অন্য রকম একটা জীবনের স্বপ্ন আমার আজও গেল না.............. মন্টানায় আমাদের বেশিরভাগ সময় কাটত ঘরে বসে আড্ডা দিয়ে, ক্যাম্পাসে ঘুরে আর রান্না করে। শীতের প্রকোপ একটু কমলে হাটতে বের হতাম সবাই মিলে, খেয়ে আসতাম বাইরে থেকে। হেটে যাওয়ার মত আশেপাশে জায়গা একটাই ছিল "গ্যালাটিন ভ্যালী মল"। তবে আমরা মাঝে মধ্যে আহসান আন্কেল, রুমা আন্টি, তুর্য, দীপ্র আর আমরা সবাই মিলে সিনেমা দেখতে যেতাম আমাদের বাংলাদেশ স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন এর খরচে। আমাদের স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন এর একটা ফান্ড আছে, যার মূল ইনকাম হলো এম.এস.ইউ তে হওয়া "ইন্টারন্যাশনাল ফুড বাজার" এ পার্টিসিপেট করে যে লাভ হয় তা।
ফুড বাজারের বিষয়ে অন্য একটা পর্বে বলব। ঐটা নিয়ে আরেকটা ছবি ব্লগ করার ইচ্ছা আছে। ছবি ছাড়া ঐটা বলে বুঝানো সম্ভব না। ফুড বাজারের লাভের একটা অংশ বাংলাদেশে পাঠানো হয়, কোনো একজন গরিব মানুষকে রিকশা, ভ্যান বা অন্য কিছু কিনে দিয়ে সাবলম্বী করার জন্য। বাকি টাকা দিয়ে সারা বছর সিনেমা দেখা, কোথাও সবাই মিলে খেতে গেলে খরচ করা হয়।
এম.আই-৪ আর দ্যা এভেন্জার্স বোজম্যান এ দেখা। দ্যা এভেন্জার্স থ্রি-ডি তে দেখেছিলাম, রিলিজ পাওয়ার সাথে সাথেই । এছাড়া নর্থ হেজেস এর পিছনের বার্নে প্রতি উইকেন্ডে কোনো না কোনো পার্টি থাকতই। মাঝে মধ্যে ওখানেও যাওয়া হত। তবে একটা লাইফ লং এক্সপেরিয়েন্স বোজম্যান এ হয়েছিল।
সেটা হলো "মিউজিয়াম অফ দ্যা রকিস" দেখতে যাওয়া। এম.এস.ইউ এর থেকে মিনিট পাচেক এর রাস্তা। স্প্রিং এর ছুটিতে ঘরে বসে মাছি মারতে মারতে আমরা যখন পুরোপরি বিরক্ত, তখনই খিচরে যাওয়া মেজাজ নিয়ে আমি আর রাশেদ ভাই প্ল্যান করলাম যে দুরে যাওয়া যখন সম্ভব না তখন হাত-পা এর খিল ছাড়ানোর জন্য কাছাকাছি যে মিউজিয়ামটা আছে ঐটাই দেখে আসি। এইটা যে অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে তখন পর্যন্ত এই ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিলনা। তখন একদম বেসিক একটা মোবাইল ইউজ করি।
আমাদের কারোরই ভালো ক্যামেরা ছিলনা। যার আফসোস এখন পর্যন্ত আছে। মিউজিয়াম এর তিনটা ভাগ। বড় অংশটা ডাইনোসরদের ফসিল !!!!! একটা আর্ট গ্যালারী, আরেকটা মন্টানার ঐতিয্যবাহী সব জিনিস নিয়ে। ডাইনোসরদের ফসিল দেখার মত জিনিস।
কি বিশাল.....স্রষ্টার কতই না অপূর্ব আর বিচিত্র সৃষ্টি। দেখলেই মনে হয় স্রষ্টা বলছেন "দেখো হে মানব সম্প্রদায়, আমার তুলনায় তোমরা কতই না ক্ষুদ্র"। জুরাসিক পার্ক দেখার পর থেকেই ডাইনোসরদের উপর যে কল্পনা মিশ্রিত কৌতুহল ছিল, রকি মিউজিয়াম এ যেয়ে কিছুটা হলেও তা মিটেছে। ডাইনোসরের ডিম থেকে শুরু করে পাথরের মধ্যের ফসিল, বাবু ডাইনোসর, ডাইনোসরদের অনেক রকম প্রজাতির ফসিল ছিল। একদমই অল্প রেজুলুশন এর মোবাইল ক্যামেরায় যে কয়টা ছবি তুলেছিলাম তা আগামী পর্বে শেয়ার করব।
স্কিইং এর জন্য মন্টানা বিখ্যাত। প্রচুর তুষারপাত হয় এখানে। এখানকার মানুষজনও তুষারপাত খুব পছন্দ করে। তুষারপাত হয়নি দেখে মন খারাপ ক্লাসের কয়েকজনের, এমন দৃশ্য বহুবার দেখেছি। এমন এলাকার মানুষ স্কি করতে পছন্দ করবে এ আর আশ্চর্যের কি.....আমেরিকান বন্ধুরা তুষারপাত হলে একটু সুযোগ পেলেই স্কিইং এ চলে যেত।
অস্ট্রেলিয়ানরা দেখতাম সবাই দল বেধে যেত। আমার খুব ইচ্ছা ছিল স্কি করা শিখব। বরফের স্তুপের উপর ছুটব তীরবেগে, যেমনটা পড়ি মাসুদ রানার বইতে। আমি ভুলে গিয়েছিলাম অভাগা যেইদিকে যায়, সাগর ঐদিকেই শুকিয়ে যায়। স্কি করতে যেয়ে ব্যাথা পাওয়া, হাত-পা ভাঙ্গা নতুন কিছু না।
নতুনদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরো বেশি হয় বলে শুনলাম। দুইটা সমস্যা সামনে আসলো তখন। আমার হেলথ ইন্সুরেন্স ছিল না, বাই চান্স কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বিরাট অংকের টাকা গচ্চা যাবে। এছাড়া আমার বাংলাদেশের ইন্সুরেন্স এখানেও কাভার করবে বলে যে ভুজুং ভাজুং ভার্সিটিকে দিয়েছিলাম তাতে ধরা খাওয়ার ও একটা সম্ভবনা থাকে। নানান চিন্তা করে চার মাস মন্টানায় থাকা সত্তেও একবার স্কিইং এ যাইনি, যেখানে অন্যান্য স্টেট থেকে এখানে মানুষ স্কি করতে আসে।
এই আফসোস কিভাবে দূর করি? আমার মাঝে মধ্যে খুব জানতে ইচ্ছা করে "দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান, তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান" এই কথাগুলো নজরুল কি দেখে, কি ভেবে লিখেছিলেন............
(চলবে)
অন্যান্য পর্ব:
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২২) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।