মানুষ নিদ্রিত এবং মৃত্যুর পরপরই সে জেগে উঠবে।
আমি জাতীয় রাজনীতি নিয়ে কোনদিন লিখিনি। এখনও লিখছি না। কারণ আমি নিশ্চিতভাবেই জানি যে আমাদের রাজনীতি আমাদের হাতে থাকে না, এখনও নাই। কোনকালেও ছিল না।
আমার আগ্রহ আন্তর্জাতিক রাজনীতি। শুধু কমেন্টস্ দিয়ে জাতীয় রাজনীতির ব্যাপারে আমার প্রতিক্রিয়া জানাই। মতামত জানাই।
বর্তমান লেখাটি আবদুল কাদের সিদ্দিকীর লেখা। সংগৃহীত।
অনেকের সাথে এ চিন্তা মিলবে। আমি নিজেও ওনার চিন্তার সাথে অনেকটা মিলে যাওয়ায় এখানে সবার সাথে শেয়ার করলাম। ধন্যবাদ।
================================
ভারতের সর্বনাশা খেলায়
বাংলাদেশ তছনছ
ভারত-ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’
বাংলাদেশের
রাজনীতিকে নানাভাবে প্রভাবিত
করছে এবং তা সুদীর্ঘকাল থেকেই- কথাটা বহুল
প্রচলিত। এটা অসংলগ্নও নয়।
কিন্তু, ইতিপূর্বে এ
নিয়ে যা-ই কিছু বলা হতো প্রায় সবই বিভিন্ন
অপ্রকাশিত সূত্র অথবা ধারনার ওপর
ভিত্তি করে। কিন্তু এবার
হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছেন জাতীয়
পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ,
যাকে বরাবরই
ভারতপন্থি নেতা বলে আখ্যায়িত করা হতো।
এরশাদের তর তর
করে উপরে উঠে গিয়ে সেনাপ্রধান হওয়া,
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আরোহণ, দীর্ঘকাল ক্ষমতায়
টিকে থাকা- সবই ধরা হতো ভারতের প্রচ্ছন্ন
আশীর্বাদ-সমর্থনে ঘটেছে। ক্ষমতাচ্যূত
হওয়া এবং জেল থেকে বের হবার পর এরশাদের
সঙ্গে বাংলাদেশে নিয়োজিত ভারতীয়
গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের
কর্মকর্তা এবং ভারতীয় হাইকমিশনারের
বরাবরই নিয়মিত যোগাযোগ, দেখা-
সাক্ষাত, দহরম-মহরম সম্পর্ক গোপন কিছু নয়। শুধু
তাই নয়, এরশাদের সম্পর্কে তার দলের
নেতারাই আড়ালে-
আবডালে এটা বলে বেড়াতেন যে,
তিনি ভারতের পেইড রাজনীতিক।
অথচ এরশাদ
ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর
প্রকাশ্যে বলেছেন, পররাষ্ট্র সচিব
সুজাতা সিং তাকে বিএনপি-জামায়াত বাদ
দিয়ে আওয়ামী লীগের একদলীয়
নির্বাচনে যাবার জন্য সরাসরি চাপ
দিয়েছেন। তার মানে এটা প্রমাণ হলো,
ভারত বাংলাদেশের
রাজনীতি নিয়ে খেলছে। আর সেই
সর্বনাশা খেলার কারণেই বাংলাদেশ আজ
বিপর্যস্ত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাথে কাদের সিদ্দিকী।
তবে রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের
এই খেলা সবই ভুল।
এতে জয়ী হওয়ার কোনোই
সম্ভাবনা নেই। ভুল খেলার কারণেই ভারত এবার
হেরে যাচ্ছে এবং এর জের
হিসেবে বাংলাদেশও চরম বিপর্যস্ত অবস্থায়
পড়ছে। বিএনপি নেত্রী বেগম
খালেদা জিয়ার ২০১২ সালের ২৮ অক্টোবর-৩
নভেম্বর ভারত সফরটি হয়েছিলো বেশ
সৌহার্দ্যপূর্ণ। তার সফরকালে সমঝোতার
একটা রূপরেখাও তৈরি হয়েছিলো। সেই সফর
থেকে আসার পর বিএনপি’র মধ্যে বিজয়
এবং পরবর্তীতে তারাই বাংলাদেশের
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হচ্ছে এমন
একটা ভাবও ফুটে উঠেছিলো।
ভারতীয়
কর্মকর্তারা বুঝতে পেরেছিলেন,
বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের
হাওয়া এসেছে। যে জনসমর্থন
নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়
এসেছিলো তাতে ধস নেমেছে। তাই
তারা বিএনপি’র সঙ্গে সম্পর্কটা পোক্ত
করে নিতে চেয়েছিলো। অথচ ভারত সেই
নীতিতে অটল থাকতে পারেনি।
সোনিয়া গান্ধীর মাধ্যমে শেখ
হাসিনা ভারত সরকারের
নীতিকে রাতারাতি পাল্টে দেন।
ভারত
বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়
এবং আওয়ামী লীগকে সমর্থন জানায়।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশাল
এলাকাজুড়ে সীমান্ত। এটা বাংলাদেশের
জন্য যেমন সমস্যা, তেমনি সমস্যা ভারতের জন্যও।
অবশ্য ভারতের জন্য এটা বড়ো সুবিধাও।
বাংলাদেশের বিশাল বাজার ভারতের
করায়ত্বে।
সমস্যাটা শুধুমাত্র নিজেদের
অভ্যন্তরীণ গ্রুপগুলোকে নিয়ন্ত্রণ নিয়েই।
এমনিতেই ভারতকে পাকিস্তান, চীন,
শ্রীলংকা বর্ডার নিয়ে অনেক
টেনশনে থাকতে হয়।
তারমধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে এই বিশাল
সীমান্ত যদি দিনরাত
কড়াভাবে পাহারা দিতে হয়
তাহলে সেটা হবে অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই
বরাবরই তারা বাংলাদেশে নিজেদের অনুগত
সরকার চায়, যাতে একদিকে বর্ডার
চিন্তা করতে না হয়, অন্যদিকে ব্যবসা-
বাণিজ্যে একচেটিয়া দখলদারিত্ব বজায়
রাখা যায়।
ভারতীয় নেতাদের মতে, বিগত ৫ বছর
তারা নিশ্চিন্তে ছিলেন।
সীমান্ত
বা ব্যবসা-বাণিজ্য
নিয়ে কোনো টেনশনে পড়তে হয়নি তাদের।
ট্রানজিট দেওয়া, ভারতীয় বিদ্রোহীদের
দমনে সাহায্য করা থেকে শুরু করে ভারতের
স্বার্থে যখন যা প্রয়োজন সবই
করেছে বাংলাদেশ সরকার। আর সেই কারণেই
তারা যে কোনো মূল্যে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা
বহাল রাখতে আগ্রহী। ভারতীয় পত্র-পত্রিকাগুলো
ইতিপূর্বে বিভিন্ন প্রতিবেদনে এমনই আভাস
দিয়েছে। কিন্তু, আওয়ামী লীগ ভারত সমর্থন
করলে কি হবে, এ দেশের জনগণ
থেকে আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যেই বিচ্ছিন্ন
হয়ে পড়েছে।
প্রথমে ভারত বুঝতে পারেনি।
কিন্তু এখন বুঝলেও তা কোনো কাজে আসছে না।
মূলত, ভারতের একচেটিয়া সমর্থন পাবার
কারণেই আওয়ামী লীগ গত এক বছর অত্যন্ত
বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলো। বিরোধীদলের
ওপর দমন-পীড়ন, দুর্নীতি-লুটপাট এসব
করেছে অত্যন্ত স্বেচ্ছাচারী কায়দায়। মন্ত্রী-
এমপিদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতা-
কর্মীরাও সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি,
দখলবাজিতে অত্যন্ত
বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলো।
জনমতের
কোনোই তোয়াক্কা করেনি তারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে এমন
একটা ভাব তৈরি হয়েছিলো, তারাই আবার
ক্ষমতায় ফিরে আসছে। ভারত যেহেতু
সঙ্গে আছে কাজেই অন্য কিছুর তোয়াক্কা করার
প্রয়োজন নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠতার
জোরে সংবিধান
তো পাল্টিয়ে নেয়া হয়েছেই,
সূতরাং ক্ষমতায় আবার ফিরে আসাটা কেউ
ঠেকাতে পারবে না। ক্ষমতায়
থেকে নির্বাচন করে ক্ষমতায় ফিরে আসার
ব্যবস্থা করা হবে-
এতে ঝুটঝামেলা যা আসবে ভারতই সামলাবে।
কাজেই আওয়ামী লীগকে আর পায় কে?
সেভাবেই এরা সরকার চালিয়েছেন এবং এ
কারণেই আওয়ামী লীগ আজ বাঘের
পিঠে চড়ে বসেছে। সেখান থেকে নামার পথ
পাচ্ছে না, এ অভিমত রাজনৈতিক
বিশ্লেষকদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ভারত যদি ওইসময় এমন
অন্ধভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন
না করতো অথবা আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র
ভারতের সমর্থনের ওপর নির্ভর না করতো,
তাদের বিরোধীদলে যেতে হতে পারে,
নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায়
আসতে পারে- এমন বিষয়গুলো মাথায়
থাকতো তাহলে তারা আরো সংযতভাবে চলত
সেক্ষেত্রে এখন বিরোধীদলের
সঙ্গে সমঝোতা বা ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন
করতে গিয়ে তাদের কুন্ঠাবোধ
করতে হতো না। এখন পরিস্থিতি এমন
দাঁড়িয়েছে যে, আওয়ামী লীগ
ক্ষমতা ছাড়তে পারছে না নিরাপত্তার
অভাবে, অন্যদিকে ক্ষমতায় ফিরে আসা দূরের
কথা এই মেয়াদ শেষ
করতে পারবে কিনা তা নিয়েও
অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আর
সমঝোতা তো হচ্ছেই না।
যে কোনো রকমের
সমঝোতায় যেতে হলে প্রধানমন্ত্রীকে
ক্ষমতা থেকে সরতে হবে। সেটা এ মুহূর্তে খুবই
বিপজ্জনক আওয়ামী লীগের জন্য। কারণ,
প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা থেকে সরলেই বিএনপি-
জামায়াত বিজয় মিছিল বের করবে দেশের
সর্বত্র, এমনকি অফিস-আদালতেও। সেই বিজয়
মিছিল অনেক ক্ষেত্রেই ভয়ংকর রূপ ধারণ
করবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ওই
পরিস্থিতিতে প্রশাসনও ইউ টার্ন
নেবে এবং এতে আওয়ামী লীগ নেতা-
কর্মীরা আত্মরক্ষার শেষ সম্বলটুকুও পাবে না।
এমন ঘটনা আঁতকে উঠার মতোই।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি’র
পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের নিরাপদ
প্রস্থানের নিশ্চয়তা দিতে প্রস্তুতি রয়েছে।
তারা জাতিসংঘ প্রতিনিধিকেও এমন আভাস
দিয়েছেন। কিন্তু, জামায়াতকে কে নিয়ন্ত্রণ
করবে ওই পরিস্থিতিতে? জামায়াত
কী বিএনপি’র কথায় কান দেবে?
যে প্রতিশোধের নেশা তাদের
মধ্যে জ্বলছে তা কী পূরণ করবে না?
যতোটা জানা গেছে, জামায়াতের
সঙ্গে কোনোরকমের একটা নেগোসিয়েশন
করার জন্য আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে অনেক
চেষ্টা চালিয়েছে। এমনকি ভারতের
মধ্যস্থতায়ও এ চেষ্টা চলেছে মাঝে অনেকদিন
ধরে।
তবে কোনোই সুরাহা হয়নি। জামায়াত
সেইসব সমঝোতার প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। আর
তখন থেকেই সরকার বিএনপি-জামায়াতকে
বাদ রেখে নির্বাচনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
নেয়। ভারতও আওয়ামী লীগকে এমন পথে এগুনোর
গ্রিন সিগন্যাল দেয়।
এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা বানানোর
পরিকল্পনা করা হয়।
এতে ভারতের
সহযোগিতা নেয়া হয়।
বিএনপি-জামায়াতকে
বাইরে রেখে নির্বাচন করার এ
পরিকল্পনা বাস্তবায়ন
করতে গেলে বাধা আসবে, হরতাল-অবরোধ হবে,
পশ্চিমারা এ নিয়ে কথা বলবে- এসবই
আওয়ামী লীগের মাথায় আছে। ভারতও
এটা জানতো। কিন্তু, এসবের
তোয়াক্কা করা হয়নি। আর এ
কারণে গোটা বাংলাদেশ আজ তছনছ
হয়ে গেছে।
আরো যে কী অবস্থার
দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে সবাই আশংকিত।
সমাপ্ত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।