ভবঘুরে এ মানুষটাকে আপনিও চেনেন। মাথায় ডার্বি হ্যাট। নাকের নিচে টুথব্রাশের মতো গোঁফ। গায়ে আঁটোসাঁটো স্যুট। গলায় নেকটাই।
ঢোলাঢালা পায়জামার মতো প্যান্ট। পায়ে স্যু এবং হাতে একটি বেতের লাঠি। এ মানুষটির মুখের চেয়ে তার অঙ্গভঙ্গিই কথা বলে বেশি। আর তার হাঁটার ভঙ্গি! তা তো মার্কামারা। বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটা চরিত্রই কেবল এমন করে হাঁটেন।
আর তিনি হলেন চার্লি চ্যাপলিন।
হ্যাঁ, চার্লি চ্যাপলিন। চলচ্চিত্রের ইতিহাসে দুনিয়া কাঁপানো এ ব্যক্তিটির জন্ম ১৮৮৯ সালের ১৬ এপ্রিল, লন্ডনের ওলওয়ার্থে। তার পুরো নাম চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন। উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি।
তার বাবা-মা মিউজিক হলে পেশাদার বিনোদনকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। অবশ্য চ্যাপলিনের বয়স তিন হওয়ার আগেই তারা আলাদা হয়ে যান। চ্যাপলিন ও তার বড়ভাই সিডনি মানুষ হয় তার মায়ের কাছে। চ্যাপলিনের বাবা ছিলেন প্রচ- মদ্যপ। তার বয়স যখন বারো তখন তিনি মারা যান।
পরে তার মা অভিনেত্রী-গায়িকা লিলি হারভে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে পাগলা গারদে ভর্তি করা হয়। তখন চ্যাপলিন ও তার ভাইকে মঞ্চে কাজ করে উপার্জন করতে হয়। সেই ছোট্ট বয়সেই জীবনের কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়ে গিয়েছিল। চ্যাপলিনের ভবিষ্যৎ ছবিগুলোতে সে চিত্র উঠে এসেছে বারবার।
ছোটবেলা থেকেই চ্যাপলিন মঞ্চে দুর্দান্ত অভিনয় শিল্পী। অবশ্য তার মঞ্চে আসাটা হুট করে, মাত্র ৫ বছর বয়সে। একদিন মা খুব অসুস্থ। অথচ সেদিন তাকে মঞ্চে গান গাইতে হবে। এখন উপায়? মায়ের বদলে চ্যাপলিন এলো গান গাইতে।
তাতে যে সে ভালো করেছিল সেটা না বললেও চলে। যার ফলশ্রুতিতে মাত্র ৮ বছর বয়সেই তিনি মিউজিক্যাল দলের ট্যুরে যুক্ত হলেন। ২১ বছর বয়সে একটি দলের সঙ্গে যান নিউইয়র্কে। চ্যাপলিন ১৯১৩ সাল থেকে হলিউডে কাজ শুরু করেন। তার প্রথম ছবি মেকিং এ লিভিং (১৯১৪)।
১৯১৯ সালে তিনি কয়েকজনকে নিয়ে গড়ে তোলেন নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘ইউনাইটেড আর্টিস্ট’। চ্যাপলিনের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি দ্য কিড (১৯২১)। তবে তার প্রথম নিজের প্রযোজনা ও পরিচালনার ছবি এ ওম্যান অব প্যারিস : এ ড্রামা অব ফেট (১৯২৩)। ১৯২৯ সালে অস্কার পুরস্কার চালু হয়। সে বছরই চ্যাপলিন দ্য সার্কাস ছবির জন্য কয়েকটি বিভাগে বিশেষ সম্মাননা পানÑ অভিনয়, পরিচালনা, প্রযোজনা, স্ক্রিপ্ট এবং স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে।
বিশ্ব চলচ্চিত্রে সর্বকালের সেরা কমেডিয়ানের নাম চার্লি চ্যাপলিন। সুতরাং তার জনপ্রিয়তা ছিল গগনচুম্বী। আর জনপ্রিয়তার হ্যাঁপাও তো কম নয়। রাজনৈতিক, নৈতিকতা নিয়ে বিতর্ক, কর দেয়া নিয়ে সমস্যা, আরও বিভিন্ন কারণে একরকম কান্ত হয়ে চ্যাপলিন আমেরিকা ছাড়েন। নিরুপদ্রবে জীবন কাটানোর জন্য তিনি ১৯৫২ সালে সুইজারল্যান্ডে যান।
তিনি আত্মজীবনী লেখার সিদ্ধান্ত নেন। সেটি বেরোয় ১৯৬৪ সালে। ১৯৭২ সালে চ্যাপলিন আবার হলিউডে যান অস্কারের আজীবন সম্মাননা গ্রহণের জন্য। ৬৫ বছরের বর্ণাঢ্য চলচ্চিত্র জীবন শেষে ১৯৭৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর ৮৮ বছর বয়সে এ মহান অভিনেতা মারা যান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।