তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে
মুহম্মদ জুবায়ের ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় এই "বাঁধ ভাঙার আওয়াজ" ব্লগেই। তখন ব্লগে নতুন নতুন এসেছি। কাউকে চিনি না। "মুহম্মদ জুবায়ের" নামটির সাথে অন্তর্জালিক কিংবা কাগজ মাধ্যমে পূর্বপরিচয়ও ছিলো না। আমার জানা ছিলো না "মুহম্মদ জুবায়ের" নামক ব্যক্তিটি একজন পোড় খাওয়া অভিজ্ঞ লেখক।
উনি তখন ধারাবাহিক ভাবে উপন্যাস "পৌরুষ" পোস্ট করছিলেন। "পৌরুষ" এর শুরু ভালো লাগলেও মাঝের কাহিনী বিন্যাস আর সমাপ্তি মন ভরাতে পারেনি বলে বেশ প্রগল্ভ নিয়েই অভিযোগ, সমালোচনা করেছিলাম। আক্রমনের প্রেক্ষিতে জুবায়ের ভাই আমাকে ঘুণাক্ষরেও বুঝতে দেননি তিনি আমার চেয়ে বয়স, প্রজ্ঞায় কতো বড়। বরং মন দিয়ে শুনে গেছেন আমার অভিযোগ, পরামর্শ। পরে জেনে মন খারাপ হয়েছিল।
মনে হয়েছিলো জুবায়ের ভাই বুঝি ভেবে বসলেন আমি বড়দের শ্রদ্ধা করি না। ঠিক করেছিলাম কোনো একদিন সামনা সামনি দেখায় জুবায়ের ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবো।
সচলায়তনে যখন শুনলাম জুবায়ের ভাই ফুসফুসজনিত জটিলতায় অসুস্থ হয়ে ইনটেনসিভ কেয়ারে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস যন্ত্রনির্ভর হয়ে আছেন - তখন থেকেই মনে কেমন কু ডাক দিচ্ছিলো। খবর জানতে ফোন দিয়েছিলাম জালাল ভাইকে। তিনি "এখন অনেক সুস্থ আছে" জানালেও আমার মনে কু ডাক বন্ধ হয়নি।
আমি তানভীর ভাইয়ের কাছ থেকে হাসপাতালের ঠিকানা নেই। জুবায়ের ভাইকে ফুল পাঠাবো। সেই ফুল পেয়ে হয়তো তিনি খুশি হবেন। এর পরে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। মনে হয় সময় তো আছে, কাল পাঠাবো।
এই করে করে দিন চলে যায়। আমার আর ফুল পাঠানো হয় না।
বাসায় এসে খবর পেয়েই আমার কেমন হাঁসফাঁস লাগে। আমি মাথায়-মুখে পানি দিয়ে আসি। আমার মনে হয়, কি যেনো বলা হলো না, কি যেন করা হলো না।
তার আগেই চলে গেলেন আমাদের সবার শ্রদ্ধার, ভালোবাসার প্রিয় জুবায়ের ভাই!
আজ আর লিখতে পারছি না। আজ আর সম্ভব নয়।
শুধু বলি, বেঁচে থাকুন শ্রদ্ধেয় মুহম্মদ জুবায়ের (২২ মে ১৯৫৪ - ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৮)
... আপনার রচনায়, আমাদের ভালোবাসায়!
মুহম্মদ জুবায়ের এর লেখার লিংক
- বাঁধ ভাঙার আওয়াজ ব্লগ
- সচলায়তন ব্লগ
- ব্লগস্পট
- এনওয়াইবাংলা কলাম
- পিডিএফ-এ উপন্যাস "পৌরুষ"
এনওয়াইবাংলা থেকে মুহম্মদ জুবায়ের এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
জন্ম ২২ মে ১৯৫৪। বেড়ে ওঠা বগুড়া শহরে। তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে সবার বড়।
পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে। সত্তর দশকের প্রথমার্ধে লেখালেখি শুরু হলেও ১৯৮৪-৮৫ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত দীর্ঘ স্বেচ্ছা-অবসর বা শীতঘুমে মগ্ন। গল্প-উপন্যাস এবং সংবাদপত্রের কলাম ও ব্যক্তিগত রচনাসহ বিবিধ গদ্যের রচয়িতা, কিছু অনুবাদকর্মও আছে। প্রকাশিত গ্রন্থ দু’ট – উপন্যাস “অসম্পূর্ণ” (১৯৮৬) ও কিশোর উপন্যাস “আমাদের অমল” (২০০৩)। পরবাসজীবন ১৯৮৬-র মাঝামাঝি থেকে।
বসবাস করেছেন আমেরিকার টেক্সাস রাজ্যের ডালাস শহরে। মুহম্মদ জুবায়ের এক কন্যা (বয়স ২০) এবং এক পুত্র (বয়স ১০) সন্তানের জনক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।