হিমাদ্রি শেখর ভদ্র
সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র বিমোচনে কাজ করে যাচ্ছে প্রায়১৫/২০টি বেসরকারী সংস্থা। তারা ুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে বেশ জোরে সুরে দারিদ্র বিমোচনের জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ুদ্র ঋণ কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন খাতে হাওর এলাকার দারিদ্র পীড়িত মানুষের মধ্যে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করে যাচ্ছে। প্রদেয় ঋণ এর সাথে সার্ভিস চার্জ, নির্দিষ্ট হারে ঋণের সুদ, বীমা বাবদ বেশ কিছু টাকা ঋণ প্রদানের সাথে সাথে কেটে রাখে। তারপর পুর্ব-নির্ধারিত সুদের হার সহ বিভিন্ন চার্জ ঋণীর মোট টাকার সাথে সংযুক্ত করে বছরের নির্দিষ্ট দিনে সাপ্তাহিক কিস্তি নির্ধারণ করে দেয়।
প্রতি সপ্তাহের একটি নির্ধারিত দিনে বেসরকারী সংস্থার নিয়োগকৃত মাঠ কর্মীগণ সাপ্তাহিক কিস্তির টাকা আদায় করে । ঋণ গ্রহণের দিন থেকে তার সাপ্তাহিক কিস্তি প্রদানের সময় নির্ধারীত হয়। যে হতদরিদ্র কৃষক ুদ্র ঋণ গ্রহণ করেন তার বিনিয়োগকৃত টাকার মুনাফা অর্জনের পুর্বেই চলে কিস্তির টাকা প্রদান। এ কারণে ঋণ গ্রহণকারী ব্যাক্তির পুঁজির পরিমাণও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বছরের শেষ সময়ে গিয়ে দেখা যায় তিনি ঋণের পুরো টাকা তার দারিদ্র বিমোচনের কাজে ব্যবহার করতে পারছেন না।
ফলে ভেস্তে যায় তার দারিদ্র বিমোচন প্রকল্প। আবার অনেক েেত্র দেখা যায় একটি বেসরকারী সংস্থার কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে অন্য সংস্থার ঋণ পরিশোধ করছেন। কোন কোন েেত্র দেখা যায় একই ব্যাক্তি ৫/৬ টি সংস্থার কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন। বছরের পর বছর কিস্তি সহ ঋণের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে ঋণগ্রস্ত লোকটি দীর্ঘ মেয়াদী কিস্তি ও ভিন্ন ভিন্ন সুদের টাকা প্রদান করতে গিয়ে বাস্তুহারা লোকে পরিণত হয়েছেন।
হাওর এলাকায় ুদ্র ঋণ কার্যক্রমে নিয়োজিত বিভিন্ন নামকরা জাতীয় ও আঞ্চলিক বেসরকারী সংস্থা হতদরিদ্র লোকজনের মধ্যে বেশ কয়েকটি খাতে ুদ্র ঋণ বিতরণ করে থাকে। এগুলোর মধ্যে হলো মহিলাদের জন্য হাঁসমুরগি ও গোবাদিপশু পালন, ছোট ছোট মুদি দোকানের জন্য ঋণ, ুদ্র কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়, কুটির শিল্পজাত পণ্য উৎপাদন, পুরুষ সদস্যদের জন্য মাছচাষ, কৃষিকাজ সহ আরও বেশ কয়েকটি খাতে ঋন বিতরণ করে থাকে। কিন্তু বাস্তবে এসব কর্মকান্ডের দেখা পাওয় খুব দুষকর। যদিও ঋণ বিতরণের সময় প্রতিটি মাঠকর্মী এবিষয় গুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল ঋণ বিতরণ করা হয়। এবিষয় গুলো শুধু বেসরকারী সংস্থার কাগজেই সুনিশ্চিত করা হয়।
হতদরিদ্র লোকদের মধ্যে ঋণ বিতরণের জন্য নির্ধারিত ফরমে ৩/৪ টি ুদ্র প্রকল্পের কথা লিখা থাকে। এেেত্র প্রথম পছন্দ,দ্বিতীয় পছন্দ, তৃতীয় পছন্দ,ও সর্বশেষ চতুর্থ পছন্দ প্রকল্প দেয়া থাকে যাতে করে যেকোন একটি প্রকল্প ঋণ গ্রহীতার খাতে ধরা যেতে পারে মুলত এ উদ্দেশ্যেই তারা ঋণ প্রদানের ফরমে ৩/৪টি বিষয়ের কথা উল্লেখ করে থাকে। বেসরকারী সংস্থার ঋণ বিতরণের েেত্র প্রতিযোগীতা মুলক টার্গেট থাকে। প্রতি বছর ঋণ বিতরণের হার এবং ঋণ আদায়ের হার ক্রমবর্ধমান অবস্থায় থাকে। প্রত্যেক বছর ঋণ বিতরণ ও আদায়ের হার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী বছরের সংস্থার কর্মপরিকল্পনা ও পলিসি নির্ধরণ করা হয়।
বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক বেসরকারী সংস্থা কয়েক লাখ টকা পুঁজি নিয়ে ুদ্র ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করলেও বর্তমানে তারা কোটি কোটি টাকার মালিক। চারদলীয় জোট সরকারের সময় শুধুমাত্র সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রদেয় সনদ সংগ্রহ করে তারা ুদ্র ঋণ কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করে এখন বিপুল পরিমাণ পুঁজির মালিক। অতি দরিদ্র ও ভুমি হীন লোকজন তাদের নিয়মিত আয়রোজগার না থাকায় দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদী ুদ্রঋণ গ্রহণ করে নানান বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হয়। নির্ধারিত দিনে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে আবারও তারা গ্রাম্য মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কিস্তি পরিশোধ করে থাকে। হাওর পাড়ের লোকজনের দীর্ঘমেয়াদী স্থায়ী কর্মসংস্থানের কোন সুযোগ না থাকায় বছরের পর বছর দারিদ্রতর দিনযাপন করে থাকে।
বেসরকারী সংস্থার ওপর সরকারী মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় তাদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদহিতার যথেষ্ট অভাব পরিলতি হয়। বছরের ৬ মাস কৃষি কাজে নিয়োজিত ব্যাক্তিগন বর্ষাকালে কর্মসংস্থানের অভাবে তাদের পরিবার পরিজন ফেলে দেশের বিভিন্ন কাজের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। এদের বৃহৎ একটি অংশ বৃহত্তর সিলেটের বেশ কয়েকটি পাথর কোয়রীতে স্বল্প মেয়াদে কাজ করে। এদিকে তাদের পরিবার পরিজন অর্থাভাবে মানবেতর জীবন যাপন করে। সে সময় তারা বেঁচে থাকার বাধ্য হয়ে বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা ও ব্যাক্তির নিকট থেকে চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করে থাকে।
বাংলাদেশ সরকার মিলেনিয়ায়াম ডেভলাপমেন্ট গোল বা সহস্রাব্দ উন্নয়ন ল্যমাত্রা অনুযায়ী চরম দারিদ্র ও ুধা নির্মুলের জন্য যাদের দৈনিক মাথাপিছু আয় ১ ডলারের কম তাদের সংখ্যা ২০১৫ সালের মধ্যে শতকরা ৫৮.৮ ভাগ থেকে ২৯.৪ ভাগে নামিয়ে আনা। সামষ্টিক হত দারিদ্রের অনুপাতিক অংশ ২৮ ভাগ থেকে ১৪ ভাগে নামিয়ে আনা। অর্থাৎ হত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রকৃত ক্রয় মতা বাড়ানো। মিলেনিয়ায়াম ডেভলাপমেন্ট গোল বা সহস্রাব্দ উন্নয়ন ল্যমাত্রা অনুযায়ী দারিদ্রের মাপকাঠি নির্ধারিত হয়েছে এসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর অপর্যাপ্ত ও অস্থিতিশীল আয় যা জীবনযাত্রার অন্যান্য উপকরণের ওপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে এবং সে সাথে তাদের কে আরও বেশী বেশী ঋণগ্রস্ত করে ফেলে। ব্যাক্তি , পরিবার অথবা গোষ্ঠী পর্যায়ে অপর্যাপ্ত এবং অস্থিতিশীল বা প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন এরকম সম্পদের মালিকানা।
ঝুঁকিপুর্ণ এবং স্বল্পায়তনের আবাসন ব্যবস্থা , পানি ওপয় নিষ্কাশনের েেত্র অপর্যাপ্ত জনসেবা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে দৈনন্দিন আয় হ্রাস সহ প্রভৃতি। বর্তমানে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় এসব কোনটির কোন বিশেষ মানন্নোয়ন ঘটেনি। সুবিশাল জনগোষ্ঠীর সিংহভাগই এসব সমস্যা কাটিয়ে উটতে পারেনি। ক্রামাগত আগাম বন্যার কারণে হাওর পাড়ের ুদ্র মাঝারি উচ্চ বিত্ত কৃষক হারিয়েছে তাদের সর্বস্ব । সেই সাথে তাদের জীবন মানের মারাত্মক অবনতি হয়েছে এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে ভুমিহীন কৃষি শ্রমিকের দৈনিক আয়ের ওপর।
কোন কোন েেত্র কৃষি শ্রমিকের মুজুরী বাড়লেও এ পরিমাণ মুজুরীর বিনিময়ে উচ্চ বিত্ত কৃষকরা আর কৃষি শ্রমিক রাখতে রাজী হচ্ছেনা। ফলে তাদের কর্মসংস্থানের ত্রে সীমিত হয়ে পড়েছে। সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার দীর্ঘ ও মাঝারি মেয়াদী পরিকল্পনার অভাবে তাদের টিকসই কর্মস্থানের কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না । আলোচিত ওয়ান ইলেভেনের পট পরিবর্তনের দ্রব্য মুল্যের উর্ধ্বগতি কারণে হাওর পাড়ের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যায় অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। সে অনুযায়ী তাদের দৈনন্দিন আয় ও কর্মসংস্থান বাড়েনি।
বর্তমানে হাওরা এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে প্রয়োজন দীর্ঘ মেয়াদী কর্মস্থানের ব্যবস্থা করা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।