ভালোকে আমার ভয়,ভালো বেশীদিন থাকবেনা... মন্দকে আমার ভয়, কেননা আমি দুর্বল, আঘাত সইতে পারবোনা... সাফল্যকে আমার ভয়, ব্যর্থতাকেও ভয়... নিরন্তর ব্যস্ততার মহাকালে আমার করণীয় কিছুই নেই... যোগ্যের পৃথিবীতে আমি অযোগ্য, অধম... সেই চেনা পথ...
মসজিদ.. অ্যাকাডেমি.. কাদাপানি..
প্রতি রবি, মঙ্গল আর বৃহস্পতিবার।
খুব সাবধানে, ধীর পায়ে হেঁটে যাই, কাদাকে আমার ভীষণ ভয়।
এই পথেই রোজই একটা মানুষ কালো রঙের একটা গাড়ির বাইরে মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে... রোজ...
মসজিদের সামনে ঠিক তিন রাস্তার মাথায়... কথা বলেনা কোনদিন..
প্রতিদিন কালো জামায় বের হই.. আজ ইচ্ছে হল নীল স্কার্ট পরি...
হাঁটছি, গত পরশু কিংবা তারও দুইদিন আগের চেয়ে সাবধানে...
জানি স্যার পড়াবেন না.. তবুও যাচ্ছি... কেমন একটা নেশা লেগে গেছে সেই চাহনিতে...
আজো দেখেছি সেই মানুষটা স্যার এর বাসায় যাবার পথে... একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে..
আমাকে দেখেই সামনে এগিয়ে এলো...
ঃ কালো বিষাদ ভেঙ্গেছে?? আজ ভর করেছে নীল বেদনারা... আকাশের মতো অসীম দেখাচ্ছে হৃদয়ের পরিধি...
আর শুনতে পারলাম না...
বসে আছি স্যার এর কম্পিউটার এ...
হঠাৎ একটা সাইট এ একটা কবিতা চোখে পড়ে গেলো...
'' তোমার সাথে প্রথম কথায় বলতে চেয়েছিলাম
-পৃথিবীর মানুষগুলোর প্রতি এতো উদাসীনতা কেন তোমার?
কেন আনন্দের অনুভূতিতে তুমি নির্বাক??
প্রশ্ন না জেনেই উত্তর আপনা থেকেই দিলে তুমি
-যেদিন ভালবাসায় সাড়া দিতে শিখে যাবো, সেদিন কেউ ধরে রাখতে পারবেনা...
জানিনা কোন অজানা ব্যর্থতায় নিজেকে আঁধারে ঘিরে রাখো তুমি...
জানো, খুব ইচ্ছে করে চারদেয়ালের মাঝে নিজ হাতে নির্বাসন দেয়া তোমার সেই হাসিখুশি রূপটি দেখতে...
বড় কঠিন তুমি... ''
- মাহতাব
লেখাটা ভালোই, ছোট অথচ সাবলীল...
স্যার আসলেন। বললেন, জানো না আজ পড়াবোনা?
মাথা নিচু করে বললাম, না স্যার।
বেরোবো এমন সময় আবার বললেন,
তুমি কেন এসেছ আমি জানি।
আমার চেয়ে ভালোভাবে তোমাকে আর কেউ চেনে? চল্লিশোর্ধ্ব একটা লোক তোমার জন্যে দাঁড়িয়ে থাকে। আর তুমিও তাকে দেখতেই আসো?
মাহতাবকে আমি চিনি। পরিবেশ পরিস্থিতি বিচার করেই পথ চলতে হয়। অনর্থক আবেগে আপ্লুত হয়ে কাজ নেই। যা পাবার আশা নেই, তার পিছে ছুটবেনা।
কেন তার জন্যে এতো অস্থিরতা তোমার?
মাহতাব??? যার লেখা পড়লাম, এটাই কি সেই মাহতাব??
আমি আর দাঁড়াতে পারছিনা এখানে।
স্যারকে আজকে খুব ভিন্ন দেখাচ্ছে, কথাগুলোও আগের চেয়ে অনেক আন্তরিক, স্নেহময়, পরিচিত... এমন লাগছে কেন?
বের হয়ে আসলাম...
হাঁটছি... অসাবধানে... কাদা লাগছে অনেক... খুব ঘেন্না লাগছে... কান্না পাচ্ছে...
****
কাঁদতে কাঁদতে ঘুম ভেঙে গেলো। আবিষ্কার করলাম, স্বপ্নে দেখছিলাম।
ছোটখাটো স্বপ্ননাটক। পড়তে গিয়ে আজ গভীর ঘুম ঘুমিয়েছি, সন্ধ্যা ৭ঃ৩৫ থেকে ১১ঃ৩০।
এই মাহতাব কে আমি চিনিনা। লেখাগুলো স্পষ্ট চোখের সামনে ভাসছে এখনো।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, স্যারকে পরচিত লাগার কারণ পেয়েছি। তিনি আর কেউ নন। স্বয়ং আমার আব্বু।
দীর্ঘদিন আব্বুকে স্বপ্নে দেখিনা। এই স্বপ্নে দেখার সাথে পার্থিব কাজের একটা যোগসূত্র আছে। সেটা হল, আমি কয়েকদিন কবরস্থানে না গেলে আব্বুকে স্বপ্নে দেখিনা।
এই ব্যবধানটা যদি খুব লম্বা সময়ের হয়, তবে দেখি একরাশ অভিমান নিয়ে স্বপ্নে এসছেন। রাগ করে গাল ফুলিয়ে থাকবেন, কখনো ন্যুডলস খেতে চাইবেন কিন্তু দিলে খাবেন না, অথবা কেঁদে ফেলবেন।
আমি যখনি অর্থনৈতিক সমস্যায় থাকি, দুশ্চিন্তায় থাকি, সেটা সমাধানের ঠিক ২ দিন/ ৩ দিন আগে আমি দেখি আব্বু মাথায় হাত বুলিয়ে বলছেন, চিন্তা করবানা আম্মু, টাকার যোগাড় হয়ে গেছে।
হয়তো ফর্ম ফিলআপের টাকার জোগাড় নেই, আম্মুর ওষুধের জোগাড় নেই, আমি কেঁদেছি। স্বপ্নে দেখেছি আব্বুকে, সান্তনা দিচ্ছেন ঠিক হয়ে যাবে, হয়েছে।
আম্মুর সাথে কোন কিছু নিয়ে ঝগড়া করেছি, স্বপ্নে দেখেছি শুধরাতে বলছেন।
ভুল করলেই পথ দেখিয়ে দিয়ে যান।
কিন্তু আজ স্বপ্নের ব্যাখ্যা পাচ্ছিনা। ৪০ বছর বয়সের কাওকে আমি চিনি না, এমনকি কাওকে নিয়ে ভুলভাল ভাবছিওনা।
মাথাটা জমে আছে...খুব খারাপ লাগছে আমার... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।