আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকা টু সাতক্ষীরা (সাতক্ষীরা টু গ্রাম বাড়ী)

আমার মৃত্যু যেন আমার সকল ইচ্ছা পূরণের পর হয়

সিগারেট শেষ। বাসে উঠলাম। বাস ফেরীতে উঠলো। আমার মা আর রুপসী ফেরীতে নামলেন। আমি পিছু নিলাম।

কিছুক্ষন পর তারা বাসে ফিরে এলেন। আমি মায়ের সাথে কথা বলার চেষ্টারত ছিলাম কিন্তু পারলাম না কেনো জানি। চিপস কিনলাম আর একটা কোক কিনলাম। বরাদ্দকৃত শেষ সিগারেট শেষ করে বাসে ফিরলাম। বাসে উঠে দেখি রুপসী আর আমার মা মিলে দুপুরের খাবার খাচ্ছে।

আমার মা সব সময় খাবার সাথে নিয়ে রাখেন বাইরের খাবার তেমন একটা পছন্দ করেন না। আমি সিউর ছিলাম আমার কপালে আর খাবার নেই। বাধ্য হয়ে চিপস খুললাম, কিন্তু আবারো মায়ের বড় বড় চোখ। চিপস রেখে দিলাম। ফেরীর পরে আরো চারঘন্টা বাসে বসে থাকতে হবে।

ওদিকে রুপসী কথার ঝুড়ি বের করে যাচ্ছে। শোনার সাহস পেলাম না। আধা ঘন্টা পর রুপসী ঘুমিয়ে গেলো। আমার মা ইশারা দিলেন, কাছে গেলাম। ভাতের একটা ডিব্বা দিলেন।

নিজের সীটে এসে খাওয়া শুরু করলাম। বুঝা গেলো আমার জন্য ভাত রাখতে গিয়ে আমার মা ঠিক মতো খেতে পারেনি, সাথে আবার ওই রুপসী ডাইনিকেও খাইয়েছে। মাই সুইট মা। রুপসী ঘুম থেকে উঠে আমার দিকে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকাতে লাগলেন। আমি ভয়ে আবার জানালার পাশের সীটে পলায়ন করলাম।

সীটে বসে কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করলাম। বাসে বসে যদি সিগারেট টানা যেতো তাহলে কি মজা হতো, কিন্তু সিস্টেম নাই। কুষ্টিয়া পার হতেই একটু চোখ লেগে আসছিলো। হঠাৎ চিৎকার শুনে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠলাম। ভাবলাম আমি মনে হয় মরে গেছি।

কিন্তু না গাড়ী তো চলছে রাস্তার উপরে। বাসে তাকিয়ে দেখি আমার মা কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। তাড়াতাড়ি গিয়ে দেখি রুপসী ফিট না ঠিক 'মিরগী ব্যারাম' উঠছে। রুপসী চোখ মুখ উল্টে কেমন জানি করছে। পুরা শরীর একদম মিলার মত ঝাকাচ্ছে।

আমার মা কান্নাকাটি করছে। আমি বেকুবের মতো দাড়িয়ে মজা দেখছি। আমার মা হঠাৎ চিৎকার মেরে বললো > এই বোকা তাড়াতাড়ি গাড়ী থামাতে বল! আমি কি করবো কিছু বুঝতে না পেরে সুপারভাইজারকে বললাম > ভাই গাড়ীটা থামান। গাড়ীতে রোগী আছে। আমার মা চোখ রাঙ্গিয়ে তাকালেন।

আমি তাড়াতাড়ি ড্রাইভার কে বললাম ভাই গাড়ীটা থামান। একটা সিরিয়াস সমস্যা। ড্রাইভার গাড়ী সাইড করলেন। ওদিকে আমার মা রুপসীর চোখে মুখে পানি দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। রুপসী পুরা শরীর কাপিয়ে যাচ্ছে।

আমার মা বেশ চিন্তিত। পুরা বাসের লোক নানা রকম ওষুধের কথা বললো, কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। ওদিকে আমি বেশ মজা নিচ্ছি। হঠাৎ মায়ের চিৎকার > এদিকে আয় আমি ভয়ে ভয়ে কাছে আসলাম। মায়ের আবার চিৎকার > ঘরের চাবিটা দে তাড়াতাড়ি।

পকেট থেকে চাবিটা বের করলাম। মা নিয়ে রুপসীর হাতে দিলাম। ও মা একি চাবি পেয়ে কি সুন্দর কাপাকাপি কমিয়ে দিয়েছে। আমার চাবিটার জন্যই কি তাহলে এরকম করলো? আর চাবিটা এমন ভাবে ধরে আছে যেন ওনার বাব দাদার সম্পত্তি। কিছুক্ষন পর উনার হুশ আসলো।

হুশ আসতেই এমন একটা ভাব করলো যে কি হইছে কিছুই জানে না। আমার মা তাকে গালে একটা চুমু দিলো, আহারে নিজের পোলারে কোনো দিন ও দেয়নাই। আবার গাড়ী ছাড়লো। রুপসী কিছুক্ষণ পর আবার কেমন জানি গা ছাড়া দিয়ে উঠলো। আবার বক বক শুরু হয়ে গেলো।

আমার মা আবার আমাকে ডাকলেন কাছে যেতেই সুন্দরী একদম একটা বডিগাড টাইপের ভাব নিলো। মায়ের পিছনের সীটে গিয়ে বসলাম। মা কিছু টাকা দিয়ে বললেন কিছু মিষ্টি কিনতে। মায়ের চোখের ইশারা বুঝে গেছি। আমার মা যখন কোনো বিপদ থেকে উদ্ধার পায় তখন আশপাশের সকলকে মিষ্টি খাওয়ায়।

কেনো আমি জানি না। কখনো প্রশ্ন ও করি নি। সেবার আমার ফুফাতো বোনের মেয়ে হবার পর আমাকে বৃষ্টির মধ্য তিন মাইল পথ পাঠিয়ে মিষ্টি আনিয়েছিলো। সুপারভাইজারকে ডাকলাম। তাকে বললাম গাড়ীটা কি আরেকবার থামানো সম্ভব কিনা।

সে বললো সামনে থেকে তারা তেল নিবে সেখানে থামবে কিছুক্ষন। আমি ও সুযোগে টা নিয়ে নিলাম। তাড়াতাড়ি নেমে মিষ্টি কিনলাম এনে মাকে দিলাম। মা একটা প্যাকেট আমাকে দিয়ে বললো সবাইকে দিতে। আমিও তবারক বিতরনের মতো সবাইকে মিষ্টি দিলাম।

এক লোক প্রশ্ন করলো কিসের মিষ্টি। আমি আস্তে আস্তে বললাম। আমার বউয়ের বাচ্ছা হবে এই সুখবরটা পেলাম মাত্র! লোকটা অবাক হলো। সবাইকে দিয়ে বাকী মিষ্টি আমি গলাদ্ধকরন করেছি। ওদিকে আমার চাচা ফোন করেছে।

গাড়ী ঠিক করে রেখেছে বাড়ী পর্যন্ত যাবার জন্য। আমাদের পৌছাতে আর ৩০ মিনিট লাগবে। মা ডাকলেন আবার। এবার রুপসীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। রুপসী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, একটু লজ্জা পেয়ে মাথাটা নিচু করে রেখেছে।

মায়ের ইশারা পেয়ে আবার নিজের সীটে গিয়ে বসলাম। ওদিকে মা রুপসীকে কিছু মিষ্টির পোটলা ধরিয়ে দিলেন এবং তাকে বাসায় পৌছায় দেবেন। আমার মিজাজ অনেক খারাপ হলো। আর কোনো বিপদ ছাড়া সাতক্ষীরা আসলাম। রুপসীর ব্যাগ ও আমি উঠালাম।

সে আমার মায়ের ফোন নাম্বার নিলো। আমাদের বাড়ীতে আসবে তার পরিবার নিয়ে। (যেনো বিয়ের প্রস্তাব দিবে এমন একটা ভাব)। তাদের বাড়ীতে যেতে হবে বলে খুব করে আম্মাকে ধরলো কিন্তু আম্মা রাজি হলো না কারন বাড়ীতে সবাই অপেক্ষা করছে। রুপসীর বাড়ীতে পৌছালাম।

রুপসীকে নামিয়ে আমরা বাড়ীর পথে রওয়ানা দিলাম। এরমধ্য আমার বডিগাড ঠিক হয়ে গেছে। সেও এসেছে গাড়ীতে। বাড়ী পৌছালাম। সবাই বেশ খোজ খবর নেয়া শুরু করলো।

মা ডেকে চাবি দিতে বললো কিন্তু চাবি তো আমার কাছে নেই ওই রুপসীর কাছে। আমি ভেবেছি মা হয়তো তার কাছ থেকে চাবি নিয়েছে, কিন্তু না রুপসী নিজের চাবি মনে করে সঙ্গেই নিয়ে গেছে। মা চিৎকার দিয়ে বললো এখনি চাবি নিয়ে আসতে। আবার গাড়ীতে চেপে বসলাম চাবি আনতে....শান্তি নাই * বাড়ীতে আমার কি অবস্থা হয়েছিলো তা নাহয় পরে শুইনেন....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.