আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্লগীয় জাবর ৩: মিথিলা-কাণ্ড: আসলেই কি সবকিছুর অবসান হয়?



'কী এমন দোষ করেছিলাম আমরা? তাই অভিমান করে আমাদের ছেড়ে চলে গেলে? তবে চলে গেছো বলে রাগ করিনি। কষ্ট পেয়েছি। আর কষ্টটার ফাকে একটু সুখও খোজার চেষ্টা করছি এইভেবে যে আমরাও একদিন চলে যাবো তোমার গন্তব্যে। সেদিন আবার দেখা হবে। বলা হবে জমানো অনেক কথা।

' এই ব্লগেরই কোনো এক ব্লগারের পোস্টে এই শোকাবহ মন্তব্য করছিলেন অন্য কোনো ব্লগার। ২০০৭ সালের কথা বলতেছি। ১৩ জানুয়ারি হঠাৎ কইরাই এমন ব্লগে শোকের মাতম উঠলো। চারদিকে খালি কান্না। হা হুতাশ।

প্রিয় কেউ ছাইড়া যাওনের বেদনা। বুকের মধ্যে সবার মোচড়। ব্লগের প্রথম পাতা ভরে উঠতে থাকলো একটার পর একটা বেদনাবিধুর পোস্টে। আজ ইচ্ছা আছিলো, এককালের নিয়মিত ব্লগার সাদিক মোহাম্মদ আলমরে নিয়া ব্লগীয় জাবর কাটনের। কিন্তু লিখা শুরুর আগেই হঠাৎ করে ২০০৭ সালের জানুয়ারির সেই শোকের মাতম সামনে আইলো।

সে কারণে সেইটা নিয়াই লিখতেছি। পুরানা ব্লগারদের সবাই কম-বেশি বিষয়টা জানেন, এমনকি বেশিরভাগই এই সময় ওই ঘটনায় অংশও নিছেন। তারপরেও আমি এইখানে ঘটনাটা বলবার চাই। আফটার অল এই সিরিজখান যেহেতু এককালের সরব ব্লগারগো নিয়া। তাই মিথিলা তালুকদার রে নিয়া এই সিরিজের এক কিস্তি হইতেই পারে।

ব্লগারগো নিশ্চয় মনে পড়তাছে এই ব্লগে মিথিলা তালুকদার নামে একজন ব্লগার আছিলো। সে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত আছিলো। আজ থেকে ১ বছর ১০ মাস আগে সে ব্লগানো শুরু করে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সে প্রিয় ব্লগার হয়ে ওঠে অনেকের। চিকিৎসার জন্য সে দেশের বাইরে যায়।

সেইখান থেকে পোস্টায়। তারপর একদিন হঠাৎ করে খবর পাওয়া গেলো বিদেশের মাটিতেই তার মৃত্যু হইছে। ১৩ জানুয়ারি আছিলো সেটা। এরপর দুইদিন ধইরা টানা শোক আর শোক। তারপর একদিন জানা গেলো, মিথিলা নামে আসলে কেউ আছিলোই না।

ওইটা আছিলো ভার্চুয়াল ক্যারেক্টার। তার জন্ম, ব্লগানো, মৃত্যু সবই নিয়ন্ত্রণ করছিলো ওই চরিত্রের স্রষ্টা মাহমুদুল হাসান রুবেল । আরো একদিন প‌্যাচাইন্যার পর রুবেল স্বীকার করেন তিনি ইচ্ছ কইরাই এমন চরিত্র সৃষ্টি করছেন। এইবার ব্লগ খেইপা ওঠে। রুবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে ব্লগের সেন্টিমেন্ট নিয়া ছেলেখেলা করণের, বিশ্বস্ততা ভঙ্গের ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিন্তু রুবেল কন, তিনি ভুল করেন নাই। তিনি লেখক হিসাবে একটা চরিত্র বানাইছেন। সেই চরিত্র কারো মনে ধরে গেলে তিনি দায়ী নন। তার সঙ্গে তুলনা চলে হুমায়ুনের বাকের ভাইয়ের। তারপরেও আলোচনা চলতে থাকে, নিয়ম আর অভ্যাসমতো একদিন থাইমাও যায়।

এরপর আমরা ভুইলা যাই। কিন্তু আসলে কিন্তু ভুলি না। এই ব্লগটায় একজনের মতের বিরুদ্ধে আরেক জন হয়তো নোংরা উচ্চারণ করে। কিন্তু মিথিলার মতোন চরিত্রের লাইগা এই ব্লগের সবাই যে অসাধারণ মমত্ববোধের প্রমাণ রাখে, তা কিন্তু ভোলা যায় না। অন্ততঃ এইটুকু তো ভাবন যায়, অসাধারণ আর তারকাগো ভিড়ে আমার মতো একজন সাধারণ মানুষের অসুস্থতা বা মৃত্যু বা খারাপ কোনো খবরে একদল মানুষ স্বার্থহীনভাবেই শোক করবে।

এইটা আমরা ভুলবার চাই না। মিথিলার স্রষ্টা মাহমুদুল হাসান রুবেল তার ব্লগ থাইকা ওই সময়ের সব রেকর্ড মুইছা ফেলছে। মিথিলার ব্লগ অহনও স্মৃতি হয়া আছে। সব পোস্ট সরানো হইছে সেখান থেকে। দুই হাত জোড় কইরা সেখানে লেখা আছে সবকিছুর অবসান হওনের কথা।

আসলেই কি অবসান হইছে? একে অন্যের জন্য এই মমত্ববোধ, এই অনুভূতির কি কখনো অবসান হয়?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.