আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিডিয়া নিরপেক্ষতা কতটুকু?



মিডিয়া হলো গনমাধ্যম। যার মাধ্যমে তথ্য জানা যায়। জনগণের মনের কথা নিরপেক্ষভাবে প্রকাশ করাই মিডিয়ার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। আর প্রতিটি মিডিয়াই দাবী করে তারা নিরপেক্ষভাবেই সংবাদ উপস্থাপন করে। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি ভিন্ন চিত্র।

স্বাভাবিকভাবে মিডিয়ায় কোন ঘটনার সাথে জড়িত পক্ষদেরকে নিয়েই নিরপেক্ষভাবে তথ্য উপস্থাপন করে প্রকৃত সংকট সমাধানের পথ দেখাবে। তাই এটাকে অনেকে তৃতীয় শক্তি ও রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে মনে করেন। কিন্তু এই মিডিয়াই যখন নিরপেক্ষতার নামে করো পক্ষাবলম্বন করে তথ্য উপস্থাপন তখন এক পক্ষ ঠিকই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যারফলে আরেকপক্ষ দাম্ভিক আচরণ করতে থাকে,এই ভাবেই সমাজ,রাষ্ট্রে ও বি্শ্বে সংকট ঘনিভূত হয়। তবে মিডিয়ার এই পক্ষপাতমূলক আচরণ শুধূ দেশেই নয় আন্তর্জাতিকভাবে ও ঘটে।

আজকে যদি আমরা বিশ্ব মিডিয়ার দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই যে,সিএনএন,বিবিসি ও রয়টার্সের মতো বিশ্বমিডিয়াও পক্ষপাতমূলক তথ্য উপস্থাপন করে,সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। যেমন ফিলিস্তিনের উপর ইসরাঈলের অমানবিক আচরণ,সারা বিশ্বে মুসলমানদের জংঙ্গি বা সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন করা,বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্র ও মুসলিমদের উপর অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপর যে নির্যাতন তা সঠিকভাবে উপস্থাপন না করা ইত্যাদি। অন্যদিকে কোন মুসলমান যদি কোন বিধর্মীর উপর কোন আক্রমণ করে অথবা কোন মুসলিম দেশে কোন ঘটনা ঘটে তা নিয়ে বিশ্ব মিডিয়াগুলো হৈ চৈ ফেলে দেয়। এটাকে তথ্য সন্ত্রাস বা হলুদ সাংবাদিকতা বলে। বিশ্বে তথ্য সন্ত্রাস বা হলুদ সাংবাদিকতার স্বীকার বিশেষ করে ইসলাম ও কোন কোন ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদী বিরধী গোষ্ঠী।

বাংলাদেশেও বর্তমানে তথ্য সন্ত্রাস বা হলুদ সাংবাদিকতা চলছো ব্যপকভাবে। আর এর স্বীকার যথারীতি ইসলাম ও সরকারবিরধী গোষ্ঠী। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরই বাংলাদেশ জামাত ইসলাম ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতি নির্যাতনমূলক,সৈরাচারী আচরন করে যাচ্ছে। দলটিকে সমূলে নির্মূল করার জন্য এমন কোন হীন আচরণ নেই যা বর্তমান সরকার করেনি। যুদ্ধপরাধীর অভিযোগে দলের নেতাদের জবরদস্তিমূলক রায় আদালতের মাধ্যমে দিয়েছে।

জামাত ও শিবিরের অসংখ্য নেতা কর্মীদের রিমান্ডের নামে অমানষিক ও অমানবিক নির্যাতন করছে। অনেক নেতা কমীকৈ হত্যা করা হয়েছে। দলটিকে জঙ্গী হিসেবে প্রমাণ করার জন্য নানাভাবে হীন প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সর্বশেষ দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। আর আমাদের মিডিয়াগুলো দলটির বিপক্ষে কাজ করা তাদের রূটিন ওয়ার্কে পরিনত করেছে।

মিডিয়ার টকশোগুলোতে দলটির বিরূদ্ধে উপস্থাপকসহ অতিথিবৃন্দ হামেশা বিরধীতা করছে অথচ আশ্চর্যের বিষয় হলো দলটির কোন নেতা বা মূখপাত্রকে টকশোগুলোতে আমন্ত্রণ করা হয়না। যাদের নিয়ে মাঠ গরম,চায়ের কাপে ঝড় উঠে,সকল মিডিয়ায় তোলপাড় তাদের কোন প্রতিনিধি নেই,কি অবাক করা মিডিয়ার নিরপেক্ষতা। আরো অবাক করা বিষয় হলো যে,মিডিয়াগুলোতে এমন কতিপয় ব্যক্তিদের দলটির বিরূদ্ধে গালাগাল করার জন্য আমন্ত্রণ করা হয় যাদের সারা বাংলাদেশে একটি ইউনিয়নের ভোট বা সমর্থন পাওয়া যাবেনা। যারা শুধূ তাদের ঘরানার মিডিয়াগুলোতেই ব্যাঙ এর মতো লাফালাফি করে। তারা ইসলামের বিরূদ্ধে গালাগালি করতে পারলে খুবই গর্ববোধ করে।

এই হলো আমাদের মিডিয়ার নিরপেক্ষতা। এই মিডিয়াগুলোই শাহবাগ থেকে যখন ইসলামী দল নিষিদ্ধের কথা বলে,মাহমুদুর রহমান ও আসিফ নজরূলের মতো খ্যাতিমান আপোষহীন ব্যক্তিদের গ্রেফতারের স্লোগান তুলে তা লাইভ টেলিকাস্ট করে,অপরদিকে হেফাজতে ইসলাম যখন সমাবেশ করে সরকারের অনুমতি নিয়ে তখন তারা সেখানে মিডিয়াগুলো জঙিবাদের ইন্দন খুজে পান। এই মিডিয়াগুলোই কোন হত্যাকান্ড হলেই তাদের নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোনের নামে প্রশাসনের তথ্য ছাড়াই জামাত-শিবিরের নামে চালিয়ে দেয়। পরে দেখা যায় যে,অভ্যন্তরীণ কোন্দল অথবা অন্য কোন দূবৃত্ত হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে। যুবলীগ নেতা মিল্কিকে তার দলের লোকেরাই প্রকাশ্যে টুপি পাঞ্জাবী পরে গুলি করে হত্যা করা হয়,যা সিসি ক্যামেরার বদৌলতে ধরা পড়ে।

অধ্যাপক আসিফ নজরূল বলেন যদি সিসি ক্যামেরায় হত্যাকান্ডটি ধরা না পড়তো তাহলে তা জামাত-শিবির অথবা হেফাজতের উপরেই দোষ চাপাত। আল্লামা সাঈদীর ফাসীর রায়ের পরে সরকারের নির্দেশে যে গনহত্যা হলো মিডিয়াগুলো সেটাকো প্রচার করলো জামাত শিবিরের সহিংসতা ও তান্ডব হিসেবে। আবার কিছু মিডিয়ায় প্রচার করলো হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলেছে জামাত-শিবিরের কমীর্রা,তাদের কাছে মানুষের চেয়েও গাছের মূল্য অনেক প্রাধান্য পায়,অথবা তারা জামাত-শিবিরকে মানুষই মনে করেনা। একইভাবে ৫ই মে হেফাজতে ইসলামীর উপর মধ্যরাতে যে নৃশংস হত্যাকান্ড চালানো হলো সেই হত্যাকান্ডকে মিডিয়াগুলো প্রচার করলো গুটি কয়েকজন মারা গিয়েছে। প্রশাসন বাধ্য হয়েছে হেফাজতের উপরে গুলি চালাতে।

যে সকল মিডিয়া নিরপেক্ষভাবে প্রকৃত ঘটনা জনগণের সামনে উপস্থাপন করছে সেই মিডিয়াগুলোকে বন্ধ করে দেয়া হলো। মিডিয়াকর্মী সাগর-রূনি হত্যাকান্ড নিয়ে এই মিডিয়াগুলো তেমন কোন প্রতিবাদ করছেনা,মাঝে মাঝে লোকদেখানো প্রতিকী প্রতিবাদ দেখায় যা আইওয়াশ ছাড়া কিছুই নয়,যারা কেবল জনগনের কাছে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করবে বলেই হত্যার স্বীকার হন। মিডিয়া যদি তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারে তাহলে জনগণ সঠিক তথ্য হতে বঞ্চিত হবে এব্ং সংকট আরো ঘনিভূত হবে। তাই আমরা চাই দেশের জাতীয় স্বার্থে সকলের মনের কথাগুলো মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পাক। জাতিকে বিচ্ছিন্ন করতে নয়,কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে হেয় বা সুবিধা দেয়ার জন্য নয়,সোনার বাংলাদেশ গড়তে ও দেশপ্রেম জাগ্রত করে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করাই হোক আমাদের মিডিয়ার লক্ষ্য।

দেশপ্রেম,সততা ও নিরপেক্ষতাই হবে যাদের একমাত্র পাথেয়। লেখক এম.এন.আবছার (টিপু) ব্লগার ও গবেষক

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.