আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সৈয়দ মুজতবা আলীর

::::: দেখবো এবার জগতটাকে :::::
গত বছরে এক বন্ধুর সাথে রাইফেলস স্কয়ারে গেছি। ইউনিভার্সিটিতে মেজর শুরু হবে হবে। পড়া শুনার বেশ চাপ। সে বুদ্ধি দিল আয় দোস্ত কয়েকটা টু কিনে নিয়া যাই। দোকানদার আমাদের বেকুব ভেবে একটা ডিস্ক ধরায় দিল।

কাভারের ছবিটায় একজন শেতাঙ্গ ছেলে একটা রেডইন্ডিয়ান মেয়েকে চুমু দিচ্ছে। এটা দেখেই হয়তো দোকানদার ভাবছে এটা টু এক্স। নামটা অনেক পছন্দ হলো দি স্লিপিং ডিকশনারী। রেগুলার ছবি হিসাবে এটার নাম আমি তখনো শুনি নাই। তবে মাস খানেক আগে HBOতে এই মুভিটা দেখিয়েছিল।

যাই হোক বাসায় এনে মুভিটা ছাড়লাম। যা ভেবেছিলাম। দারুন একটা রোমান্টিক মুভি। অনেক পরিচ্ছন্ন এবং কাহিনীটা হৃদয় স্পর্ষী । ব্রিটিশ কলোনীজমের সময়ে লন্ডনের একজন আধুনিক তরুন ব্রাজিলের অসভ্যদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়ানোর মহান ব্রত নিয়ে আসে।

আমাদের দেশের অনেকের ধারণা ব্রিটিশরা বেছে বেছে বর্বর ব্যাক্তিদেরকেই পাঠাতো কলোনীগুলো শাষন করতে। সেটা ভারত হোক আর ব্রাজিলের রেইন ফরেস্ট হোক। সেই তরুনের কাজ বার বার আটকে যাচ্ছিলো ভাষাগত সমস্যার জন্যে। ব্রিটিশরা রেডইন্ডিয়ান ভাষা শিখতো অনেক কার্যকরীভাবে। একজন সুন্দরী তরুনীকে মাস খানেকের জন্যে শয্যাসঙ্গী হিসাবে গ্রহন করতো।

এই কমাসে অবসম্ভাবী ভাবে তারা ভাষা শিখে যেত। দেখা গেছে অনেক কার্যকরী একটা উপায়। এই ভাষা শিক্ষিকাকে বলা হয় স্লিপিং ডিকশনারী। আধুনিক মনস্ক নায়ক এই প্রথা অনুসরন করতে প্রথমে চায়নি। পড়ে আস্তে আস্তে সে এবং তার স্লিপিং ডিকশনারী একে অন্যের প্রেমে পড়ে যায়।

কিন্তু সৈয়দ মুজতবা আলীর টুনি মেমের মত একই কাহিনী। ব্রিটিশ সমাজ তাদের বিয়ের বিরুদ্ধে একাট্টা। মজার ব্যাপার এই স্লিপিং ডিকশনারীর মা ও ছিল একই পেশায়। এবং অজ্ঞাত পিতার ঔরসজাত এই নায়িকা বর্ণসঙ্কর এবং প্রমান করে তার বাবাও শেতাঙ্গ ছিল। সমাজের চাপে বাধ্য হয়ে এবং ফাসির কাঠ থেকে প্রান বাচাতে (নায়ক গভর্ণর কন্যার বাগদত্তা) নায়ক ইংল্যান্ডে ফিরে যায়।

কয়েক বছর পরে একই জায়গায় নব পরিনীতা স্ত্রী (গভর্নর কন্যা) নিয়ে ফিরে আসে। অনেক খুজেও হারানো স্লিপিং ডিকশনারীর সন্ধান পায়না। একদিন নদীর ঘাটে যখন পাহাড়ি মেয়েরা গোসলের জন্যে নেমেছে হঠাত একটা শিশুকে দেখে সে চমকে উঠে। পাহাড়িদের সাথে একজন শেতাঙ্গ শিশু এবং তার চেহাড়া অবিকল নায়কের মত। এরপরে শুরু হয় কাহিনীর অন্য মোড়।

মাত্র কয়েকদিন আগে আরেকটা মুভী দেখলাম। নাম বিফোর দি রেইন। মুম্বাইয়ের নায়ক রাহুল বোস, একটা ভারতীয় পাহাড়ি গ্রামের স্মার্ট ছেলে। ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের ডান হাত। নায়ীকা নন্দীতা দাস ইঞ্জিনিয়ার মুর সাহেবের গৃহ ভৃত্যা এবং স্ত্রীর অবর্তমানে তাদের সাথে গোপন সম্পর্ক তৈরি হয়।

এই সম্পর্কের জোর ধরেই এবং ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের মিথ্যে প্রেমের ছলনা টের পেয়ে রাহুল বোস এবং মুর সাহেবের সামনে রাহুল বোসের পিস্তলে আত্নহত্যা করে নন্দিতা দাস। তারা দুজনে মিলে লাশ গুম করে। নন্দিতা দাসের পরিবার সন্দেহ করে রাহুল বোস কে। কি কারনে জানি মুভিটা ভালো লাগে নাই। খুব কাছা কাছি একটা কাহিনী এবং আমার খুব প্রিয় একটা রোমান্টীক বই সৈয়দ মুজতবা আলীর টূনি মেম।

চা বাগানের ম্যানেজার হিসাবে কাজ করতে আসেন একজন সুদর্শন ইউরোপিয় তরুন। জনৈক সাওতাল কুলী টুনি হঠাত করে তার কাছে অনেক গুরুত্বপুর্ন হয়ে উঠলো। তুচ্ছ সাওতাল কুলি টুনি তার কাছে টুনি মেম হলো। কিন্তু ব্রিটিশ সমাজ মেনে নেবেনা। হ্যা ইচ্ছে করলে তুমি সাওতাল কুলী মেয়েদের সাথে যা খুশি করতে পারো।

তাদের সাথে শুতে পারবে, উপপত্নি হিসাবে নিতে পারো, এমনকি গর্ভে সাদা চামড়া বাচ্চা হতে পারে। চা বাগানে এমন অনেক সাওতাল বাচ্চা আছে যাদের সাদা চামড়া, সোনালী চুল। কিন্তু বিয়ে অসম্ভব। টুনিকে তুমি যতই ভালোবাস বিয়ে করতে পারনা।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.