আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্থানীয় নির্বাচনের হিসাব নিকাশ, বি এন পি জোটের রাজনৈতিক ভুল এবং আগামীতে জোটের করনীয়

আস সালাম - আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক

শেষ হল স্থানীয় নির্বাচন। মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত অংশ গ্রহনের আরেকটি দৃশ্য দেখা গেল দীর্ঘ ভোটার লাইনের মাধ্যমে। শতকরা প্রায় ৮০ - ৯০ ভাগ ভোট পড়েছে এই নির্বাচনে। যা খুব কম দেশেই হয়ে থাকে। আমেরিকাতে ভোটে অংশ গ্রহনের হার ৫০ ভাগের মত।

অথচ বাংলাদেশের নির্বাচন বুথগুলো থাকে মানুষে পরিপূর্ন, থাকে দীর্ঘ লাইন। যা নির্বাচনের প্রতি মানুষের দুর্বলতাকে প্রমান করে। এদেশের মানুষ যে কতটা নির্বাচনমূখী, তার প্রমান ৭০ এর নির্বাচন। সে নির্বাচনের আগে প্রলয়ংকরী এক জলোচ্ছাসে মারা যায় উপকূলের প্রায় ৫ লাখ মানুষ। "ভোটের বাক্স লাথি মারো" বলে কেউ কেউ এই নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানালেও, সে নির্বাচনে জনগন কতৃক সমাদৃত হয়।

সে নির্বাচনের সুদূরপ্রসারী ফলাফলে পূর্ব পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হয়ে মানচিত্রে ঠাই নেয় আজকের বাংলাদেশ। নির্বাচনের প্রতি এতটা শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছে যে জাতি, সে জাতির এই অধিকারকে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন সময় অবজ্ঞা প্রদর্শন ছিল একটি সাধারন ঘটনা। দেশ স্বাধীন হবার বহু বছর পরে ৯০ এ প্রথম একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে সত্যিকার ভাবে গন রায় প্রতিফলিত হয়। এর আগে ছিল ভোট কেন্দ্র দখলের রাজনীতি।

এমন কি দেশ স্বাধীন হবার পরবর্তী নির্বাচনেও কারচুপির অভিযোগ আনা হয় তৎকালীন আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে। সে নির্বাচন সামগ্রিকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের মর্যাদা পায় নি। এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার সবচেয়ে বেশী পদদলিত হয় সংবিধানের কুখ্যাত চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে। সে সংশোধনী দিয়ে তৎকালীন আওয়ামী সরকারকে পরবর্তী পাচ বছরের জন্য বিনা নির্বাচনে ক্ষমতাশালী করা হয়। কিন্তু ইতিহাস রচিত হয় অন্যভাবে।

ক্ষমতার হাত বদল হয়। তবে মানুষের ভোটের অধিকার রয়ে যায় উপেক্ষিত। সেই অধিকার প্রথম ফিরে পায় মানুষ ৯০ তে। পরবর্তী বি এন পি সরকার ক্ষমতায় এসে আবারো নির্বাচন দিতে গড়িমসি করে। ততদিনে মানুষ অনেক সচেতন।

নির্বাচন বিরোধী যে কোন তৎপরতা প্রতিহত করা হয়। ৯৫ তে বি এন পি বিরোধী দলের দাবী মানতে বাধ্য হয়। নির্বাচনে বি এন পি পরাজিত হলেও ভরাডুবি হয় নি। খালেদা জিয়ার ইমেজ ক্ষুন্ন হলেও মলিন হয়ে যায় নি। বি এন পি সর্ব বৃহৎ বিরোধী দলের আসন গ্রহন করে।

২০০১ এ আওয়ামী লীগও নির্বাচন কমিশন সহ প্রায় সব পদে দলীয় লোক নিয়োগ দেয়। কিন্তু জয়নাল হাজারী, শামীম ওসমান সহ আরো অনেকের রাষ্ট্রীয় মদদে প্রত্যক্ষ সন্ত্রাস এবং স্বয়ং শেখ হাসিনার এসব সন্ত্রাসীদের পক্ষে সাফাই গাওয়া - আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে ভরাডুবির দিকে ঠেলে দেয়। সে অবস্থা আগেই আচ করতে পেরে বি এন পি জোট নির্বাচন কমিশনের প্রশ্নবিদ্ধতা সত্বেও নির্বাচনে অংশ নেয়। সরকার গঠন করে বি এন পি। ২০০৮ এর প্রেক্ষাপট সম্পূর্ন আলাদা।

বি এন পি জোট তাদের নিজেদের ক্ষমতা লিপ্সু মনোভাবের কারনে জাতিকে একটি নির্বাচন উপহার দিতে ব্যর্থ হয়। বি এন পি জোট যাই বলুক, ২২ শে জানুয়ারীর নির্বাচন জাতি মেনে নেয় নি বলেই ক্ষমতায় আসে সেনা সমর্থিত সরকার। সাধারন মানুষ ২২ শে জানুয়ারীর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের করা দাবীতে কোন অযৌক্তিকতা দেখতে পায় নি। আমি নিজেও সেদিন এই নির্বাচনের বিরোধী ছিলাম। ক্ষমতায় এসে সেনা প্রধান মইন এবং নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা অনেকটা প্রকাশ্যেই আওয়ামী এজেন্ডাকে বিভিন্ন ভাবে সমর্থন দেন।

সিভিল কোড লংঘন করে "জাতির পিতার স্বীকৃতি দিতে পারি নি" সহ বিভিন্ন কথা বার্তার মাধ্যমে তিনি আওয়ামী লীগের প্রতি নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করেন। একই কথা নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। "আমি আপনাদের আন্দোলনের ফসল" বলে নির্বাচন কমিশনার একাত্মতা ঘোষনা করেন আওয়ামী লীগের প্রতি। গুজব রয়েছে আওয়ামী লীগের সাথে সরকারের গোপন সমঝোতার। এই সরকারের সাথে আওয়ামী লীগের প্রথম থেকেই সমঝোতা কিছুটা রয়েছে বলেই হাসিনা এই সরকারের সব কর্ম কান্ডের বৈধতা প্রদান করবেন বলে ঘোষনা দেন।

ফলে নির্বাচনের ফল যে প্রভাবিত হবে সে বলা বাহুল্য। গত কালের স্থানীয় নির্বাচন এই সরকারের প্রথম নির্বাচন। নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে। ফলাফলও অপ্রত্যাশিত নয়। আওয়ামী লীগ দলীয় ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়।

বি এন পি জোটের ক্ষেত্রে সেরকম ছিল না। বি এন পি জোট এই নির্বাচন বর্জন করে। কিন্তু স্থানীয় নেতারা অংশ নেয় এবং স্থানীয় নেতাদের চাপে এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে কোন অবস্থান বি এন পি নেয় নি। যেসব বি এন পি নেতারা নির্বাচনে অংশ নেন, তারা দলীয় পরিচয় লুকিয়ে রাখেন নি। এর ফলে জাতির কাছে যে বার্তা পৌছে যায় তা হল দলীয়ভাবে বি এন পির ভরাডুবি হয়েছে।

আমি এটিকে রাজনৈতিক ভুল ছাড়া আর কিছুই দেখছি না। কারন এটি ভেংগে দেবে কর্মীদের মনোবল। হতোদ্যম কর্মীরা এই নির্বাচনের ফলাফলে ভগ্ন মনোরথ হবার সম্ভাবনা ষোল আনা। এটিই এই মুহুর্তে বড় ভুল বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এই মুহুর্তে বি এন পি কে ঠিক করতে হবে পরবর্তী কর্ম পন্থা কি।

তারা কি নির্বাচনে অংশ নেবে? নাকি বর্জন করবে? কি হবে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ? বি এন পিকে যে নির্বাচনে অংশ নিতেই হবে এমন কোন কথা নেই। ৮৬ তে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেন নি। যা তার জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছিল। এখনও চলছে জরুরী অবস্থা। একটা কাউন্সিল অধিবেশন পর্যন্ত করা যাচ্ছে না।

পল্টন জন সমাবেশ দূরে থাক, সেটা তো চিন্তাও করা যায় না। অথচ নির্বাচনের জন্য এসমস্ত জন সংযোগ জরূরী। পৃথিবীর সব দেশেই জরুরী অবস্থায় নির্বাচনকে বাকা চোখে দেখা হয়। বি এন পির নির্বাচনে অংশ গ্রহনের জন্য মূল বাধা জরুরী আইন। এই জরুরী আইনকে প্রতিব্ণ্ধকতা হিসেবে ঘোষনা করে যদি নির্বাচন থেকে বি এন পি দূরে থাকে, তবে তা ভবিষ্যতের জন্য অযৌক্তিক হবে না মোটেই।

কারন জরুরী আইন নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে বলেই বিশ্ব জানে। নির্বাচন কমিশনার যাই বলুন না কেন। প্রয়োজনীয় জনসংযোগের পরিস্থিতি যেখানে নেই সেখানে কি করে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরী হয়। নির্বাচন মানে তো শুধু লাইনে দাড়িয়ে ভোট দেয়া নয়। আর যদি বি এন পি নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী হয়, তবে সেটাও কোন ভুল পদক্ষেপ হবে না।

কেন না এই মুহুর্তে দেশে প্রয়োজন রাজনৈতিক একটি সরকার। দেশের অর্থনীতি আজ ধ্বংসের পথে। ৯৫ এর পরে আমি ভেবেছিলাম আমি আর আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেব না। কিন্তু আজ এখন এই সিদ্ধান্ত আমি পরিবর্তন করেছি। যদি দেখি বি এন পি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তবে আমি চাইব আওয়ামী লীগ যাতে ক্ষমতাসীন হয়।

কারন আওয়ামী লীগ কোন জন বিচ্ছিন্ন দল নয়। তারা দেশকে এই তলানি থেকে উদ্ধার করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস আছে। আমি নিজেও চাইছি এই মুহুর্তে ক্ষমতা হস্তান্তর হোক। সেটা নির্বাচন অথবা যে কোন ভাবে। সুতরাং বি এন পি নির্বাচনে অংশ নেবার সিদ্ধান্ত নিলে তা জাতির জন্য আশাপ্রদই হবে।

তবে একটি বিষয় লক্ষনীয়। নির্বাচনে অংশ নেয়া বা নেয়া যে সিদ্ধান্তই বি এন পি নিক না কেন, তাতে তাকে অটল থাকতে হবে। কোন ধরনের দোদুল্যমানতা বি এন পিকে পিছিয়ে নিয়ে যাবে বহুদূর। যদি নির্বাচনে বি এন পি অংশ নেয়, তবে সেক্ষেত্রে তারেকের অসুস্থতা/রিমান্ড, খালেদা জিয়ার বন্দীত্ব অথচ হাসিনার মুক্তি, ২৮ শে অক্টোবর - এসব নির্বাচনে কাজে লাগাতে হবে। তারেকের স্ত্রী, কন্যা কে নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

এদেশের মানুষ আবেগ প্রবন। কারাবন্দী অবস্থায় তারেকের দুর্দশাকে পৌছে দিতে হবে মানুষের অন্তরে। নির্বাচনের মাধ্যমে এদের মুক্ত করার শপথ নিতে হবে। পরিস্থিতি প্রতিকূলে হলেও একমাত্র তারেক/খালেদার মুক্তির জন্যই বি এন পি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে - জনমনে এই বার্তা পৌছে দিতে হবে। আর নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সে সিদ্ধান্তে বি এন পিকে অটল থাকতে হবে।

সেক্ষেত্রে বি এন পি কে শক্ত ভাবে নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। যেসব বি এন পি নেতারা নির্বাচনে অংশ নেবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। দৃঢ়তার সাথে নির্বাচনের বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করতে হবে। মানুষ যাতে এই বুঝতে পারে এই নির্বাচন বি এন পি সম্পূর্ন ভাবে প্রতিহত করেছে। বি এন পির স্থানীয় নেতাদের এই সত্যটি বুঝতে হবে যে দলীয় ভাবে অংশ গ্রহন করা ছাড়া কোন বিকল্প উপায় নেই।

স্থানীয় নির্বাচনই তার প্রমান। জাতীয় সংসদ নির্বাচন তো আরো বেশী দলের উপর নির্ভর শীল। সুতরাং অহেতুক অর্থ অপচয় না করে দলকে নির্বাচন বর্জনের সহযোগিতা করাই হবে সমীচীন। যে সিদ্ধান্তই গ্রহন করা হোক না কেন, বি এন পিকে সেটাতে অটল থাকতে হবে। দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হবে।

নতুবা সেটা হবে এই স্থানীয় নির্বাচনের মতই বড় একটি ভুল। (এ লেখার মন্তব্য মডারেটেড) লেখাটির উপর আলোচনা হয়েছে : Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.