পরাজিত হতে হতে আমি উঠে দাড়িয়েছি এবার ফিরে যাবো না খালি হাতে, স্তব্ধতা আর সৌন্দর্যের পায়ে পায়ে এগিয়ে যাই যে কবি সে কখনো খালি হাতে ফিরে যেতে পারে না ।
বাংলাদেশে (তত্ কালীন পুর্ব পাকিস্তান ) প্রথম পাক সেনাবাহিনীর কমান্ডো ব্যাটেলিয়নের কর্মকর্তা হায়দার কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে পালিয়ে ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধে যোগদেন এবং শুরু থেকেই ২নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ এর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে মেলাঘরে অবস্থিত প্রশিক্ষন ক্যাম্পে সকল মুক্তিযুদ্ধাকে কমান্ডো বিস্ফোরক ও গেরিলা ট্রেনিংসহ করাতেন । কিশোরগঞ্জ -ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর তারের ঘাটপুল ও মুসল্লি রেলপুল, ঢাকা-চট্রগ্রামের রাস্তায় ফেনিতে অবস্থিত বড়পুল ধবংসসহ একাধিক অপারেশনের নেতৃত্ব দেন মেজর হায়দার । অক্টোবরের ৭ তারিকে খালেদ নিয়মিত ব্রিগেড কে' ফোর্সের কমান্ড গ্রহন করলে তিনি সেক্টর অধিনায়কত্বলাভ করেন । ১৬ ই ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত ছিলেন ।
ঐদিন প্রথম ঢাকা বেতারে ও টিভি থেকে ঘোষনাপাঠ করেন -"আমি মেজর হায়দার বলছি -মুক্তিবাহিনীর প্রতি নির্দেশ "
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে তাকে বীর উত্ম উপাধীতে ভুষিত করেন । স্বাধীন দেশে মেজর হায়দার কুমিল্লা সেনানিবাসে ১৩ ইস্টবেঙ্গল প্রতিষ্ঠা করেন । ১৯৭৪ সালে তিনি লে কর্নেল পদে উন্নীত হন ও চট্রগ্রাম সেনানিবাসে ৮ম বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন ।
'৭৫ সালের নভেম্বরে পিতার জরুরী টেলিগ্রাম পেয়ে ঢাকায় আসেন এবং যুদ্ধকালীন সহযোদ্ধা আরেক কিংবদন্তী বীরসেনা জেনারেল খালেদ মোশাররফের সাথে সাক্ষাত করতে যান ।
'৭৫ সালের ৭ ই নভেম্বর ভোরে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অবস্থানরত কর্নেল নওয়াজিশ ( '৮১ সালে জিয়া হত্যায় জড়িত সন্দেহে ফাসি দেয়া হয় ) এর নেতৃত্বাধীন ১০ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার মেসে নাস্তা করার সময় মেজর জলিল আর মেজর আসাদের নেতৃত্বে খালেদ -হুদাকে হত্যার পর কিল ঘুষি লাথি মারতে মারতে দু'তলা থেকে নিচে নামিয়ে এনে গুলি করে হত্যা করা হয় বীর উত্তম লে. কর্নেল এ টি এম হায়দারকে ।
১১ ই নভেম্বর ১৯৭৫ রোজ মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের সোলাকিয়া গ্রামে মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয় মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তী বীরসেনানী লে কর্নেল এ টি এম হায়দার বীর উত্তমকে ।
গত ৭ তারিখে মিডিয়া আর অন্তর্জালে সিপাহি বিপ্লব নিয়ে নানা লেখা দেখলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না বিনা বিচারে খালেদ-হায়দার আর হুদার হত্যার কথা ।
চোঁখের সামনে ভেসে উঠল উপরের ছবি ( Bangladesh a Brutal Birth ) যেখানে জেনারেল অরোরা আর নিয়াজির সাথে অপুর্ব ভঙ্গীতে কাঁধে চাইনিজ এস এম জি নিয়ে পাকবাহিনীর আত্মসমর্পন টেবিলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন মেজর হায়দার ।
একই সাথে কলিম শরাফির কন্ঠে আমার এক প্রিয় রবীন্দ্র সঙ্গীত কানে বেজে উঠল "তুমি কি কেবলই ছবি /শুধু পটে আঁকা ............তুমি কি তাদের মত সত্য নও ?"
ছবি শুধু ছবি নয় , ছবি কথা বলে
হায়দারের এই ছবিও শুধু ছবি নয় -জীবন্ত দলিল
ইতিহাস থেকে তাকে মুছে ফেলে এমন সাধ্য আছে কোন শালার ?
Ref:
১। স্বাধীনতা সংগ্রামের দলিল পত্র ৯ম-১১তম খন্ড
২।
তিনটি সেনা অভ্যু্থান , লে ক.এম এ হামিদ
৩। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বরূপ , মেজর রফিকুল ইসলাম পি এস সি
৪। আমাদের সংগ্রাম চলবেই , অপরাজেয় সংঘ
৫। লে ক গাফফার বীরউত্তমের ইন্টারভিউ , ভোরের কাগজ ৬ নভে ২০০৬
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।