আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জানিনা

নির্ঝরা বলল, মা আমি বাইরে যাচ্ছি । কোথায় যাবি রে ? এই তো একটু কাজ আছে । মা আর কোন প্রশ্ন করলনা । কারন তিনি জানেন তার এই মেয়েটি অকারণে ঘোরাফেরা করেনা । নির্ঝরা বাইরে বের হয়ে আসল ।

মনে মনে ভাবল কোথায় যাবে সে । তার যে কিছুই ভাল লাগছেনা । একা একা রাস্তায় হাঁটতে থাকে আর ভাবছে কেন এমন হচ্ছে । এই একুশ বছর বয়সে কখনও তার এমনটি হয়নি । সে যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলছে ।

তার শুধু ওই দিনের কথা মনে পরছে । সেদিন ছিল পহেলা বৈশাখ । সেই ছেলেটির কথা সে নতুন করে ভাবছে কেন ? কই আগেও তো আরাব এর সাথে কথা হয়েছে কিন্তু এখন এমন লাগছে কেন । কি মিষ্টিই না দেখতে আরাব । ওই দিন সাদা-লাল পাঞ্জাবিতে দারুন লাগছিল ।

সারাদিন আমরা সবাই মিলে কত হইচইই না করেছি, কত মজা করেছি । কিন্তু সবার মধ্যে বসে আমি যখন গান গাচ্ছিলাম তখন আরাব আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিল । সেই তাকানোর কথাটাই আমি ভুলতে পারছিনা । হঠাৎ গাড়ীর হর্ণ এসে নির্ঝরার কানে বাজল । হাটতে হাটতে কখন যে রাস্তার মাঝে এসে পরেছে বোঝে উঠতে পারেনি ।

সে খুব লজ্জা পেল । ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে একটা বেজে গেছে । তার বাসায় ফেরার সময় হয়ে গেছে । কিন্তু তার যে ব্যাঙ্কে যাওয়ার কথা কথা ছিল ,সেটা ত হলনা । সে বাসায় ফিরল ।

ঘরে ঢু্কতেই ঝোটন এসে বলল, আপু চকলেট দাও । সে বলল আজ আনিনি । কথাটা বলতে তার খুব খারাপ লাগল । কারন যখন ই সে বাইরে যায় ঝোটনের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসে । মা এসে বলল, খাবি চল।

নির্ঝরার খেতে ইচ্ছে করছিলনা, তবুও গেল । খাওয়া শেষ করে তার রুমে যেতে না যেতেই তার ফোন বেজে উঠল । হ্যালো , নির্ঝরা কি করিস ? কিছু না; কেন? আজ সন্ধায় একটা পার্টি আছে, তুই আসবি? না, আমি আসবনা । প্লিজ আয়না, খুব মজা হবে । ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও তার বলতে হল, আচ্ছা আসব ।

ফোনটা কেটে দেয়ার পর সে ভাবল ,ধ্রুবকে সে কেন ই বা হ্যাঁ বলল । তার ভাল না লাগাটা এবার আর একটু নাড়াচাড়া দিয়ে উঠল । মিষ্টি এসে বলল, আপু আমাকে ১০০ টাকা দিবি ? কেন? আমার এক বন্ধুও জন্মদিন, তার জন্য গিফট কিনব। নির্ঝরা তার এই ছোট বোনটিকে কখন না বলতে পারেনি। আজ ও তার ব্যতিক্রম হলনা ।

থ্যাঙ্ক ইউ। এখন যা এখান থেকে । মিষ্টি চলে গেল । ধ্রুব, আরাব,গোধুলি, রেমি আর মিশুক মিলে পার্টির আয়োজন করেছে । পার্টি ধ্রুবর বাসায়।

ধ্রুবর বাবা বড় ব্যবসায়ী, তার মা ও চাকরি করে । তারা সারাদিন বাইরে থাকে । ধ্রুব বাসায় একা একাই থাকে । তার কোন ভাইবোন নেই । আজ গোধুলি, রেমি আর মিশুক মিলে রান্না করবে ।

তাদের রান্না চলছে। নির্ঝরা আজ একটা জলপাই রঙ এর শাড়ি পরল । দেখতে যে সে খুব সুন্দর তা কিন্তু নয়। তবে চেহারায় একটা মিষ্টি মিষ্টি ভাব আছে । তার চুল সুন্দর আর লম্বা ।

শাড়িতে তাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে । কপালে টিপ ও পড়ল সে । নির্ঝরা ঘর থেকে বেরিয়ে তার ছাত্রীকে পড়াতে গেল । ওখান থেকে গেল পার্টিতে । ওখানে আরাব কে দেখে তার নতুন এক অনুভূতি এল ।

সবাই মিলে অনেক নাচ-গান হল । খাবার ও অনেক ভাল হল । সব মিলে ভাল একটা পার্টি হল । তারপর অনেক দিন কেটে গেল । ক্লাস আর পরীক্ষা দিতে দিতে নির্ঝরা ক্লান্ত ।

আরাবের কথা সে কিছুতেই ভুলতে পারছিলনা । সামনে প্রফ পরীক্ষা । পড়তে পড়তে এক এক জনের পাগলের মত অবস্থা । গোধুলি , ধ্রুব, রেমি, মিশুক আর নির্ঝরার মধ্যে একটা দুরত্ব তৈরী হয়ে গেছে । পড়াশুনায় সবাই ব্যস্ত ।

পরীক্ষা শেষ হল । সবার মাঝে শান্তি শান্তি ভাব । ঠিক করা হল সবাই মিলে নৌকা ভ্রমনে যাওয়া হবে । নির্ঝরা ভাবতে লাগল, আরাব যদি থাকত ! কিন্তু সে জানে আরাব এখান থেকে অনেক দূরে থাকে, সে আসবে কি করে । ধ্রুব আর আরাব ছোট বেলার বন্ধু ।

তাই আরাব মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে আসে ধ্রুবর সাথে দেখা করতে । সেই সূত্রে আরাবের সাথে নির্ঝরার পরিচয় । তাদের প্রথম দেখা হয় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার সময় । আজ সবাই খুশী । আজ তাদের নৌকা ভ্রমন ।

নির্ঝরার মন অস্থির । সবাই যখন নৌকায় উঠে বসল তখনি হঠাৎ করে নির্ঝরাকে চমকে দিয়ে আরাব হাজির । সবার সাথে আরাবের ভাব বিনিময় হল । নির্ঝরা খুশীতে বাকহীন। সে আজ আরাবের সাথে বসল ।

নির্ঝরা বলল, কি খবর আরাব? হ্যাঁ ভাল । তুমি তো ঢাকা গেলে আমাকে ভুলে যাও। কি করে বুঝলে? না বোঝার কি আছে । ভুলেই তো যাও। না হলে একবার একটা ফোন তো দিতে ।

কিভাবে দিব? কেন ফোন দিয়ে । নাম্বার তো নাই। সেটা নিলেই পার । আর তোমারটা দাও। নাকি তোমারটা দিলে তোমার প্রেমিকা রাগ করবে ? তাদের ফোন নাম্বার দেয়া নেয়া হল।

তোমার গার্লফ্রেন্ড কোথায় থাকে? জানিনা না তো। মানে? সত্যিই জানিনা । সেদিন নৌকাভ্রমন ভালই হল। সমস্যাটা হল তার দুই দিন পর। নির্ঝরার কাছে এখন আরাবের নাম্বার আছে ।

সে কি আরাব কে ফোন দিবে? কেন দিবে আরাব তার কে? নির্ঝরা, মা কোথায় তুই? মা, রুমেই তো আছি। ও আচ্ছা । তোর সাথে আমার কথা আছে। কি কথা মা? তোর সাথে আজকাল কথা বলার সময়ই হয়না । যাই হোক, তুই যদি একটু ঝোটন কে পড়াতি খুব ভাল হত।

ওর রেজাল্ট এবার ভাল হয়নি । আর একটা কথা, আমি একটু সকাল সকাল স্কুলে যাব, স্কুলে বড্ড চাপ বেড়েছে। তুই রান্নাটা করিস। আচ্ছা মা তুমি চিন্তা করোনা। নির্ঝরার বাবা মারা গেছে ৫ বছর হয়ে গেছে।

তার মা প্রাইমারি স্কুল টিচার । নির্ঝরা নিজে টিউশনি করে নিজের খরচ চালায়। তার অনেক স্বপ্ন । সে একদিন অনেক বড় ডাক্তার হবে । এসব কথা ভাবতে ভাবতে নির্ঝরা ঘুমিয়ে পড়ল।

ফোনের আওয়াজে তার ঘুম ভাংল। হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ। কে? আমি আরাব। নির্ঝরার মনটা আনন্দে ভরে গেল। কিন্তু কোন এক অজানা কারনে সে তা প্রকাশ করতে পারলনা।

নির্ঝরার হঠাৎ মনে হল আজ সে ক্লাস করবেনা । আজ এমন কিছু করবে যা সে কোনদিন করেনি। আর তা ভেবেই সে আরাব কে বলে বসল তুমি কি কাল আমার সাথে একটু সময় দিতে পারবে? আরাব কিছু না ভেবেই বলে দিল, আচ্ছা। সার্কিট হাউজের পাশের ছোট্র পার্ক। পার্কটি ছোট হলেও অনেক সুন্দর ।

আর তারই একটি বেঞ্চে বসে আছে আরাব আর নির্ঝরা । কোন কথা নেই । নির্ঝরা, কিছু বলছনা যে? আচ্ছা তুমি আজ কেন এলে? তোমার জন্য। মানে? জানিনা। জাননা, নাকি বলবেনা? বলবনা।

তোমাকে একটা প্রশ্ন করি? সোজাসুজি উত্তর দিবে। আমায় ভালবাস? এটা কেমন প্রশ্ন? হেয়ালি করোনা। বল। জানিনা। আমাকে পছন্দ কর? জানিনা।

এভাবে আহাম্মকের মত তাকিয়ে আছ কেন? জানিনা । এখানে কেন এসেছ? জানিনা। আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে? জানিনা……। । *************************************************** ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।