রিজওয়ানুল ইসলাম রুদ্র
"...we keep driving through the night... it's a late goodbye; such a late goodbye.." গানটা শোনার পর দীর্ঘদিনের স্নায়বিক অবসাদের অবসান ঘটলো - এই ভেবে ডিসট্রিক্টের গাঢ় সবুজ বৃক্ষছায়ায় সমর্পণ করি নিজেকে। তখনো রাত ফুরোয়নি, আবছা ধূসর আকাশে একবিন্দু নক্ষত্রের মতো জ্বলে আছে সাদা আলো। কী সেটা ? সূর্য ! আহা ! জীবন এমনও হয়... এই যে আমি দাঁড়িয়ে আছি শিরদাঁড়া উঁচু করে.. ঠিক আমার পাশেই রাস্তায় ফেলে দেয়া বাসি খাবার খাচ্ছে রাতজাগা নির্ঘুম এক কুকুর। অভ্যাসবশত কিংবা স্বভাবগত ভাবেই কুকুরের ঘেউ ঘেউ স্বর কিছুটা নকল করে ডেকে উঠি। কুকুরটা ভীত হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।
অতঃপর পালায়। ভোর হয়ে আসে। আমার দীর্ঘ অবসন্ন চোখ দু'টো স্বপ্ন দেখবার তাড়নায় মিশে যেতে চায় উষ্ণ কাঁথার ভেতর। তবুও আমি জেগে থেকেই স্বপ্ন দেখি। হাঁটতে থাকি বাসার দিকে।
ভুল বলছি - এ বাসা আমার নিজস্ব না। দীর্ঘ নয় বৎসর ধরে আমি আছি এক নির্জন বাড়ীতে... অথচ কখনো কী ভেবেছিলাম, অসৎ বাড়ীওয়ালার নির্দেশে বাসাটাকে সারা জীবনের জন্য ছাড়তে হবে ! নয় বছর আমার রক্তে যে বাসার চুন-সুরকি-সিমেন্ট-ডিসটিল ওয়াটার এসে ঢুকেছে, তার যন্ত্রণা নির্বোধ অহংকারী বাড়ীওয়ালা বুঝবেন কী ? নাহ্ বোধহয়। আজ তাহলে অন্য জীবনের কথা ভাবি। আমারো বাড়ী হবে, গাড়ী হবে, হবে নিজস্ব ইতিহাস - অন্য দশজন মানুষের মতো এই স্বপ্ন আমার নেই ক্যানো ? শুধু কবিতা আর লেখা-লেখি দিয়েই জীবন চলবে ? মনে পড়ে যায় কবি শামসুর রাহমানের উক্তি - "সত্যিই আমাদের কোনো বাড়ী আছে কী ?" খবরের কাগজ আসে... ধর্মভিত্তিক এক রাজনৈতিক দলের হোমরা-চোমরা দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি মির্টি-মিছিল করেন আর পুলিশ মিথ্যা কথা ( ! ) বলে তাকে গ্রেপ্তার না করার মানবিক আবেগ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে প্রকাশ করে ! পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেই বা লাভ কী ? কয়েকদিন পর জামিন নিয়ে ঠিকই বের হয়ে পড়বেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ-এর বিখ্যাত (!) ব্যক্তিবর্গ ... নাহ্ ভালো লাগে না কিছুই... যদি আকাশের ডানাওয়ালা পাখির মতো উড়ে বেড়ানো যেতো যখন ইচ্ছে... সমুদ্রের ধারে... বসন্তের অলস বিকেলে নদীর পাড় ঘেঁসে... মানুষ তো আর পাখি না ! উড়তে ইচ্ছা করলেও পারে না যে...
তবুও অর্থহীন চোখে স্বপ্ন বুনে যাওয়াটাই মানুষের অভ্যাস। এক লাখ সাতচল্লিশ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এক স্বাধীন ভূ-খণ্ডের বিচিত্র সব মানুষেরা কেউ দুর্নীতিবাজ, রাষ্ট্রনায়ক, ভিখারী, মন্ত্রী, বখাটে যুবক, মাদক-ব্যবসায়ী, বারাঙ্গনা, পতিতালয় এর মালিক... অন্য সব দেশের মতো কেন ক্রমেই বিধ্বংস হবে এই দেশ ? ভালো দিকগুলোর চাইতে খারাপ দিকগুলোই চোখে ভাসে... টুপ করে এক ফোঁটা জলও গড়িয়ে পড়ে।
ভীষণ লজ্জা পেয়ে যাই !
অবশেষে অদৃশ্য পাখির মতো ঘুমাই... স্বপ্নের মুহূর্তটাই তো স্বস্তিকর, তাই না ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।