আমার মৃত্যু যেন আমার সকল ইচ্ছা পূরণের পর হয়
আমার মায়ের সাথে আমার ঝগড়া সব সময়ই হয়। উনি যেমন কিছুতে না করলে তা হ্যা তে বদলায় না তেমনি আমিও। তবে আমি বেশি রাগ করলে আবার নিজেই ঠান্ডা হয়ে যাই। কিন্তু আমার মা কোন সময়ই না। তিনি সবসময় অনড়।
২০০৪ সালে আমার দাদার মৃত্যুবার্ষীকিতে মা বললেন সাতক্ষীরা যাবে। তিনি আমার দাদা কে অনেক ভালোবাসতেন, তেমনি দাদাও। বিপত্তি হলো আমাকে নিয়ে। সাতক্ষীরা যাওয়া ছিলো আমার জন্য নরক। আমি একটা জোয়ান ছেলে সকল মুরব্বীর মাঝে কিভাবে সময় কাটাই? তার পর আমার সাথে সব সময় একটা করে বডিগাড থাকতো( আমার কোনো ফুফাতো ভাই)।
মা যখন যাবেন বলেছেন তখন আমি অপারগতা জানাই। তিনি বললেন আমাকে যেতেই হবে! কাল সকালের টিকেট করা হয়েছে। আমার মাথায় আগুন জ্বলছিলো। সকাল ৫টায় উঠে নামাজ পড়তে হবে, তার পর গোসল করতে হবে, নাস্তা করা আধা ঘন্টা আগে গিয়ে বাস স্টপে বসে থাকা (আমার মা সব সময় এই নীতি মানে)। রাগ করে বললাম আমি যাবো না।
তিনি কোনো কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমে ঘুমাতে চলে গেলেন। ওদিকে সারা রাত আমি মাথা গরম করে দাদা বাড়ীর চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করলাম। হঠাৎ স্বপ্ন আসলো দাদা বাড়ী নিয়ে আমার মা আমাকে কি করবেন...
প্রতিদিন সকালে কোরআন শিক্ষা দাদীর কাছে। নাস্তা করে বাজার করতে যাওয়া। আবার কিছু খাওয়া দাওয়া (যা আমি একদম পছন্দ করি না)।
দুপুরে গোসল করে নামাজ আদায় করা তার পর ঘুম! না ঘুমালে তিনি বেশ রাগ করেন, বিকেলে আবার নাস্তা, তার পর পাড়ার যত মুরব্বীদের ঘর আছে সেখানে গিয়ে আমার মায়ের আড্ডা, আর আমি সেখানে একটি সুবোধ বালকের মতো হয়ত নানা কথায় হ্যা হু করতেছি। রাতে নামাজ শেষ করে খাবার এবং ঘুমাতে যাবার প্রস্তুতি, দেরি করে ঘুমালে আমার রক্ষা নাই। আর আমার সাথের ওই বডির্গাড সব সময় আমার সাথে ঘুরঘুর করতো আর মাকে আমার কোনো উল্টা পাল্টা আচরনের খবর দিতো, যেমন আমি পথে ওমুককে সালাম দেয় নাই বা হুন্ডা চালাইছি জোরে, বা সকালের বরাদ্দ সিগারেট(২টা) থেকে বেশি টানছি ইত্যাদি ইত্যাদি। ঘুম/স্বপ্ন ভাঙ্গতেই দেখি ৬:৩০। মায়ের ঘরে গিয়ে দেখি উনি নাই।
তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে বাস স্টপে গিয়ে দেখি উনি নাই তার পর বাসে চেক করে দেখি উনি বসে আছে। আমাকে দেখে বলে তোমার টিকেট করা হয়নি, যাও টিকেট করো। পাল্টা আমি বললাম তুমি না টিকেট করেছো? মায়ের জবাব টিকেট ফেরত দিয়েছি! আমি বাস থেকে নেমে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে টিকেট করলাম। রাগে ক্ষোভে নিজের চুল টানতে ইচ্ছা করছে...
যথাসময়ে বাস ছাড়লো। আমার মায়ের পছন্দের সীট হলো ৩ এ বা বি।
আমি আহাম্মক সীট পেলাম ৫ সি. তে। মায়ের সাথে বসা হলো না। জানি মা খাবার এনেছে কিন্তু আমার ভাগ্য তা নেই। একটু যেতেই বাস থামলো। কোন এক যাত্রী বাকী আছে।
এক রুপসী তরুনী যাত্রী বাসে উঠলেন। মনে মনে ভাবছিলাম আমার সাথেই হয়ত বসবে। কিন্তু না গিয়ে বসলো আমার মায়ের সাথে। তাহলে কি কাউন্টারের লোক আমাকে মিথ্যা বলেছে যে মায়ের পাশের সীটের টিকেট টা বিক্রি হয়েছে আমার আসার আগেই! তাহলে এই তরুনী কিভাবে পরে এসে টিকেট পেলো। একবার ভাবলাম ওই তরুনীকে বলবো আপনি আমার সীটে বসেন আর আমি আপনার সীটে।
কিন্তু ভাবলাম না থাক...
বাস ছাড়লো। এর মাঝেই তরুনীর সাথে আমার মায়ের আপন একটা সর্ম্পক গড়ে উঠেছে। বাস ছাড়ার সাথে সাথেই আমার মা আমার দিকে তাকালেন, বুঝে গেলাম দোয়া দরুদ পড়তে বলছে। খিদার চোটে ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি আশুলিয়া।
পাশের সীটে তাকিয়ে দেখি প্যাকেট বুঝলাম মা দিয়েছে খাবার । তাড়াতাড়ি খুলে খেতে শুরু করলাম। খাবারের পরে পানি খুজতে লাগলাম সুপারভাইজার কে বললাম। সুপারভাইজার পানি দিলো কিন্তু মায়ের চোখ রাঙ্গানো দেখে পানি পানের সাহস পেলাম না। সুপারভাইজার কে ডেকে আমাকে পানি দিলেন।
পানি পান করে তৃপ্ত হলাম। ওদিকে সুন্দরী আমার মায়ের সাথে নানা কথায় মশগুল। তাদের দুজনের হাসির শব্দ ও পাচ্ছিলাম মাঝে মাঝে। কি এমন কথা হচ্ছিল শুনার জন্য সীট থেকে একটু নড়ে বসলাম। কথোপকথন এমন ছিলো
রুপসী: আচ্ছা আন্টি এই লোকটা এমন করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে কেনো?
আমার মা: তাই নাকি! আচ্ছা আসো আমরা সীট বদল করে নেই।
রুপসী: না আন্টি থাক। দেখেন লোকটাকে কেমন বিশ্রী দেখাচ্ছে!
আমার মা: হ্যা হ্যা মনে হচ্ছে নিজের প্রতি খেয়াল করাটাই শিখেনি!
(আমার পরনে একটা কুচকানো শার্ট, মাথা আউলা ঝাউলা, জুতায় ছিলো ময়লা)
রুপসী: বাদ দেন তো আন্টি! কোথাকার কে আমাদের কি। কিন্তু আরেকবার এদিকে তাকালে একদম কষে একটা থাপ্পর লাগাবো!
আমার মা: হা হা
ভয়ে আমি জানালার পাশের সীটে গিয়া লুকালাম। আমার মায়ের সাথে মিলে আমার ইজ্জতের ফালুদা করছে। ফেরীর কাছাকাছি চলে এসেছি।
বাস থেকে নেমে বরাদ্দকৃত ২টা সিগারেটের একটা ধরালাম.....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।