গলাবাজ আর সত্যিকারের লেখক এই ব্লগে টিকে থাকে, আমি কোনটাই না
পর্ব ১ এখানে
বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে দেখি কড়া রোদ, সেই সাথে জোরালো বাতাস। সিউলে সাধারণত জোরালো বাতাসের দেখা মেলেনা। এখানে নেমেই বুঝলাম জেজু সিউল থেকে একেবারেই আলাদা। আর রোদের তেজটা সিউলের চেয়ে বেশি। গায়ে জ্যাকেট ছিলো, পাতলা সোয়েটারও এনেছিলাম, দরকার পড়লে যাতে ভিতরে পরা যায়।
বুঝলাম সেটা আর পরা লাগবেনা।
পার্কিং এরিয়া থেকে তোলা জেজু বিমানবন্দর এর বাইরের ছবি
নামফলকের ক্লোজআপ, দৃশ্যটা আমাদের দেশে হলে মনে হতো প্রাকৃতিক কর্ম করছেন বাম পাশের জন। আসলে তিনি কিছু মেরামত করছেন
একটা পার্কিং লটে ঢুকলাম আমরা। ওটা শুধুই রেন্ট এ কারের জন্য। বসরা মোট ৫ টা কিয়া মাইক্রো ভাড়া করলেন তিন দিনের জন্য।
আমাদের দলের পাঁচজন ই গাড়ী চালাবে আগামী তিনদিন। তাদের ন্যাশনাল কার্ড নাম্বার লিখে গাড়ীর চাবি বুঝিয়ে দেয়া হলো। আমরা যে গাড়ীতে উঠলাম সেটা চালাবে আমার একমাত্র কোরিয়ান ল্যাবমেট জে ওয়ান। পাশে আমার বস। পিছনে আমি, বউ, নিয়াজ (বাংলাদেশি), আমাদেরও পিছনে থোরাত আর তার বউ (ভারতীয়) আর মুদাছ্ছের (পাকিস্তানী)।
বিমানবন্দর থেকে সেমিনারস্হলে যাওয়ার পথে গাড়ির ভিতরে
এবারের সফরের সবচেয়ে মজার আর বিরক্তিকর ব্যাপার হলো আগে থেকে সময় বা গন্তব্য কোনটাই আমাদের আগাম জানিয়ে দেয়া হচ্ছেনা। শেষ মুহুর্তে জানানো হচ্ছে আমরা কোথায় যাচ্ছি। জানিনা বুদ্ধিটা কার, তবে চার্মিং ও আছে আবার বেশ বিরক্তও লেগেছে। গাড়িতে উঠেও জানিনা ঠিক কোথায় যাচ্ছি। হোটেল, সেমিনার নাকি রেস্টুরেন্ট।
শহর থেকে গাড়ি বেরিয়ে খোলা যায়গা শুরু হলো, দূরে পাহাড় নজরে আসছে। গাড়ি ৮০-১০০ কিমি বেগে ছুটে চলেছে। গাড়িতে জিপিএস সিস্টেম আছে, ম্যাপে প্রত্যেকটা জায়গার নাম্বার আছে সেটা জিপিএসে দেখিয়ে দিলে লাল দাগের রাস্তা দেখা যায় স্ক্রীণে। সেটা ধরে গাড়ি চলছে।
পথেই চোখে পড়ে ছোট বড় অনেক পাহাড়
আমার বস মোবাইলে যোগাযোগ করছে অন্য গাড়িগুলোয়।
একপর্যায়ে কথাবার্তায় বুঝলাম এখন লান্চের জন্য কোথাও যাবে। ম্যাপ দেখে আরেকটা নাম্বার ইনপুট দেয়া হলো। প্রায় ৪০ মিনিট চলার পর একটা রেস্তারার সামনে গাড়ী থামলো। ছবি দেখে বোঝা যায় এটা ছুরি মাছের জন্য স্পেশাল। ভিতরে যেয়ে বসলাম।
চারিদিকে খোলা, পিঠের দিকে মোটা পলিথিন দিয়ে রোদ ঠেকানো। কিন্তু গায়ে আর জ্যাকেট রাখা গেলোনা। খাবারের জন্য ওয়েট করছি, যেগুলো সচারচর থাকে, কিমচি, শাক, স্যুপ, ভাত, মেইন আইটেম ছুরি মাছ আর মুলোর ঝোল তরকারী। খুব মজার ঝোলটা। আসলে খিদাটাও সেরকম ছিলো।
দুপুরের খাবার এই ছুরি মাছের হোটেলে
কখন আসবে খাবার, সবাই গরমের ভিতরে বসে আছে
অবশেষে এলো ছুরি মাছের তরকারি
খাওয়া শেষ করেই আবার গাড়িতে চড়ে বসলাম। তখন বাজে ১২.২০। ওদিকে ১২.৩০ থেকে আমাদের কয়েকজনের পোস্টার প্রেজেন্টেশন আছে। গাড়ি থেকে নেমেই দৌড়ে রিসেপশনে গেলাম। ট্যাগ কালেক্ট করে সোজা হলরুমে চলে গেলাম।
তারপর পোস্টার স্ট্যান্ডের পিন মেরে সংয়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকা। পুরো দুই ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে একসময় অপেক্ষার পালা শেষ হলো।
আমার ল্যাবমেট পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
বিকাল পর্যন্ত ফ্রি সময়। পুরো কন্ফারেন্স সেন্টার টা সমুদ্রের পাড়ে। আগেই নেটে দেখেছিলাম ৫-৬ তলা থেকে খুব সুন্দর সমুদ্র দেখা যায়।
তাই চলে গেলাম সিড়ি বেয়ে। সত্যিই খুব সুন্দর, কিন্তু রোদ ঢুকছে বলে পর্দা ঝুলিয়ে রেখেছে। আরও কিছুটা ভিতরে যেয়ে দেখি একটা সি ভিউ রেস্তোরা। ওটার ভিতরে ঢুকলে লাগোয়া বারান্দা আছে। ওখান থেকে ভালো ছবি তোলা যাবে।
বুঝতে পারছিলাম না, ঢুকলেই কিছু খেতে হবে কিনা। ভাবনা বাদ দিয়ে ঢুকে গেলাম, চলে গেলাম বারান্দায়। বেশ কিছু সময় থেকে ছবি তুলে চলে এলাম আবার লবিতে।
ওশান ভিউ রেস্তোরার বারান্দা থেকে তোলা কিছু ছবি
চলবে.....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।