম ঘটনায় এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১৩০ছাড়িয়ে গেছে- নতুন করে এক অষ্ট্রেলিয়ান টুরিষ্ট এর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে- কমান্ডো যোদ্ধারা এখনো লড়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে- জিম্মিদের উদ্ধার করতে।
আমরা কি অনুমান করতে পারি- এ ধরনের ঘটনা গুলোতে অপরাধীদের খুজে পাওয়া যায় কিনা? তাদের আইনের হিফাজতে নেওয়া হয় কিনা- তাদের বিচার এবং শাস্তি হয় কিনা?
একজন সাধারন নাগরিকের পক্ষ থেকে এ বিচার দাবী একটা অতি ন্যয্য আর স্বাভাবিক চাওয়া।
সমস্ত পৃথিবী জুড়ে হত্যা সন্ত্রাস আর আতঙ্ক ছড়িয়ে সাধারন মানুষদের পরিনত করা হচ্ছে তাদের সহজ লক্ষ্য বস্ততে।
আমরা জানি না এ থেকে আমাদের নিজদের-আমাদের পরিবার- আমাদের শিশুদের বাঁচানোর কার্যকর পন্থা কি? মানবতার বিরুদ্ধে নিরীহ নির্দোষ অসহায় মানুষদের লাশের উপর দাড়িয়ে যারা তাদের লক্ষ্য হাসিলের রাস্তা খুঁজে নিচ্ছে- তাদের আমরা কি ভাবে মোকাবিলা করবো?
রাষ্ট্র তার সাধারন নাগরিকের জান মাল হিফাজত করার জন্য কি ভুমিকা পালন করা উচিত--এই গুরুত্বপুর্ন প্রশ্নটাও এখানে আমি তুলতে চাই। সাধারন নাগরিক হিসাবে আমি রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা চাই- ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিচার চাই-যে আমার ক্ষতি করেছে তার শাস্তি চাই। আর এই চাওয়াটা আমার অধিকারের মধ্যে পড়ে- আমার মানবাধিকার।
আমাদের দেশেও-বিগত দিন গুলোতে ধর্মের নামে জঙ্গী কর্মকান্ড অনেক রক্ত ঝড়িয়েছে- সে সব সন্ত্রাসীদের অনেকেই ধরা পড়েছেন এবং বিচারের পর শাস্তি পেয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের পক্ষ থেকে এটা স্বস্তির বিষয়- যদিও এ ধরনের বিচার প্রক্রিয়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনেক সময় নিয়ে নেয়।
বছরের পর বছর চলে যায় অভি্যোগ দাঁড় করাতে, সাক্ষী প্রমান জোগাড় করতে-আইনের দীর্ঘসুত্রিতার পথ ধরে চলতে থাকে বিচার কার্য্য। জে এম বি জঙ্গী নেতাদের বিচার করতে গিয়ে আমরা দেখেছি সর্বদলের ঐক্যমত থাকা সত্ত্বেও এবং অভিযুক্ত্ররা উচ্চ আদালতে আপীল করার সিদ্ধান্ত না নেওয়ার পরেও--আমরা দুই বছরের কমে এই বিচার শেষ করতে পারি নাই।
ইন্দোনেশিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখেন- ২০০২ সালের অক্টোবর ১২ তারিখে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে নাইটক্লাবে বোমা বিস্ফোরন ঘটনা হয়েছিলো- সেই ঘটনার মুল অপরাধীদের শাস্তি কার্যকর হল মাত্র এ মাসের প্রথম সপ্তাহে। প্রায় ৬ বছর লেগে গেল এই বিচার শেষ করতে-
বিচার কার্যে দেরী হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান ইস্যু হয়তো অভিযুক্তদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা- তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের পাশে দাড়ানোর জন্য মানবাধিকার কর্মীদের সাধারনতঃ অভাব হয় না- এটা নিয়ে আমি আপত্তিও উত্থাপন করতে যাচ্ছি না- সন্ত্রাসীদের ধরে ধরে বিনা বিচারে ফাঁসিতে ঝোলানোর দাবীও আমি করছি না।
শুধু মনে করিয়ে দিতে চাচ্ছি- বিলম্বিত বিচার ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকের মানবাধিকার খর্ব করে কিনা সে প্রশ্নটা আমাদের যাচাই করে নেওয়া উচিত। এ কথাটা আমরা প্রায়ই মনে রাখি না।
আজকে মুম্বাই এ যে নৃশংশতা ঘটে গেল-তার জন্য দায়ী অপরাধীরা কবে ধরা পড়বে-কবে বিচার শুরু হবে আর তার কৃতকর্মের শাস্তি কার্যকর হয়েছে এটা দেখার জন্য একজন ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিককে কত বছর অপেক্ষা করতে হবে?
আমাদের লেগেছিল দুই বছর-ইন্দোনেশিয়ার লেগেছে ৬ বছর- ভারতের লাগবে কয় বছর??
টেররিষ্টদের হতাশ হবার কোনই কারন ঘটেনি দেখাই যাচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।