আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তারেক ও ক্যাথেরিন মাসুদের অন্তর্যাত্রা বা সিলেটী ডায়াসপোরা কিংবা দি হোমল্যান্ড মানে পিতৃভূমি

রায়হান রাইন

তারেক ও ক্যাথেরিন মাসুদ পরিচালিত অন্তর্যাত্রা ছবিটি দেখার কিছুদিন আগে পড়তে পেরেছিলাম ডায়াপোরিক বাস্তবতা নিয়ে লেখা মিলান কুন্ডেরার সাম্প্রতিক উপন্যাস ইগনোরেন্স। তাই প্রবাসী মানুষের আত্মিক সংকট আর আত্মপরিচয় খোঁজার করুণ অধিবিদ্যা বুঝতে পারা যাচ্ছিল খুব সহজে। উপন্যাসে কুন্ডেরা সেমিওলজির উচিৎ শিক্ষকের মতোই বোঝাচ্ছিলেন, ডায়াসপোরা এমন এক অদ্ভুতরকম নস্টালজিয়া, স্মৃতি নয় বরং স্মৃতিহীনতা যাকে তীব্রতর করে। নস্টালজিয়া স্মৃতির মধ্যস্থতায় সক্রিয় হয়, কিন্তু ডায়াসপোরিক নস্টালজিয়া তীব্র হয় নিজ দেশের স্মৃতি যখন দুর্বল আর শূন্য হয়ে ওঠে, ক্রমশ সে যখন হারাতে থাকে তার সত্তার অবলম্বন। কুড়ি বছর ধরে অডিসিউস কেবলই ভেবেছে, কবে সে নিজের মাতৃভূমিতে ফিরবে।

কিন্তু যখন সে ফিরে এসেছে ইথাকায়, তাজ্জব হয়ে দেখেছে, তার জীবনের সারবস্তু, তার সব থেকে মূল্যবান সম্পদ রয়ে গেছে ইথাকার বাইরে। জীবনের কুড়িটি বছর! কেন্দ্রচ্যূৎ বোধ করেছে সে। অভিবাসী মানুষের এটাই নিয়তি। নিজের দেশ, তার মানুষজন, ভাষা-সংস্কৃতি-অভ্যাস এমনকি মৃত পূর্বপুরুষেরা-- তার সমস্ত সত্তা যা দিয়ে গড়া, যেখান থেকে তার পরিচয় সূচিত হয় তা থেকে সে নির্বাসিত, এবং সে সব সময় সেখানেই ফিরতে চায়; যদি সে ফিরেও আসে, সে দেখবে, রেখে যাওয়া স্বদেশ তাকেও রেখে গেছে তার ছেড়ে যাবার জায়গাটিতে। আর ততোদিনে নিজেও সে তৈরি করে ফেলেছে আরেকটি কেন্দ্র, যাকে সে কোনো রকমে অস্বীকার করতে পারে না।

অডিসিউসকে কেউ জিজ্ঞাসা করে না, তার পরবাসে কী ঘটেছিল-- সবাই কেবল বলে, তার অনুপস্থিতিতে বা তারও আগে কী কী ঘটেছিল ইথাকায়। মানখানের একান্ত সময়টা আর দাঁড়াবার জায়গা পায় না। নিজের সত্তার মাঝখানে তীব্র এক ছুরির বিভাজন। এই সংকর পরিচয় আর আত্মিক সঙ্কটকে অনেক যাতনাসহ মেনে নিতে হয় অভিবাসী মানুষকে। তারেক মাসুদ ও ক্যাথেরিন মাসুদের অন্তর্যাত্রা সেই আত্মিক সংকটের ভেতর দিয়ে আত্মআবিস্কার ও নিজের কাছে ফেরার ছবি।

ছবিটি শুরু হয় লন্ডন প্রবাসী শিরিন ও তার ছেলে সোহেলের আকস্মিকভাবে দেশে ফেরার ঘটনা দিয়ে। প্রাক্তন স্বামীর মৃত্যু সংবাদ শিরিন ও তার পুত্রকে দেশে ফিরিয়ে আনে। পনের বছর পর দেশে ফিরে শিরিন তার স্মৃতির শহরকে খোঁজে। পুরানো বান্ধবী ও অন্যান্য মানুষজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ, সম্পর্কের জটিল ও খানিকটা বিব্রতকর পরিবেশে স্বামীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ, সন্তানের সঙ্গে গভীর বোঝাপড়া এসবের মধ্য দিয়ে শিরিনের ভেতরের সঙ্কটগুলো স্পষ্ট হয়। অন্যদিকে, সোহেল-- লন্ডনের মিশ্র সংস্কৃতিতে যার বেড়ে ওঠা, মাতৃভূমির কোনো স্মৃতিই যার নেই, দেশে ফিরলে কল্পনার মাতৃভূমিটি জীবন্ত হয়ে ওঠে তার ভেতর।

মৃত বাবাকে মনে হয় ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটার চেয়ে বেশি কিছু। স্মৃতিহীন মাতৃভূমি, পিতামহ, মৃত বাবা, নিজের মানুষজন ও তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের ভেতর সে নিজেকে খোঁজে। সে বুঝতে পারে, এখানে এমন কিছু রয়ে গেছে যার জন্য বার বার ফিরে আসতে হবে তাকে। ছবিতে প্রধান চরিত্রদুটোর মানসযাত্রা ও তার অভিঘাতগুলোকে স্পষ্ট করতে ব্যবহার করা হয়েছে চিন্তাকে সংলাপ ইত্যাদিতে রূপ দেবার সহজ কৌশল। কখনো কখনো কাজে লেগেছে সোহেলের ল্যাপটপে লেখা ডায়েরিটি।

দেশে ফিরে মায়ের পুরানো বাড়ির একটা ঘরে বসে ছেলে লিখছে, ‌‌'ভাবিনি এখানে আসা হবে। এসে মনে হচ্ছে যেন দীর্ঘদিন এই ফেরার অপেক্ষাতেই ছিলাম। ' লিখছে, বাবা মারা যাবার অনেক আগে থেকেই মা তাকে তার কাছে মৃত করে রেখেছে। এ নিয়ে এতদিন সে কোনো প্রশ্ন তোলেনি। অনেক কিছুই সে জানে না।

এখন সে জানতে চায়, বুঝতে চায় সবকিছু। ছবির এই জায়গাটির তাৎপর্য লক্ষ্ করার মতো। সোহেলের মাতৃভূমিতে ফেরা এবং আত্মআবিস্কারের এই তাড়না আপতিক নয়। দুটো ঘটনা ব্যক্তি অস্তিত্বের গড়নের সঙ্গে সহসম্পর্কিত হয়ে যুক্ত থাকে-- নিজের অস্তিত্বের জমিতে দাঁড়ানো এবং নিজেকে খুঁজতে চাওয়া। মাকে সে প্রশ্নবিদ্ধ করে, অস্বীকার করে, তার ইচ্ছাই যে সব নয় সে কথাও সে জানিয়ে দেয়।

মাতৃভূমিই যেন তাকে দিয়েছে মাকে ছাড়িয়ে যাবার উস্কানি। কিন্তু সেটা ঘটেছে পিতৃঅস্তিত্বকে নিজের ভেতরে অনুভবের পর, মৃত পিতা জীবিত পিতার থেকেও যেন শক্তিশালী। এই জায়গাটায় এসে ছবিটির মাতৃভূমি বেশিমাত্রায় পিতৃভূমি হয়ে উঠেছে। সিলেটে গিয়ে পিতামহের সঙ্গে ছেলের ঘনিষ্টতা হয়-- দাদার চরিত্রটি তাকে দারুণভাবে মুগ্ধ করে। বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার রাতে সে ডায়েরীর পাতায় মৃত বাবার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখে, কিভাবে সোহেলকে তিনি পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত করতে পারলেন, নিজে যিনি এমন একজন ভালো বাবা পেয়েছিলেন! ট্রেনে সিলেট থেকে ফেরার পথে সোহেল পিতামহের বলা কথাগুলো নিয়ে ভাবে, মৃত্যু কি সত্যিই মানুষকে একত্রিত করে নাকি বিভক্ত করে? ট্রেনের জানালা দিয়ে আলো পড়া মায়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে সে ভাবে, কে তার বেশি কাছে, মায়ের ঘুমন্ত মুখ, নাকি ফ্রেমে বাঁধানো বাবার ছবি? অনুপস্থিত মাতৃভূমি যেভাবে তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে তেমনই মৃত বাবা সেই স্বদেশের সঙ্গে ক্রমশ অভিন্ন হয়ে ওঠে।

বাংলোর সিঁড়িতে বসে সৎ বোন রিনির সঙ্গে সোহেলের সাপলুডু খেলার দৃশ্যটি অনন্য-- রিনি তাকে খেলাটি বোঝাচ্ছে, তুমি যখন ১০০তে পৌঁছাবে তখন ‌'হোম'-এ পৌঁছে গেলে আর হোম মানে ফিনিস, খেলা শেষ..। চা-বাগানের রাত্রিটি-- পূর্ণ চাঁদের উজ্জ্বল অথচ বিষন্ণ এক রাত্রি যখন বাংলোর দেয়ালে বাবার ছবি দেখে সোহেল তার ডায়েরিতে লেখে, তুমি কি আমাকে শুনছো, বাবা? আমি তোমাকে অনুভব করছি। বাইরে চা-শ্রমিকেরা এই রাত্রিরই কোনোখানে বসে গাইছে তাদের ভাষার বিষাদময় একটি গান-- কন্যার দিকে শেষবার ভালো করে তাকাও। ছোট্ট মেয়ে আমার ফিরে আসবে অতি অল্প সময়ের জন্য, আসবে আমার হৃদয়কে কাঁদাতে। ছোট্ট পাখিটাকে আমি বড় করেছি ঘরে, সে যাবে উড়ে।

কোনোদিন সে ফিরে আসবে নীল চন্দ্রালোকে, ফিরে এসে সে আমার হৃদয়কে কাঁদাবে। ছবির এই বিষাদরাত্রিটি হয়ে উঠেছে এমন একটি জায়গা যেখানে একটি ছবির প্রাণ নিহিত থাকে। স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানসহ নিজেকে নির্বাসিত করেছে শিরিন; স্বার্থপরভাবে সন্তানকে আলাদা করে তারই কাছে নিজের আশ্রয় খুঁজেছে। সন্তানটি পুত্র না হয়ে কন্যা হলে এই আশ্রয়ের ধরন কেমন হতো সেটা ছবি থেকে বোঝা যায় না। স্বামীর প্রতি প্রতিশোধের জায়গাটির বাইরে খুব একটা বেরুতে পারেনি শিরিন।

সেই অর্থে চরিত্রটি সংকীর্ণ একটি জায়গাতে আটকে থেকেছে। নিজের শৈশব-কৈশোরের পুরান ঢাকাকে ঘুরে ঘুরে দেখার ঘটনাটি নিছক স্মৃতিচারণের মধ্যেই শেষ হয়-- ফিরে দেখার জায়গাটিকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না-- এই নস্টালজিয়া তাকে পুনরুত্থিত করে না। ছবির গল্পে ঝুম্পা লাহিড়ির নেমসেক উপন্যাসটির ছায়া খুব স্পষ্ট। উপন্যাসটি ভারতীয় ডায়াসপোরার পটভূমিতে লেখা। এতে কলকাতার এক গাঙ্গুলী পরিবার পারিবারিক বিয়ের পর আমেরিকায় অভিবাসী হয়ে ভিনদেশী সংস্কৃতিতে নিজেদেরকে মানিয়ে নেয়।

তাদের সন্তান গোগোল গাঙ্গুলী বেড়ে ওঠে আমেরিকান টিনএজারদের মতো করেই। মাতৃভূমি বা ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি খুব একটা টান নেই তার। কিন্তু তার ভারতবর্ষ ঘুরে যাওয়া, পিতার মৃত্যু, প্রেমিকার ছেড়ে যাওয়া (সেখানকার ভারতীয় অভিবাসীদের দ্বিতীয় প্রজন্মের যে মেয়েটিকে সে ভেবেছিল বেস্ট ম্যাচ)-- এসব ঘটনা তাকে ফিরিয়ে আনে পিতার কাছে, ক্রমশ খুলতে থাকে আত্মোপলব্ধির দরজা এবং পিতা আর মাতৃভূমিই তার অস্থির আত্মাকে জায়গা করে দেয়। ধ্রুপদী সঙ্গীত শিখতো অসীমা গাঙ্গুলী-- গোগোলের মা-- সেখান থেকে সরতে হলেও নিজের মাতৃভূমি ও সংস্কৃতিকে সে আগলে রেখেছে নিজের ভেতর। অন্যদিকে অন্তর্যাত্রায়, সঙ্গীত ছিল শিরিনের আত্মসত্তার স্মারক, সেটি হারিয়ে নিঃস্ব বোধ করেছে সে এবং বিবাহ-বিচ্ছেদ নিয়েছে; কেবল তাই নয় নিজের দেশ মানুষজন সবকিছু ছেড়ে সন্তানকে অবলম্বন করে লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছে।

নেমসেকের অসীমা গাঙ্গুলীর মধ্যে অভিবাসী জীবনের দশাগ্রস্ত অবস্থা যেভাবে উপস্থিত, অন্তর্যাত্রার শিরিনে তা নেই। নিজের দেশে ফেরার অপেক্ষা অসীমার কাছে জীবন-ব্যাপী এক গর্ভাবস্থার মতো, যে অপেক্ষায় ভীষণ কাতর বোধ করেছে সে। শিরিন চরিত্রটি ছবিতে একটি সংকীর্ণ গণ্ডীর বাইরে বেরুতে পারেনি। ছবিতে দেশত্যাগ, উদ্বাস্তু দশা, ঘরে ফেরা এই সব প্রসঙ্গ এসেছে বিভিন্ন চরিত্রের কথাবার্তায়। গৃহপরিচারক লক্ষণ দাস নিজের অবস্থাকে দেশভাগের ছড়া দিয়ে বর্ণনা করেছে শিরিনের কাছে।

সে-ই যেন ধরা-খাওয়া এক সত্যিকারের চাঁড়াল। বাংলোর বারান্দায় বসে সোহেলের সঙ্গে বাক্যালাপে তার পিতামহ বাগানের চা-শ্রমিকদের দেশ-হারাবার এবং তাদের সঙ্কর আত্মপরিচয়ের কাহিনি শোনান। প্রকৃত দেশ যে মানুষের কল্পনার মধ্যে থাকে সেই সত্য জানাতে গিয়ে তিনি বিহারী উদ্বাস্তুদের কথা বলেন, যারা বাস করে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে। ইহুদী ডায়াসপোরার প্রসঙ্গও আসে। অন্তর্যাত্রা ছবিতে এসব অভিবাসনের ঘটনা কেবলই কথার কথা হয়ে থেকে গেছে।

গৃহপরিচারক লক্ষণ দাস কিভাবে এবং কেন প্রান্তিক হয়ে আছে, উড়িষ্যার নিজ বাসভূম থেকে কোন্ প্রক্রিয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের ধরে এনে চা-শ্রমিক বানানো হল, তাদের নির্মম বাস্তবতার কোনো ইঙ্গিত ছবিতে দেখা যায় না। সোহেলের ফুপা ইকবাল চা-বাগানের যে বাংলোতে থাকেন তার পদমর্যাদার ব্যবস্থাপকদের পায়ের জুতো খুলে দেয়া সহ রান্নাবান্না, ঘর-দোর মোছা, কাপড়-চোপড় ধোয়া ইত্যাদি সেবার জন্য ওই বাংলোতে কম করে হলেও দশজন চাপরাশি থাকবার কথা যারা ওই চা-শ্রমিকদেরই ভেতরের লোক, বাস্তবটা তেমনই। কিন্তু ছবিতে এদের কারো দেখাই মেলে না। ছবির ন্যারেটর যেন অভিবাসী মানুষের অভিযোজিত হওয়াটাকেই মেনে নিতে বলেন। জেনেভা ক্যাম্পের উদ্বাস্তুদের প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে, ভারতের বিহার রাজ্যে তাদের জন্ম, বাংলাদেশেই এখন তাদের বাস, কিন্তু এমন একটা দেশকে তারা নিজের ভাবছে যাকে চোখেও দেখেনি কোনোদিন।

সোহেলের পিতামহের জবানিতে বলা কথাগুলো অতিসরলীকৃত। প্রকৃত দেশ কেবল নয়, যে কোনো ভাবসত্যকেই কল্পনা ও স্বপ্ন করে মানুষ বাঁচে। কিন্তু সব বিহারী উদ্বাস্তুই কি পাকিস্তানকে নিজের দেশ ভাবে? কোনো কোনো পরিবার থেকে কিছু উদ্বাস্তুতো বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে যুদ্ধও করেছেন। বাস্তবতার এই বহু তল ও স্তর এবং তার উৎসকে খুঁজতে চাওয়া হয়নি ছবিতে। ছবির ন্যারেটিভ একরৈখিক, যা দিয়ে বহুতল বাস্তবতাকে অন্বেষণ করা দুঃসাধ্য ব্যাপার।

ছবিটির আখ্যানের সঙ্গে ছড়িয়ে আছে এমন একটি দেশ দুশো বছর ধরে আমরা যার ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিলাম। অথচ উত্তর ঔপনিবেশিক বাস্তবতার ছিটেফোটাও ছবিটিতে নেই। বরং ছবির সমীহ জাগানো একটি চরিত্র, সোহেলের পিতামহ, তাকে দিয়ে প্রশংসা করানো হয়েছে ব্রিটিশদের নিয়ম শৃঙ্খলার। ডানকান ব্রাদার্সের একটি চা-বাগান, যেমন একটি বাগানে ছবির অনেক দৃশ্য চিত্রায়িত হয়েছে, ক'বছর আগে সেখানে একবার ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমার। তখন দেখেছিলাম ব্রিটিশ সাহেবদের শৃঙ্খলা কী জিনিস।

বাগানের ব্যবস্থাপকেরা থাকেন যে বাংলোয়, তার আসবাবগুলো ব্রিটিশদেরই সাজিয়ে দেয়া। বাংলোতে বাস করা এদেশি কোনো ব্যবস্থাপকের এক্তিয়ার নেই যে সেই আসবাব-সজ্জার ব্যতিক্রম ঘটাবেন। শৃঙ্খলার এই অনন্যতার উৎস এমন এক এজেন্সির বোধ, খোঁজ করলে যার গোড়া পাওয়া যাবে একই সেই ঔপনিবেশিক কর্তাসত্তার ভেতর। অন্তর্যাত্রা চলচ্চিত্রটি বাস্তবতার ওই সকল তলকে খোঁজে না, বরং হয়ে ওঠে উপনিবেশের সহায়ক ও বন্ধুবৎসল। তারেক ও ক্যাথেরিন মাসুদ ছবিটি বানিয়েছেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহযোগিতা নিয়ে।

এই সহযোগিতা গ্রহণ অনেক ক্ষেত্রে পরিচালকের স্বাধীনতার জায়গাটিকে খাটো করে থাকবে হয়তো। কিন্তু শিল্প ও তার সৃষ্টির আনন্দ নিজের স্বাধীনতা থেকে কখনো ছুটি নিতে পারে না। অন্যথায় সেই আপোষের দায় শিল্পকেই তার পঙ্গুত্ব দিয়ে শোধ করতে হয়। অন্তর্যাত্রা ছবিটি সেই পরাধীনতার দায় খুব একটা এড়াতে পারেনি। তারেক মাসুদের একটি সাক্ষাৎকারের লিংক Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.