আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে...
পাঠচক্রের ধারণা নতুন নয়। বহু পুরনো আমল থিকা এইটা চৈলা আসতেছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা নিয়া ব্লগে আলোচনার একটা সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে চাইতেছি। বিশেষ কৈরা আলোচ্য পোস্টের রচয়িতাকে এতে রচনার পটভূমি, বর্তমান হালহকিকত, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ বিবিধ বিষয়াবলী সম্পর্কে বলার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ জানাই। উনার অংশগ্রহণে আলোচনাটি একটি প্রাণবন্ত রূপ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাঠকরাও লেখককে খোলাখুলি প্রশ্ন রাখতে পারেন।
উপক্রমণিকা
নিচের রচনাটি আমগো ভাইবেরাদর মাহবুব মোর্শেদের এক্টা পুরানা লেখা । প্রথম আলো ব্লগের বিভাগীয় সম্পাদক নিযুক্ত হবার পর এইটা নিয়া সুস্থ ও জ্ঞানগর্ভ আলোচনা হৈতে পারে বৈলা মনে হৈতেছে। যেহেতু "বদলে যাও, বদলে দাও", সেহেতু কিভাবে তিনি বদলে গেলেন, কিভাবে বদলে দিলেন- স্বাভাবিকভাবেই জানার ইচ্ছা হৈতে পারে।
***
প্রথম আলো
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৪:৪৩
লিখেছেন মাহবুব মোর্শেদ
------------------------------------------
১.
নিজের ধর্মানুভূতির ওপর আস্থা নাই বিধায় কার্টুন-কৌতুক বিষয়ে এক আলেমের সঙ্গে কথা বলেছিলাম।
প্রথমে শিওর হয়ে নিলাম উনি কার্টুনটা দেখেছেন এবং কৌতুকটাও পড়েছেন কি না। উনি বললেন দেখেছেন ও পড়েছেন। বললাম, তাহলে বলেন। তিনি বললেন, সমস্যা কিছু নাই। সঙ্গে একটা ইতিহাস থেকে একটা ঘটনা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করলেন।
আমাদের মহানবী তার প্রিয় এক সাহাবাকে আবু হোরায়াররা বলে সম্বোধন করতেন। আরবি ভাষায় আবু মানে পিতা আর হোরায়রা মানে বিড়াল। কথিত আছে, হয়রত আবু হোরায়রা (রা.) বিড়াল ভীষণ পছন্দ করতেন। এজন্য মহানবী তাকে এই নাম দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ওই সাহাবী আবু হোরায়রা নামেই মুসলিম সমাজে পরিচিত হয়েছিলেন।
তার মন্তব্য শুনে একটু থমকে গেলাম। যেখানে বিড়ালের আগে মোহাম্মাদ বসানোর কারণে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বলে খবর আসছে সেখানে একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি এরকম সহনশীল উদাহরণ কীভাবে দিলেন?
আমার জ্ঞানে যতটা কুলায় তাতে হযরত মুহম্মদ (সা.)-এর নামের প্রসঙ্গ আসে এমন স্থানে কটুক্তি করা অনুচিত। ব্যাড টেস্টের পরিচায়ক। কিন্তু মুসলমানদের অনেকেই নিজের নামে মুহম্মদ শব্দটি ব্যবহার করেন। এই শব্দের অর্থ প্রশংসিত।
নিজের নামে মুহম্মদ শব্দ ব্যবহার করে মুসলমানরা গর্বিত হন। নামে এই শব্দ ব্যবহারে উপমহাদেশের মুসলমানরা একটু এগিয়ে। আরব, তুরস্ক, ইরাক, ইরানে নামের আগে বাধ্যতামূলকভাবে মুহম্মদ ব্যবহারের প্রচলন নেই। সেখানকার পরিচিত নামগুলো খেয়াল করলেই বিষয়টি সহজেই বোঝা যাবে। কিন্তু বাংলাদেশে এমন মুসলিম খুঁজে পাওয়া ভার, যার নামে আগে বাবা-মা মুহম্মদ শব্দটি যুক্ত করেননি।
অথচ এটি কোনো নিয়ম বা অনুশাসন অনুসারে করা হয় না। এটি কেন এদেশে এভাবে চালু হলো তা পেছনে একটি ঘটনার কথা আমি জানি। কিন্তু এই মুহূর্তে রেফারেন্স নেই বলে উল্লেখ করতে পারছি না। শুধু এইটুকু বলাই যথেষ্ট যে, নামের আগে মুহম্মদ বা মুছাম্মত ব্যবহার করা কোনো ইসলামী বিধান নয়। কিন্তু অনেককেই বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে দেখি।
সৌদি আরবের নামের উদাহরণ দিলেও তারা থামতে চান না।
বিষয়টি নিয়ে লোকমুখে কিছু কৌতুক প্রচলিত আছে। শিবিরের পত্রিকায় এই ধরনের কৌতুক লোকমুখে প্রচলিত কৌতুক থেকেই এসেছে। আলপিনেও এসেছে সেখান থেকেই। লোকমুখে অনেক কথাই প্রচলিত।
কখনো সেটার মধ্যে বর্ণবাদ, কখনো ধর্মবিদ্বেষ, কখনো প্রতিবাদ থাকে। সেটা লোকমুখে যতটা মানায় মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে প্রকাশ করলে ততোটাই অরুচিকর মনে হয়। আলপিনের ক্ষেত্রে সেই ব্যাড টেস্টের প্রকাশ ঘটেছে। এর বেশি কিছু হয়েছে বলে মনে হয়নি।
কিন্তু প্রসঙ্গটার তাতক্ষণিক ব্যাখ্যা কর একে যেভাবে ডেনমার্কের কার্টুনের মতো সিরিয়াস ব্যাপারে পরিণত করা হয়েছে তাতে ভীষণ বিস্মিত হয়েছি।
হুজুরদের ধর্মানুভূতির প্রকাশ এইভাবেও তাহলে ঘটতে পারে?
ব্যাপারটাকে মুসলমানদের স্বাভাবিক ধর্মানুভূতির প্রতিক্রিয়া হিসাবে বিচার করার উপায় নাই। ব্যক্তিগতভাবে আমি যে মুসলমানদের সঙ্গে আলাপ করেছি, তাদের কারো ধর্মীয় অনুভূতি আহত হয়েছে বলে মনে হয়নি। এমনকি কাউকে ক্ষুব্ধও দেখিনি।
তারমানে এ ঘটনার পেছনে একটা রাজনীতি আছে। সেটা ধর্মীয় ব্যাপার হলেও রাজনীতি বটে।
এর সঙ্গে মিছিল মিটিং, প্রচারণা ও প্রতিবাদের সম্পর্ক আছে।
২.
ওয়ান ইলেভেনের পর প্রথম আলো পত্রিকাটি পড়লে মনে হয়েছে বারবার, যে ফুকোওমা যে ইতিহাসের অবসানের কথা বলেছিলেন তা বাংলাদেশে ঘটে গেছে। এইদেশের নতুন ইতিহাসের সূচনা ঘটেছে। বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামাত, কমিউনিস্ট পার্টি, আমলা, ব্যবসায়ী সবার দিন শেষ। এবার এসেছে নতুন দিন।
একটি পত্রিকা, যা কিনা এই সমাজের বাইরের কোনো বিষয় নয়। যা এই সমাজের অংশ হিসেবে নিজেকে গণমাধ্যম দাবি করে টিকে আছে, বহুল প্রচার পেয়েছে। বিদ্যমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এইখানকার একটি শিল্পপতি ব্যবসায়ী গ্রুপের ইনভেস্টমেন্টের ভিত্তিতে এটির প্রকাশনা চলে। এই বাজারে বিক্রি হয়ে যে মুনাফা করে তার পক্ষে এ সমাজে কাউকে কেয়ার না করে চলা কিভাবে সম্ভব?
আসলে কি প্রথম আলো কাউকে কেয়ার করে না? কাকে কেয়ার করে? কার কথা শোনে? কার স্বার্থ দেখাশোনা করে?
একদিকে বিশাল পাঠকগোষ্ঠী, ব্যাপক জনপ্রিয়তা অন্যদিকে আনপ্রেডিক্টেবল স্বার্থ। প্রথম আলোর অবস্থান কোথায়?
লোকমুখে একটা কথা আছে, ধরাকে সরা জ্ঞান করা।
ধরা মানে পৃথিবী আর সরা মানে মাটির পাত্র। পৃথিবীকে মাটির পাত্র জ্ঞান করা ঠিক না। আর দেশটাকে, এর রাজনীতিকে, এর সমাজ অর্থনীতিকে কয়েকটা গোলটেবিল বৈঠক মনে করা ঠিক না।
আমি মন থেকে চেয়েছি, এইবার অন্তত প্রথম আলো হুজুরদের রাজনীতি থেকে রক্ষা পাক। আরও একটা মিডিয়া হাউস বন্ধ না হোক।
কিন্তু একই সঙ্গে এটাও মনে হয়েছে, প্রবল পরাক্রমশালী প্রথম আলোও কত অসহায়। এই বিশাল প্রতিষ্ঠানের ভেতরেও কত ক্ষমা প্রার্থনার অবসর। কত ভয়, কত আর্তনাদ।
হুজুররা খারাপ রাজনীতি করেছে। কিন্তু প্রথম আলো এর চেয়ে বেশি খারাপ রাজনীতি করেছে ও করবে।
বায়তুল মোকাররমের খতিব যখন প্রথম আলোকে মাফ করে দিলেন তখন মনে হলো বাংলাদেশ ইতিহাসের অবসানের কাল থেকে ফিরতে শুরু করেছে।
কিন্তু এত ভয় কেন তাদের মনে?
কীসের ভয়?
কেন ভয়? হঠাত কেন এত ভয় হয়?
৩.
যারা প্রথম আলোর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন তারা অবশ্যই ধন্যবাদ পাবেন। কারণ তারা ধর্মীয় রাজনীতির বিপদজনক দিকটির বিরদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু তারা নিশ্চয়ই প্রথম আলোর স্ট্যাটেজি-ট্যাকটিকসসহ মোল্লাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান নাই। প্রথম আলোর বিপদজনক প্রচারণা কৌশলের পক্ষে দাঁড়ান নাই।
যারা এ দফা প্রথম আলোর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন তাদের ব্যাপারটা ভাবতে হবে। বুঝতে হবে, সিভিল বিপ্লবের মুখপত্রটি দেশের মতামতের কী উন্নয়ন ঘটিয়েছে? তাদের অবদান কী?
আজকে দেখলাম, সিপিবি আর বাসদ মোল্লাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। এই কাজে তারা রিস্ক নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু প্রথম আলোর কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কোনো কথা ইতিপূর্বে বলেন নাই কেন?
আমাদের সম্পাদকরা সহমর্মিতার সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন। মাঠে নমে প্রথম আলোকে বাঁচানোর জন্য ভূমিকা রেখেছেন।
এখন প্রশ্ন, কোন পত্রিকার বা টিভি চ্যানেলের কোন বিপদের সময় প্রথম আলো বা তার সম্পাদক অন্য কারো পাশে এসে দাঁড়িয়েছে? ভবিষ্যতে এরকম কোনো সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বা কতটুকু?
৪.
প্রথম আলো ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে কী বাঁচালো তাও আমাদের মনে রাখতে হবে। তারা যা বাঁচালো তা হলো বড় ইনভেস্টমেন্টের একটা লাভজনক প্রজেক্ট। আর সবকিছুই তারা ছেড়ে দিল। কিছুই তারা ধরে রাখার চেষ্টা করলো না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।