কবি আমি, নিজ-চণ্ডী-দাস
সেলিম আল দীন পাঠশালার কবিতা অধিবেশনে গত ১৮ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে কবিতা পাঠ করেছিলেন ৫ জন তরুণ কবি। দশক-পরিচয়ে তারা সকলেই নব্বইয়ের। যে কবিরা সেদিন আমাদের স্বকণ্ঠে স্বনির্বারিত ৫টি করে কবিতা শোনালেন, তারা : চঞ্চল আশরাফ , জাফর আহমদ রাশেদ , মুজিব মেহদী , সাখাওয়াত টিপু ও সৈকত হাবিব। উল্লেখ্য যে, অনুষ্ঠানে আলোচক হিশেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন ড. আজফার হোসেন।
ইতঃপূর্বে ব্লগে তিন জন কবির কবিতা পোস্ট করেছিলাম।
আজ সে ধারাবাহিকতায় কবি সাখাওয়াত টিপুর কবিতা তুলে ধরা হলো ব্লগের বন্ধুদের পাঠ ও প্রতিক্রিয়ার স্বাভাবিক প্রত্যাশায়।
সাখাওয়াত টিপু
জন্ম : ১৯৭১, সন্দ্বীপ। পেশা : লেখা।
প্রকাশিত গ্রন্থ :
১। এলা হি বরষা [কবিতা ২০০২]
২।
যাহ বে এইবাক্য পরকালে হবে [কবিতা ২০০৪]
৩। শ্রী চরণে সু [কবিতা ২০০৭]
হাই হায় সোসাইটি
আগে বউ পাছে ব্যাগ ধরা আমি এক কাণ্ডকারখানা
বউয়ের লগে রোজ ভোরে রাজার বাজারে যাই
হায় বাজার অদ্ভুত কোথাও কোনও রক্ত-মাংস নাই
অদিকে মাছ’লা খালি পাঙ্গাসের লাশ নাড়ে-চাড়ে
ঘাড় তুইলা শুধায়, দেকছেন মালটা কেমন লাল
একগাল পান নিয়া লালমুখে বউ তো রাহুচণ্ডাল
যাই ভায়া সস্তার যখন তিনাবস্থা পরথমে চাল-নুন
বউ বইলছে, সদাই যখন করি দাম যা হোক না
কেন আমাদের রসনা সমাজে লাগে সিঙ্গাতবেগুন
সকল বাজার রাজার দখলে যে যার বগলে হিয়া
মোর দাদাদের প্রজাগণ থাকে আব্বাদের বেদখলে
দলেবলে গিয়া হাই সমাজে আমিও প্রজা বনগিয়া
বউডা এমন নারীবাদী চুল টান দিয়া কয়, আসি
মোরা না দু’অর্ধ দুইজনে একাদলে কী তবে বেশি
দাদারা বিটিশ এককেরে আব্বারা তারচে’ কংগ্রেসি
বিশ্বব্যাঙ্কের বুদ্ধিজীবীদের জিগাই!
এক কানা কয় আর এক কানারে
চলো যায় ভবপারে
নিজে কানা পথ চেনে না
পরকে ডাকে বারেবার
--- লালন সাঁই
কে কাহারে বাবা রাখে রে নজরে
মনু নাকি হনু রাজাদের ঘরে
তেলেসমাতির হাতে রেখে ছাই
কফ আর রক্ত মুখে মাখে তাই!
কারে প্রশ্ন করে ইয়াঙ্কি বহর
এঁঠে ফাল পাড়ে বাজারি কহর!
এই কলিকালে বিলাতি জামাই
অধ্যাপকদের অলিতে জিগায়---
কোন তালকানা গলিতে মশায়
ধার ধরা জ্ঞান সহজে বিকায়?
কারে প্রশ্ন করে ইয়াঙ্কি বহর
এঁঠে ফাল পাড়ে বাজারি কহর!
আলাভোলা ড. ডটই তো---থ!
দেখি সবে সস্তা কথায় পস্তেন।
জ্ঞান তুলে ভ. লেনিন কহিলেন,
তুই নাকি হবিটবি, বেশ তো---হ!
কারে প্রশ্ন করে ইয়াঙ্কি বহর
এঁঠে ফাল পাড়ে বাজারি কহর!
বুঝিলাম, মারকিনি যুক্তি তার
ভূত-রাষ্ট্র নাকি ইয়া পরিবার?
ভাত আর ফলিত ফেনার অঙ্কে
কাহার কথা কয় রে বিশ্বব্যাঙ্কে?
কারে প্রশ্ন করে ইয়াঙ্কি বহর
এঁঠে ফাল পাড়ে বাজারি কহর!
সোনামনি রাগ করিও না, এরি নাম দেশ!
কোন প্রশ্নে কে তুমি উত্তর ছাড়ো না এখন
আজ আবাবিল পাখি ছায়া ফেলে ফিরছে যখন
মনে করো কত কাছাকাছি আছে মানুষের মন
মন কি আসলে মায়া নাকি রক্তাভ বাগান
বেলুনের নিচে বায়ু বার হলে আয়ুমান
আমি লাল হয়ে উঠি গোধূলি সমান
কবে কার রক্তহীন বাংলাদেশের সাথে
একা নহি, পরিবার রাষ্ট্র সাঁতরাতে সাঁতরাতে
তোমার গেরিলা মেঘ আমাকে ঘিরছে রাতে
কখনো সমরখন্দে যাবে কীনা ইতিহাস শোনা
না, না, নৈঃশব্দ্যের নাম শব্দ, জানো কি হৃদয়জানা
বোমা ফেটে শব্দ হয়, অথচ মানুষ মরিলে হয় না
হৃদয় ভাঙছো, ভাঙো---এটা ক্ষমতার রেশ
সোনামনি রাগ করিও না, এরি নাম দেশ!
তিন চিল্লা
০১. চিনা বামুনের পৈতা নাই
আয়নার পেছনে কে?---আব্বা!
আয়নার সামনে কে?---আম্মা!
আমি কহিলেন, ‘আমি বা কোথায়?’
---কাচের ভিততে দেখা যায়!
০২. বেটা ত্রৈলোক্যনাথ
আমি আমি আর আমি
আমার স্বামীর নাম আমি
আমি নামি মোর গর্ভে
আমি উঠি কাল পর্বে
আমার মইধ্যে আমি নাই
আমার বাহিরে আমি
আমির আমিতে তুমি
থামি কে কোথায়?
আমি আর মার
দু’ধার আমার
জপি নাম কার
মানে আর, আমরার
০৩. মতিলালের বাংলা
আরে বাঞ্ছারাম আবেগের বেটা ভূত
কহিলেন মতিলাল, ইহকালে আমি আমারেই পুত!
লালের বাংলা আমি নীল টেনে আনি
সমাজ-নমাজে আমি আমারেই হানি
কহিতে পারি না সহি বেদান্তবাগীশ
গুরু মারা মহাশয় বেদে মারিছেন শিস
আসিলো নিত্য হ য ব র ল ভাগুরী গায়েন
তোবা! তোবা! পড়ঃ কাফ গাফ আয়েন গায়েন
আমি দিক্পাল যাহা শুনি তাহাই রাখিয়া মনে
আওড় লেড়কা বদজাৎ বেতমিজ পশিয়াছি পণে
কী হে তাল মতিলাল আনা ভি হারাম হ্যায়
ভানুমতী বায়ুতে চড়িয়া আদা জল প্যায়
শ্রী চরণে সু
দোজখ পায়ের নিচে
গুরু যায় আগে পিছে
কুঞ্জে এক ভাবে থাকে রাই
বেহেস্তে বহিতে আছে
অর্থ নয় শূন্য গাছে
কাননে কুসুম ফোটে হাই
ভাই ভাই খেলি গুণে
বোন মোর জাগরণে
বল রাম সদা কেন চিৎ
নর দুই তনু ছিঁড়ি
ডিম্ব তার মহাগিরি
নিরবধি জাগিছে অতীত
কহে টিপু বিনোদিনী
স্বরূপ অরূপে আনি
মনে পড়ে চরণের ছায়া
রসলাস্যে রজকিনী
অভিনব বিনাশিনী
গিলে রোজ মরণের মায়া
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।