আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপনাদের পাড়ার রাজাদা (২৮তম কাহিনী)



এই রাজাদা একটি NGO -র সম্পাদক হিসেবে তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হ্য়েছেন। এই NGO-টি শিশুদের সার্বিক বিকাশের জন্য কাজ করে থাকে। জন্মাবার পর থেকেই শিশুদের আধুনিক টীকাকরণ থেকে শুরু করে সামাজিক বিকাশের পরামর্শ দিয়ে থাকে। শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য নানারকম সামাজিক কাজ সহ সদ্য-মাতা-পিতাদের নানারকমভাবে সাহায্য-পরামর্শ দিয়ে থাকে। এই NGO-টিতে যে সকল ভলান্টিয়ার-কর্মচারী আছেন, তাদের নিয়মিত অভিমুখীকরণ (orientation) ক্যাম্পও হ্য়।

এই অঞ্চলে এই NGO-টির নাম-ডাক আছে। এদের একটি সাধারণ কার্যকরী সমিতি আছে। আছেন নির্বাচিত সভাপতি, সহ-সভাপতি সহ অন্যান্য কার্যকরী সদস্য। আছেন অনেক সাধারণ সদস্য। কার্যকরী সমিতির কাছে প্রতি মাসের সাধারণ সভায় সম্পাদককে জবাবদিহি করতে হয়।

এই NGO-টি চালাতে গেলে জেলার সাধারণ প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হ্য়। রাজাদা যখন জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে যোগযোগ করেন তখন তিনি নিজেকে জেলাশাসক ভাবেন। যখন স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে যোগযোগ করেন তখন তিনি জেলার মুখ্য-স্বাস্থ্য আধিকারিক-এর মত ব্যবহার করে থাকেন। যখন টীকাকরণ-ক্যাম্প চলে, রাজাদা নিজেকে টীকাকরণ বিশেষজ্ঞ ভাবেন। অবিভাবকদের সঙ্গে যখন কথা বলেন অবিভাবকরা ভিরমি খান।

ভয়ও পান। এই রাজাদা যখন NGO-টির সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন তখন কার্যকরী সমিতির সদস্যরা তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। সরকারী পর্যায়ে যোগাযোগের চিঠি-চাপাটির মুসাবিদা সভাপতিই করে দেন। এখানে এখনও যোগাযোগের ভাষা ইংরেজী । সম্পাদক শুধু সই করে পাঠিয়ে দেন।

সভাপতিকে রাজাদা বশ করে ফেলেছে ভেবে রাজাদার স্ত্রী রাজাদাকে ভীষণভাবে অফিসার - অফিসার ভাবতে লাগলেন । রাজাদা অবশ্য ঠিকাদারী করে সংসার চালান। এবং সরকারী মহলে রাজাদার আনাগোনার ফলে রাজাদার ঠিকাদারী ব্যবসাও ভাল চলছে। সভাপতি নিজের কাজে মাঝে মাঝে এদিক-ওদিক যান। ফলে রাজাদার চিঠি লেখার প্রয়োজন দেখা দিলে নিজেই মুসাবিদা করে সরকারী মহলে মাঝে মাঝে চিঠি পাঠিয়ে থাকেন।

এরকমই একটি চিঠি সরকারী মহলে পাঠাবার পর সভাপতি দেখে বলেছিলেন, ইংরেজী ভাষাটাতো বিদেশীদের, তাই চিঠিটা বিদেশীদের মতো করেই লিখতে হবে। বাঙ্গালীদের মতো করে লিখলে চলবেনা, বাঙ্গালীদের ভাষা বাংলা ইংরেজী নয়! রাজাদার আঁতে ঘা লাগে। রাজাদা এবার নিয়ে এলেন একজন টাইপিষ্টকে যিনি একটি প্রেস চালান। সভাপতি নানান কাজের চাপে ইদানীং NGO-দপ্তরে ঘন ঘন যেতে পারেন না। সভাপতি যত কম যাচ্ছেন, রাজাদা তত সাবালক হচ্ছেন।

রাজাদা ভাবতে ভাবতে এমন জায়গায় পৌছালেন যে রাজাদা NGO-র অন্যান্য সদস্যদের তার নিজের অধীনে চাকুরীরত ভাবলেন। তাদের তিনি প্রতিনিয়ত অনুরোধের বদলে হুকুম করতে শুরু করলেন। One fine morning রাজাদা দেখলেন শুধুমাত্র ঐ প্রেসবালা ছাড়া তার চারপাশে সদস্যরা কেউ নেই । তার কোনো প্রোগ্রামে কেউ অংশ নিচ্ছেন না। প্রোগ্রাম মাঠে মারা যাচ্ছে।

কুছ পরোয়া নেই, রাজাদা ভাবলেন "ম্যায় হু না" - ঠিক চালিয়ে নেব। রাজাদার সমস্যা একটাই, সেটা আর্থিক মঞ্জুরী নিয়ে। বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্য রাজাদাকে আর্থিক মঞ্জুরীর জন্য সদস্যদের কাছে যেতেই হয়। মাসিক মিটিং-য়ে জবাবদিহি করতে হয়। তবে, ক্যাশিয়ার, যিনি বাংলাদেশ থেকে এখানে এসে থিতু হয়েছেন, তাকে সঙ্গে নিয়ে চলার চেষ্টা করছেন-যাতে করে আর্থিক সমস্যা কিছুটা মেটানো যায়।

আগামী ডিসেম্বর মাসে NGO-র বর্ষ-পূর্তি উৎসবের দিকে রাজা এবং অবশ্যই রাজাদার স্ত্রী তাকিয়ে রয়েছেন। এটাই রাজাদার টার্ণিং পয়েন্ট।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.