আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তৃতীয় ভুবনে --------- (ফ্যান্টাসী ছোট গল্প)

সখা, নয়নে শুধু জানাবে প্রেম, নীরবে দিবে প্রাণ, রচিয়া ললিতমধুর বাণী আড়ালে গাবে গান। গোপনে তুলিয়া কুসুম গাঁথিয়া রেখে যাবে মালাগাছি। এই ব্লগের©শান্তির দেবদূত।

১. প্রথম যেদিন তারা একজন আর একজনের স্পর্শ অনুভব করে তখন দুইজনই একসাথে ভীষন চমকে উঠেছিলো। ভয়ও পেয়েছিলো অসম্ভব ! এক অজানা অপার্থিব ভয়।

দুইজনেই ঝাকুনি খেয়ে ঘরের দুই দিকে ছুটে গিয়েছিলো। আচ্ছা, ওদের এই জায়গাটিকে কি ঘর বলা যায় ? যেখানে ওরা এতদিন ধরে আছে সেটাকে মনে হয় ওদের আবাসন বলাই যায়। যাই হোক, প্রথম স্পর্শের বেশ কিছুক্ষণ পর একজন একটু সাহস সঞ্চয় করে অপরজনের দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে যায়। ঐদিকে অপরজন আবার নিশ্চুপ বসে আছে, কেমন যেন গুটশুটি মেরে, মনে হয় সে একটু ভীতু টাইপের । সে অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে আলতো করে অপরজনের হাত ধরে, এতক্ষণে সেও কিছুটা ধাতস্হ হয়ে উঠে।

আস্তে আস্তে দুইজনের সব ভয় কোথায় উবে যায়, ভয়ের জায়গার গ্রাস করে তিৃব্র এক ভালোবাসা, একদম শতভাগ স্বর্গীয় ভালোবাসা। ২. ভাবের আদান প্রদান করতে প্রথম প্রথম বেশ কষ্টহয় তাদের। প্রথমদিকে ওরা শুধু একজন আরেকজনের হাত ধরে বসে থাকতো। ইতোমধ্যে নতুন একটা ভাষা তারা আয়ত্ব করে নিয়েছে, হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে বিভিন্ন বিন্যাসের স্পর্শ এই ভাষার স্বরলিপি। তারা এর নাম দিয়েছে, "ছোয়া ভাষা"।

প্রথমজন আলতো করে ছুয়ে দ্বিতীয়জনকে জিজ্ঞাস করে, "তুমি কে ?" আমি জানি না, আমি কে ! তুমি কি জান তুমি কে ? প্রথমজন উত্তর দেয়, না আমিও জানি না আমি কে ! দ্বিতীয়জন একটু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাস করে আচ্ছা, আমাদেরকে কি কেউ এই ঘরটাতে বন্দি করে রেখেছে? আমরা কি কোনদিন এইখান থেকে মুক্তি পাবো না ? প্রথমজন বলে, "আমরা কে, এখন কোথায় আছি, এখান থেকে কোথায় যাবো, আমি কিচ্ছু জানি না !" সে এবার হাত ছেড়ে দিয়ে অন্ধকার হাতড়ে হাতড়ে দেয়ালটার কাছে এগিয়ে যায়। দেয়ালটাতে হাত দিয়ে ধাক্কা মারে, পা দিয়ে লাথি মারে, কিন্তু দেয়ালটা দাড়িয়ে থাকে অবিচল। তারা আবার ভাবতে বসে যায়, কি আছে দেয়ালটার ঐ পাশে ? তাদের ভাবা ছাড়াতো আর কোন কাজ নেই, কিন্তু শত ভেবেও কোন কূল কিনারা করতে পারে না, ভাবতে ভাবতেই ওরা আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। ওরা কি জানে যে, দেয়ালটার ঐপাশে হাজার রকমের শব্দ, হৈচৈ, কথাবার্তা হচ্ছে প্রতিনিয়ত ? জানতে পারার কথা না, ওরা তো শুনতে পায় না। ৩. হঠাৎ একদিন, একজন অপরজনকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে উঠায়।

সে একটু আড়মোড়া ভেঙ্গে ছোয়াভাষায় বলে, "কি হয়েছে ? ঘুম ভাঙ্গালে কেন ?" প্রথমজন বলে, আমার মাথার দুইপাশে একটু স্ফিত যে দুইটা জিনিষ আছে সেখানে কিছুক্ষণ পর পর কেমন যেন একটু কেঁপে কেঁপে উঠছে, কেমন অদ্ভুত একটা হালকা ঝিমুনির মতও অনুভুতি। আমার না খুব ভয় করছে ! অপরজন কিছুক্ষণ তার মাথা ঝাকালো, ডানে বায়ে ও উপরে নিচে, কিন্তু কোন কিছু অনুভব করতে পারলো না। বেশ কিছুক্ষণ পর সে হঠাৎ তিৃব্র একটা ঝাকুনি খেল, আরেও, সেওতো অনুভব করছে ! সে আবার সবেগে মাথা ঝাকাতে থাকলো, নাহঃ ! সেই একই অনুভুতি ! এই নতুন অনুভুতির সাথে খাপ খেতে তাদের অনেক সময় লাগ। বেশকিছু দিন পরে তারা আবিস্কার করে একটা নির্দিষ্ট বিরতিতে ঘরের ছাদের উপরে অংশটা কেঁপে কেঁপে উঠে আর সেই সাথে তাদের কানেও একটা ধাক্কার মতো লাগে। দ্বিতীয়জন কিছু একটা আন্দাজ করে , অন্ধকার হাতড়ে হাতড়ে দেয়ালের কাছে যায়।

এতদিনে তারা এই নিকষ কালো অন্ধকারে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। না মানিয়ে তো উপায়ও নেই, তারা যে অন্ধ। সে দেয়ালে কান পেতে কিছু শুনার চেষ্টা করে এবং কিছু অপরিচিত শব্দও তার কানে আসে। সে হঠাৎ করে চিৎকার করে উঠে ! তার গলার চিৎকারে অপরজন ভয় পেয়ে যায়, সে নিজেও বেশ অবাক হয় ! তার গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে ! সেই শব্দ আবার সে শুনতেও পাচ্ছে ! পরবর্তী বেশকিছু দিন তাদের কেটে যায়, নতুন ভাষায় অভ্যস্হ হতে। তারা এখন না ছুয়েও মুখ দিয়ে নানান শব্দ করে ভাব বিনিময় করতে পারে।

৪. বেশকিছু দিন পর, ঘুম থেকে জেগে চোখ খুলতেই প্রথমজন একটা ধাক্কার মতো খায় ! সে চোখ বন্ধ করে ফেলে। একটু পর আবার পিটপিট করে খুলে। সে দেখতে পায় তার চারদিক থেকে অন্ধকার ধীরেধীরে সরে যাচ্ছে ! এ এক অন্য অনুভুতি ! প্রথম বারের মত সে দায়ালটা দুর থেকে দেখে, না ছুঁয়ে। সে আস্তে আস্তে ঘরের চারদিকে দেখতে থাকে আর ভাবে কৈ যতবড় ভেবেছিলাম এত বড়তো মনে হচ্ছে না এই ঘরটা ? এইবার সে অপরজনের দিকে তাকায় এবং চমকিয়ে উঠে ! আরে ওতো অবিকল আমার মত ! এইযে আমার মত হাত, আমার মত পা, মাথা, সব কিছুই তো আমার মত ! তাহলে কি আমিই সে বা সেই কি আমি ? আমরা দুইজন কি দুটি আলাদা সত্ত্বা নাকি একক ? এইসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে সে তাকে ঘুম থেকে উঠায়। অপরজনেরও একই অনুভুতি, অবিকল তার মতো।

আবার তারা ভাবতে বসে, কোথায় বন্দি আমরা ? আমাদের কি এইটাই জীবন ? আমরা কি আর কখনও দেয়ালটার ঐ পাশে যেতে পারবো না ? এইটাই কি আমাদের একমাত্র ভুবন ? ৫. হঠাৎ একদিন, প্রথমজনের চিৎকারে দ্বিতীয়জন চমকিয়ে উঠে। সে চিৎকার করে বলছে, আমাকে কি যেন নিচের দিকে টেনে নিয়া যাচ্ছে ! আমাকে বাচাও, আমার প্রচন্ড ভয় হচ্ছে , আমি তলিয়ে যাচ্ছি ! দ্বিতীয়জন আপ্রান চেষ্টা করছে তাকে টেনে তুলে রাখতে, কিন্তু পারছে না ! ধীরে ধীরে প্রথমজনের সম্পূর্ন শরীর কোথায় যেন হারিয়ে যায় ! অপরজনের ভীষন কষ্ট হতে থাকে, তিৃব্র একটা কষ্টে অনুভুতি, তার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে। তার মনে হচ্ছে সে এই জগতের সবচেয়ে অপদার্থ একজন যে তার একমাত্র সঙ্গীকে ধরে রাখতে পারেনি । সে ভাবতে থাকে আচ্ছা, প্রথমজনের কি মৃত্যু হয়েছে, সে কি এখন অন্য জগতে আছে। আচ্ছা, এই ভুবনের মৃত্যুর সরুপ কি এই ? ভাবতে ভাবতে হঠাৎ সে অনুভব করে কি যেন তাকেও নিচের দিকে টানছে ।

শেষ অংশ: আফজাল সাহেব হাসপাতালের করিডরে অনেকক্ষণ ধরে হাটাহাটি করছেন, তাকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে। এমন সময় একজন নার্স দৌড়িয়ে তার কাছে এসে বললো, "অভিনন্দন, আপনার ছেলে হয়েছে, মা ও ছেলে দুজনেই ভালো আছে, তবে !" তবে কি ? তবে, জমজ মেয়েটিকে আমরা বাঁচাতে পারিনি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।