আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কক্সবাজার ভ্রমন ০৫

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

খাওয়ার জন্য প্রতীক্ষা শেষে যখন খাওয়ার আসলো টেবিলে তখন বুঝলাম কক্সবাজারের বাবুর্চিরা মরিচ দেওয়ার ব্যপারে উদার। মনের সাধ মিটিয়ে মরিচ দিয়েছে তরকারিতে। আলু ভর্তায় মনে হয় আলুর সমান শুকনা মরচি দিয়ে বেটেছে, ঝোলের সম্পূর্ণ অংশের সামান্য যেটুকু ঠোঁটে লাগলো তাতেই ঠোঁট ফুলে যাওয়ার অবস্থা। তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া সম্ভব না এই পরিস্থিতিতে, বরং খাওয়াটা রীতিমতো অত্যাচারের পর্যায়ে চলে গেছে। বিকাল বেলা আসলেই কিছু করার নেই, সমুদ্রসৈকতে গিয়ে সুর্যাস্ত দেখবার বিলাসিত করতে ইচ্ছা করলো না কারোই।

আড্ডা দিয়ে যখন মনে হলো সন্ধ্যা হয়েছে এবার কিছু একটা খাওয়া প্রয়োজন তখন আড্ডায় বিরতি দিয়ে নীচে গেলাম। ফিরে আসবার পরে মনে হলো একটু শুয়ে থাকি। ঘুম আসবে না হয়তো, তবে এই গা ম্যাজম্যাজ ভাবটা চলে গেলে হয়তো আরও উপভোগ্য লাগতে পারে। সবাই গাড়ী নিয়ে বাইরে যাওয়ার পরে এসিটা বাড়িয়ে কম্বলের নীচে শুয়ে ঘুমানোর ব্যর্থ চেষ্টার পরে মনে হলো শালার এর চেয়ে বাইরে যাওয়াই ভালো ছিলো। টিভির নাটক দেখা ছাড়া কোনো কাজ নেই, টিভিতে বিজ্ঞাপণ দিচ্ছে গুনী নির্মাতা ও প্রিয় অভিনেতা আফজাল হোসেনের লিখিত ও পরিচালিত নাটক দেখাবে।

গুনী নির্মাতা অমিতাভ রেজার নাটকও প্রদর্শিত হবে। গুণবান মানুষদের নাটক দেখবার কোনো মানে হয় না। অবশেষে যখন বন্ধুরা আসলো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। হোটেলের লবিতে গিয়ে দেখি সাইনবোর্ডে লেখা ব্রাউজিং, পুল টেবিল। আপাতত পুল টেবিল দেখতে যাই, সে দিকেই ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের সুযোগ আছে।

উদ্দেশ্যবিহীন হেঁটে কোথাও ব্রাউজিংয়ের ঘর দেখতে পারলাম না। পুল টেবিলে ইয়ো প্রজন্ম ঠকাশ ঠকাশ বলের পাছায় লাঠি দিয়ে গুঁতাচ্ছে। রিসেপশনে প্রশ্ন করে জানলাম ইন্টারনেট ব্রাউজিং প্রতি মিনিট ৩ টাকা। টাকার অংক শুনে আধুনিক জীবনের সাথে সংযুক্ত হওয়ার সাধ মিটে গেলো। বন্ধুদের সবারই ইচ্ছা ছিলো মেইল চেক করার,কিন্তু কারো ভেতরেই উৎসাহ দেখলাম না।

অবশেষে যখন পুল খেলতে গেলাম তখন রাত ১টা। পুল টেবিল ফাঁকা, আমি নভিশ, আজই প্রথম লাঠি হাতে বলের পাছায় গুঁতাগুঁতি করবো। পাছায় আঙ্গুল দেওয়া সহজ হলেও বলের পাছায় গুঁতা দেওয়া তেমন ঝজ কাজ না। রীতিমতো লক্ষ্যভেদী অর্জুন হতে হয়। তপস্যা লাগে।

যতটা অনায়াসসাধ্য ভেবছিলাম, খেলাটা তার চেয়ে অনেক কঠিন। অনুকরণ করে লাঠি ধরে গুঁতা দিয়ে দেখলাম পিছলে যায়, যদিও বা বল নড়াতে সক্ষম হই, কিন্তু বলের গতি দেখে কান্নাচলে আসে। অনেক অংক কষে, দুরহ সব কোণ নির্ধারণ করে যখন জায়গামতো গুঁতা দিতে যাবো, অন্য একটা বলে গুঁতা লাগে। এটাও না কি ফাউল। চুদু পেয়ে সবাই নিজের মতো নিয়ম বানিয়ে বলছে না কি এটাই সঠিক কে জানে? লাঠি দিয়ে ক্যারামবোর্ড খেলবার কাজটার মাদকতা আছে।

গুঁতা দিয়ে কাউকে গর্তে ফেলবার আনন্দই অন্য রকম। তবে প্রতি ঘন্টা ২০০ টাকা। এই টাকার অংকটা রীতিমতো পীড়াদায়ক। এই বালের হোটেলে ঢুকবার পর থেকে বিভিন্ন টাকার অংক দেখে দেখে বিরক্ত। হোটেলের ঘরে একটা পানির বোতল রেখে গিয়েছে, তৃষ্ণার্ত ছিলাম, ঢকঢক করে গিলে মনে হলো, শালার এটার জন্যও কি দাম ধরবে? আশংকা সত্য, এটার জন্যও দাম লিপিবদ্ধ করা আছে।

ঘুমাতে ঘুমাতে রাত ৩টা। ঘর তখন ঠান্ডা হয়ে ইগলু। কম্বলের নীচে ঘুমাবো না বাইরে ঘুমাবো এই ভাবতে ভাবতে আরও কিছুক্ষণ গেলো। সকালে সান্তনাসূচক নাস্তার বন্দোবস্ত আছে। তবে ১০টার ভেতরে ঢুকতে হবে খাওয়ার ঘরে।

সুতরাং কাঁচা ঘুম থেকে উঠেই নাস্তার টেবিলে। যতই অপপ্রচার করি না কেনো, সকালে নাস্তার ব্যবস্থা ভালোই ছিলো। নাস্তা করে পুনরায় সমুদ্রে হুটোপুটি, স্রোতের টানে সরে সরে যাওয়া। সৈকতে বসে ডাবের পানি গিলতে গিলতে আশেপাশের মানুষদের দেখা। দুপুর গড়িয়ে যাওয়ার পরে হোটেলের ঘরে এসে গা গোসল সেরে খেতে যাওয়া।

তেমন বৈচিত্র নেই, বিশ্রামও নেই অবশ্য, সমুদ্র নির্মম, শরীর থেকে শক্তি শুষে নেয়। দুরে সাম্পান দেখি, ঝাউবন দেখি, দেখি স্পীডবোট নিয়ে মানুষ যাচ্ছে। এইসব তেমন আগ্রহ জাগায় না। হোটেলে ঘরে ঢুকে আয়েশ করে পেপার পড়ছি, দেখলাম লাবনী পয়েন্টে দুইজনের প্রায় মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। চোরাগর্তের বিস্তৃতি দিন দিন বাড়ছে, না কি সেটা স্থির হয়ে আছে কে জানে? বৌয়ের ফোন আসলো একটু পড়ে।

আমি আয়েশ করে পেপার পড়ি, টিভি দেখি, এইসব সময়ের বৌয়ের অনুপ্রবেশ ভালো লাগে না মোটেও। প্রয়োজন ছাড়া সময়ে অসময়ে ফোন করবার দরকারটা কি সেটাও বুঝি না। ফোন কানে লাগিয়ে চুপচাপ বসে থাকি। বিরক্ত ও ক্ষিপ্ত হয়ে ফোন ছেড়ে দেওয়ার পরে আনন্দে দাঁত বের করে হাসি, উচিত শিক্ষা হয়েছে। নীচে সুইমিং পুল আছে, ঘন্টা প্রতি ২০০ টাকা দিয়ে সাঁতার কাটতে হয়।

সাঁতার কাটবার জন্য ২০০ টাকা দেওয়া কোনো ব্যপার ছিলো না ,কিন্তু সাঁতার পারি না তেমন। অতএব সেই থোরবাড়ি খাঁড়া, খাঁড়া বাড়ি থোর। মরার উপরে খড়ার ঘা, গাড়ী নষ্ট। গাড়ীর রাবার ছিড়ে গেছে। পাওয়ার স্টিয়ারিং, এসি ফ্যান, সব বন্ধ।

সেটা ঠিক করবার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই। গাড়ী ঠিক না হলে কি আর করা যাবে, কোনো না কোনো একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। সেইসব বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন নেই আপাতত। কথায় কথায় রাত গড়াতে থাকে। আবারও ঘুমাতে ঘুমাতে সেই রাত ৩টা।

পরদিন সকালে উঠেই সৈকতে যাবো, যে সময়টাতে বীচে যাই তখন ভাঁটা শুরু হয়ে যায়, অতএব জোয়ারের মুখোমুখি হতে হবে একবার। জোয়ারের সময়সূচি দেখি, সকাল ৭টা ৪২ থেকে দুপুর ১টা ৫২ পর্যন্ত থাকলে , এরপর ভাটা শুরু হবে। লাবনী পয়েন্ট নিয়ে ভাবনা আপাতত নেই। সেখানে যা ঘটার ঘটুক, এ দিকের সৈকত অপেক্ষাকৃত নিরাপদ মনে হয়। সৈকতে যেতে যেতে দেখলাম পানি সরতে শুরু করেছে।

প্রবল জোয়ারের সময়টাতে সমুদ্র অবগাহন হলো না এবারও। আগামীকালই চলে যেতে হবে। অন্তত সুইমিং পুলে না ডুব দিলে কেমন হয়। তাই সৈকত থেকে ফিরেই চলে গেলাম সুইমিং পুল। জলকেলী শব্দটা শুনেছিলাম, অর্থটা তেমন পরিস্কার ছিলো না, তবে সুইমিং পুলে এসে এক জুটিকে দেখে বুঝলাম জলকেলী কি? জলকেলী কি এবং কত প্রকার উদাহরন সহ দেখিয়ে দিলো দুজনা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।