আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তৃপ্তির উঠোনজুড়ে আনন্দবারি

সাব্বির ভাইয়ের জন্য আরো দশ লাখ টাকা দরকার। মানবতার দিকে তাকিয়ে আছি।
সেদিনের এক আড্ডায় কথা হচ্ছিল এসময় আর সেসময়ের তৃপ্তির তুলনা নিয়ে। শামীম ভাই বারাক ওবামার মত দৃপ্ত ভঙ্গিতে বলে উঠলেন, আমরাই দায়ী। এ প্রজন্মের কাছ থেকে একটা অসাধারণ অনুভূতি স্রেফ ডাকাতি করে নিয়ে যাচ্ছি।

সুর মেলালেন কেয়া আপা, মাসুম। ভাবুনতো একবার ছোটবেলার কথা। ফি বছর সর্বোচ্চ দু'টো, ভাইবোনের আধিক্য থাকলে নেহায়েত একটা নতুন জামা। সে একখানাকে ঘিরেই সারাটা বছর জল্পনার পরীর পাখা মেলা। আর হাতে এলে যে অবারিত স্বর্গসুখ লাভ, এর ছিঁটেফোটা স্পর্শও নেই এ প্রজন্মের অন্তরে।

না চাইতেই হাতে আসছে ভুরিভুরি। এক মাসে যে পাঁচটা কাপড় হাতে পায়, তার কাছে নতুন জামার সে সুগন্ধ অনাঘ্রাত থেকে যায়। বিস্ফোরিত দৃষ্টির সামনে মেলে ধরা একটা নতুন বই বা একজোড়া নতুন জুতোর লজ্জায় রাঙ্গানো অবয়ব দেখিনা কতকাল! চোখের কোণা দিয়ে একপলক দেখেই "থ্যাঙ্কস" শুনে মিইয়ে যায় জড়প্রাণগুলো। কখনো স্বজনদের আধিক্যে আলোর মুখ দেখে অনেকদিন পর। স্বত্বাধিকারীর খেয়ালখুশিতে তার প্রথম সূর্যস্নানের ক্ষণটা কতটা দীর্ঘায়িত হবে, অজানাই থেকে যায়।

তিন চার জন ভাইবোন। বাবা পাটি পেতে বসেছেন সবার মাঝে। ক্যালেন্ডারের মলাটে একেকটা নতুন পাঠ্যবইকে নববধূর মত সাজিয়ে তুলছেন দক্ষতায়। কখনো মলাটের উপরে ঘাই দিচ্ছে লালসাদা সূতোর মিছিল। সে একটা নতুন বই পরম মমতায় জড়িয়ে বুকে তুলে বছর পার করে দিলাম।

একজনের পর আরেকজন, বংশধারায় আবর্তিত হল হাতে হাতে। জানতে ইচ্ছে করে, শলাকা খুঁচিয়ে আজ আমাদের কজনের সন্তান বইকে গাঁথে পাতায় পাতায়, হৃদয়ের সাথে? নাকি ওরা মলাটের সঙ্গাটা জানেনা? বছর শেষে প্রিয় একটা রঙিন চকচকে পাতা ভাইবোনের চোখ এড়িয়ে লুকিয়ে রাখা জানেনা, একটা বইয়ের গায়ে জামা পরাবে বলে। ওরা তো চাইলেই পায়, না চাইলেও হাতে এসে যায়। একটা হারিয়ে গেলে আরেকটা, নতুন স্কুল ইউনিফর্ম পেতে নতুন বছর আসতে হয়না। ওরা ঘ্যানঘ্যান করে প্লেস্টেশন আর নিনতেনদো-র জন্য।

আজ ওদের পকেট জুড়ে কানকা মেলে থাকে আইপড। একটা আইস্ক্রিম ভাগাভাগি করে খেলে কেমন লাগে সে স্বাদটা ওদের পেতে দিতে দেইনা আমরা। না মা এটা খাবোনা, ওটা খাবোনা। ব্যস লাঞ্চ চলে আসে বাক্সবন্দী হয়ে পছন্দের রেস্টুরেন্ট থেকে। নিজের অজান্ত অবহেলায় গড়ে তুলছি একটা অতৃপ্ত প্রজন্ম।

চেখে দেখতে দিচ্ছিনা কষ্টার্জিত প্রাপ্তির ঝোলটুকু। ওরাও জানে, দুতিনবার গাল ফোলানো অথবা একবেলা ভাত খাওয়া বন্ধ করলেই হাতে এসে যাবে কাঙ্খিত বিনোদনসামগ্রী। সংযম আর সংবরণ ওদের অভিধান থেকে সযত্নে মুছে ফেলছি আমরা। রাশ টানার সময় হলো বোধহয়। নয়ত একদিন আমরাই দাঁড়াবো বিবেকের চারকোনা প্রকোষ্ঠে।

আঙুল উঁচিয়ে ওরাই বলবে, আমাদের দেখতে দিয়েছ দুর্গম গিরি, সপ্তাশ্চর্য, যাবতীয় অগম্য বিলাস জানতে দাওনি একফোঁটা শিশির গায়ে আঁকে কী মোহনীয় ভাস্কর্য।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।