মানবতা ............থেকে মানবিকতা.........
দুর্নীতি বিরোধী ক্রুসেড ঘোষণা করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করে এ সরকার ক্ষমতায় এসেছিল। বিগত ২২/২৩ মাসে এ দুটি ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য কতটুকু তা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন। আর একটি নির্বাচনের মাধ্যমে যারাই ক্ষমতায় আসুক, সেটা হবে রাজনৈতিক সরকার। সুতরাং দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে কয়েকশ' রাজনীতিকের ওপর সরকার মধ্যযুগীয় ফ্যাসিবাদী কায়দায় যে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়ে তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করার অভিযান চালিয়েছিল, সেই রাজনীতিকদেরকেই তারা দেশ শাসনের উপযুক্ত বলে নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছেন। তাহলে বন্য শূকরের মতো রাজনীতির সাজানো বাগান পয়মাল করার কি প্রয়োজন ছিল? যারা এই বন্য প্রতিহিংসায় নেতৃত্ব দিয়ে সম্ভাবনাময় অনেক রাজনীতিককে শারীরিকভাবে অর্ধমৃত বা পঙ্গু করে ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ২২/২৩ মাসে অনেক অভিযোগ জমা হয়েছে।
একটা প্রবাদ আছে, ‘যারে যে নিন্দে তারে সে পিন্দে। ' সেনাপ্রধান বলেছিলেন, অতীতের রাজনীতিকদের কোনই সাফল্য নেই। দুর্নীতি, কলহ-কোন্দল, সংঘাত ও ব্যর্থতার ইতিহাস ছাড়া ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত যদি আর কোন অর্জন না থাকে, তাহলে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ বা এমার্জিং টাইগার হবার সম্ভাবনা জাগালো কিভাবে? নিরঙ্কুশ সফলতা বা চূড়ান্ত ব্যর্থতা বলে কিছু নেই। ইতিহাসে যার যা প্রাপ্য তা দিতে হবে। অন্যথায় ইতিহাসই অকৃতজ্ঞদের কঠোর প্রতিদানে মূল্যায়ন করে।
রাজনীতির বিকল্প হচ্ছে রাজনীতি। সেটা সেনাশাসন বা পরাশক্তির আশ্রিত সুশীল বা বিদেশী উচ্ছিষ্ট পুঁজির পালিত এনজিও-কূলাক নয়। দুর্ভাগ্য, আমাদের জাতীয় সেনাবাহিনীও গ্লোবালাইজেশনের পাঁকে বাঁধা পড়েছে। গ্লোবাল পাওয়ার ও তাদের রক্ষকরা বাংলাদেশের মতো তৃতীয় দেশের সেনাবাহিনীকে তাদের ভাড়াটে এনজিও কিংবা বেনিফিসিয়ারি খাতক হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। এই প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যেমন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, তেমনি তারা মার্কিন বশংবদ ও ‘ওয়ার অন টেরর'-এর পার্টনার হয়ে দেশকে গৃহযুদ্ধের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সে দেশের জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবার পরও সেখানে রাজনৈতিক স্খিতি, সাংবিধানিক সংহতি এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠেনি।
স্বয়ং দুর্নীতি দমন কমিশনের ‘সব্যসাচী' চেয়ারম্যান এখন নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। জনগণ এসব দেখে আঙ্গুল তুলে বলতে শুরু করেছে : ‘রাজা তোর পিরান কই?' দুদকের দুই সদস্য দুদক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত বা বিচার করার সামর্থ্য রাখে না বিধায় বিষয়টি তারা সরকারের নীতি নির্ধারকদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু যিনি দুদকের কাছে বিচার চাইলেন, তার প্রাপ্তি কি? দুদক সাংবিধানিকভাবে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান।
যে কোন প্রতিষ্ঠান বা তার প্রধানের কার্যকারিতা ও স্বচ্ছতা নির্ভর করে সুস্পষ্ট নৈতিক মানদণ্ডের ওপর। বিচারিক প্রক্রিয়ায় একজন বিচারকের প্রতি বাদী-বিবাদী যে কোন পক্ষের অনাস্খা থাকলে ঐ বিচারকের সংশ্লিষ্ট বিচার প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকার নৈতিক অধিকার থাকে না। দুদক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ উথাপিত হবার সাথে সাথে তার চেয়ার ছেড়ে দিয়ে তদন্ত প্রক্রিয়াকে অবাধ ও স্বচ্ছ করাই ছিল নৈতিকতার দাবি। কিন্তু তিনি তা না করে সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজের বিরুদ্ধে উথাপিত অভিযোগের নিজেই বিচারক হয়ে একতরফা রায় দিয়ে গদি আঁকড়ে থাকাকেই পছন্দ করলেন। দুদক চেয়ারম্যান স্বপদে অধিষ্ঠিত থাকা পর্যন্ত তার অধস্তনরা তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার তদন্ত করতে গেলে সঙ্গতভাবেই বিব্রত ও বাধাগ্রস্ত হবেন।
এ কারণে তারা মাহমুদুর রহমানের অভিযোগটি গ্রহণ করেও তা সরকারের কাছে ডাইভার্ট করে দিয়েছেন। সরকার হয়তো বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য পাঠাবেন। শেষ পর্যন্ত আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতায় পড়ে বিষয়টি তামাদি হয়ে যাবার আশংকা করা হচ্ছে। এভাবেই বিচারিক বৈষম্যের যাঁতাকলে পড়ে বিচারের বাণী নীরবে নির্ভৃতে কাঁদতে থাকবে। ক্ষমতাবান-অভিজাতদের জন্য আইন অকার্যকর।
দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে দেশবাসীকে জানিয়েছে যে, সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার জ্ঞাত ও প্রদর্শিত আয়বহির্ভূত অন্য কোন উপার্জন ও সহায়-সম্পদের হদিস পায়নি। এমনকি সর্বশেষ চাঁদাবাজি মামলার অভিযোগের সাথে শেখ হাসিনার কোন সংশ্রবেরও পুলিশী তদন্তে প্রমাণ হয়নি। ফলে ঐ মামলা থেকে শেখ হাসিনাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। যদিও এ ধরনের চাঁদাবাজির মামলায় শেখ হাসিনার শাস্তি এড়ানো সম্ভব হবে না, এমন প্রচারণায় শংকিত হয়ে শেখ হাসিনা ‘উন্নত' চিকিৎসার নামে ৬ মাসের জন্য বিদেশে গিয়ে নিরাপত্তা খুঁজতে বাধ্য হয়েছেন। তার দলের সংস্কারবাদী নেতারা শেখ হাসিনার আসন শূন্য রেখেই সরকারের সাথে পেছন দরজার আপস-আঁতাতে ক্ষমতায় যাবার নীলনকশায় শামিল হয়েছিলেন।
বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা, দু'জনই জনগণের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতি-রাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদেরকে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণের আগেই অবমাননাকরভাবে সাধারণ অপরাধীদের মতো গ্রেফতার করে বিশেষ কারগারে বন্দী করে রাখার নামে হেনস্তা করা হয়। মামলাগুলো জামিনযোগ্য ধারায় হলেও তারা জামিন পাননি। আদালতে টানা-হেঁচড়া করে দুই নেত্রীকে অপদস্খ করাকে সরকার তাদের সুশাসন প্রতিষ্ঠার শর্ত বলে মনে করেছেন। এসব করে তারা গর্বিত হয়েছেন, পরিতৃপ্ত হয়েছেন।
সুশীলরা সরকারকে উস্কিয়েছে, বাহবা দিয়েছে, সরকার পুলকিত হয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির প্রচারণা চালানো হলো। কিন্তু দেশে-বিদেশে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও সরকার তা প্রমাণ করতে পারল না। সরকার ও সরকারের পেছনের ড্রাইভিং ফোর্সকে তাহলে কারা বিপথগামী করলো? দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের নামে রাজনীতি ধ্বংস ও ‘মাইনাস-টু'- তত্ত্ব বাস্তবায়ন করে রাজনীতির ভাগাড়ের উচ্ছিষ্টভোগীদের নিয়ে ক্ষমতার নয়া সমীকরণে সরকারের নীতিনির্ধারকরা অনেক পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু রাজনীতিকদের কাছেই তাদের ফিরে আসতে হয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, তিনি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না। সুতরাং ১/১১ এর পটপরিবর্তনের সুবাদে যারা দুদিনের বাদশাহীর দাপট দেখিয়েছেন, চামচিকা হয়ে খাদে পড়া হাতিকে উত্যক্ত ও নিগৃহীত করেছেন, সেই সব অর্বাচীনদের এখন কাউন্ট ডাউন করার পালা। তবে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে দেশকে পেছনে নেবার কোন সুযোগ নেই। অতীত ভুলে জাতীয় ঐক্য নির্মাণ করাই সময়ের দাবী।
দি ইকোনমিস্ট' পত্রিকা তাদের সর্বশেষ সংখ্যায় ‘গণতন্ত্রের একটি সুন্দর দিক' শীর্ষক লেখায় লিখেছে : “২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারী বাংলাদেশের জেনারেলগণ বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিনের কাছে যান এবং তাকে সাধারণ নির্র্বাচন বাতিল, জরুরি অবস্খা ঘোষণা এবং একটি টেকনোক্র্যাট সরকার নিয়োগে বাধ্য করেন।
অবশেষে গত ৩ নবেম্বর প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে প্রত্যাবর্তনের একটি নির্দেশে স্বাক্ষর করেছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক প্রচারনা ও গণমাধ্যমের ওপর আরোপিত বিধি নিষেধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। মনে হচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটিতে দীর্ঘস্খায়ী জরুরি অবস্খার অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
কিন্তু সেটা কবে? দি ইকোনমিস্ট'-ও লিখেছে: “বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের প্রতি-পক্ষপাতিত্বের জন্য নির্বাচন কমিশনকে অভিযুক্ত করেছেন এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেছেন। মনে হচ্ছে, শেখ হাসিনা পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হলে কিংবা অন্তত: তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে সেনাবাহিনী স্বস্তি পাবে।
২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার শিকার হওয়ায় শেখ হাসিনা হয়তো ভাবতে পারেন যে, একমাত্র সেনাবাহিনীই তাকে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। সেনাবাহিনী জরুরি অবস্খার বৈধতা দান এবং সম্ভাব্য মামলা থেকে তাদের ইনডেমনিটি চায়। কোন ঘোষণা না দিয়ে আওয়ামী লীগ এ ছাড় দিতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে। ”
লগি-বৈঠার সন্ত্রাস করে প্রকাশ্য দিবালোকে রাজধানী ঢাকার জনারণ্যে পিটিয়ে মানুষ হত্যার তাণ্ডব সৃষ্টি, বঙ্গভবন অবরোধ করে রাষ্ট্রপতির পানি-অক্সিজেন-বিদ্যুৎ ব করার হুমকি দানকারী আওয়ামী লীগ সেনাবাহিনীর নিস্ক্রিয়তা সম্পর্কে সন্দেহমুক্ত না হয়ে এতবড়ো নৈরাজ্যবাদী কর্মসূচী নেয়নি, তা যে কোন সাধারণ মানুষও বোঝেন। এমনকি ‘হাওয়া ভবন' অবরোধ এবং আবদুল জলিলের সরকার পতনের ট্রাম্প কার্ড খেলার সময়ও তারা নানা সেনসেটিভ মহলের আশীর্বাদধন্য ছিল।
বিশেষ মহলের সমর্থন না থাকলে আওয়ামী লীগ নির্বাচন ভণ্ডুল করার দানবীয় সন্ত্রাস চালানোর সাহস পেতো না। ২৮ অক্টোবর স্মরণকালের নির্মম গণহত্যা ও চরম নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য আওয়ামী লীগকে ‘বিবেকের প্রহরী' বর্তমান কেয়ার টেকার সরকারের কাছে কোন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হয়নি। অর্থাৎ চূড়ান্ত বিচারে ১/১১-এর জরুরি অবস্খা জারি এবং রাষ্ট্রপতির অধীনস্ত কেয়ার টেকার সরকারের পদত্যাগের জন্য পটভূমি তৈরির নীল নকশায়ই আওয়ামী লীগ-মহাজোটের সন্ত্রাসী রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে। যে কারণে ২৮ অক্টোবরের গণহত্যার তাণ্ডব নিয়ে সরকার কোন উচ্চবাচ্য করেনি। বরং ২৮ অক্টোবরে পুলিশকে নীরব দর্শকের ভূমিকায় রাখার কৃতিত্ব প্রদর্শনের জন্য সংশ্লিষ্ট শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা পুরস্কৃত হয়েছেন।
সরকারের মুখপাত্র উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর বলেছেন, তারা আস্খার সংকট নিরসনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু জনগণ এক্ষেত্রে কোন অর্জন বা অগ্রগতি দেখছেন না। সময়ক্ষেপণ করে সরকার নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তুলছেন কেন? দেখা যাচ্ছে, সরকার নিজেই আস্খার সংকটে পড়েছে। তারা তাদের তৈরি ছকে নির্বাচন করে এমন দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে চায়, যাদের কাছে তারা অধিকতর স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য পাবে। এমন সন্দেহ সৃষ্টির দু'টি কারণ।
এক. শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনের ঘোষিত তারিখ ১৮ ডিসেম্বরই নির্বাচন হতে হবে এবং কোন দল নির্বাচনে আসুক বা না আসুক, তারা নির্বাচন করবেন। দুই. নির্বাচনের সমতল মাঠ তৈরির জন্য নির্বাচনের প্রধান অংশীদার বিএনপি তথা চারদলীয় জোটের ৭ দফাকে পাশ কাটিয়ে সরকারের একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা। এদিকে সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে তারা সরকার ও নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের পেছনের শক্তির অভিলাষ অনুযায়ী প্রশাসন একটি সাজানো নির্বাচনী মহড়া দিতে মানসিক ও আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নির্বাচন কমিশন যে কোন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা প্রাপ্তির ফলে নির্বাচনকে তারা পরিকল্পিত ছকে ধাবিত করতে চাইলে তাতে প্রার্থীদের কোন সুরক্ষা থাকবে না। জরুরি অবস্খার খড়গ ঝুলিয়ে রেখে বিশেষ আদালতে দুর্নীতির মামলার বিচারে দণ্ড দিয়ে এবং অন্তরীণ রেখে বিএনপি ও চারদলীয় জোটের প্রায় অর্ধশত নেতার নির্বাচনে অংশ নেয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে।
বিএনপির জন্য অসমতল মাঠ তৈরির হাতিয়ার হিসেবে সরকার জরুরি অবস্খাকে ব্যবহার করছেন। নির্বাচনী মাঠে ভারসাম্যহীনতার যে চিত্র পাওয়া যায়, তাতে দেখা যাচ্ছে বিএনপি নেতাদের মামলার সংখ্যা যেখানে ৯২ সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাদের সংখ্যা ২১, বিএনপির গ্রেফতারকৃত নেতাদের সংখ্যা যেখানে ৬৫, আওয়ামী লীগের সংখ্যা সেখানে ১০; বিএনপির বন্দী কেন্দ্রীয় নেতার সংখ্যা ২৫, আওয়ামী লীগের শূন্য; বিএনপির সাজাপ্রাপ্ত সাবেক এমপি ও মন্ত্রীর সংখ্যা ৩২, আওয়ামী লীগের ৬।
আসলে একতরফা না গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, এই প্রশ্নটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। সরকার প্রধান ও ইসি যে নজীরবিহীন মডেল নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তা কি বর্তমান অবস্খায় সম্পন্ন হওয়া সম্ভব? গ্রহণযোগ্যতার সার্বজনীন একটি নিরিখ আছে। এটা নির্ভর করে সকল দলের অংশগ্রহণের জন্য একটি সত্যিকার লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরির প্রশ্নে সরকার ও ইসির সদিচ্ছা এবং তা বাস্তবায়ন করার কর্মদক্ষতার ওপর।
সরকারকে নিজেদের ভেতরে সৃষ্ট আস্খার সংকট থেকেও যেমন বেরিয়ে আসতে হবে, তেমনি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ডে রাজনীতিতে যে আস্খার সংকট তৈরি হয়েছে, তাও দূর করতে হবে। এরই মাঝে আজ নিজামী , মুজাহিদ, সাইফুর কে গ্রেফতার করে সরকার সেই আস্থার পরিবেশের কথা ভুলে গেছে। এর মাধ্যমে আগামী নির্বাচন আবারো সংকটের মুখে পতিত হল। এবারো সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।