যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
প্রবাসী জীবন যাপন না করলে হয়তো মানুষের মৃত্যুর পর যে সকল আনুষ্ঠানিকতা হয় তার গুরুত্ব বুঝতাম না। যেমন জানাজা, কুলখানি, শেষ কৃত্য, শ্রাদ্ধ এগুলো ছিলো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কিন্তু এখন উপলদ্ধি করি - কতইনা গুরুত্ব বহন করে এই আয়োজনগুলো।
একজন মানুষের মৃত দেহটা দেখা আর নিজের হাতে মাটির ঢেলা কবরে ফেলে দিয়ে আপনার আসলে একটা জীবনের সমাপ্তি ঘোষনা করি। জন্মের ঘোষনার মতোই গুরুত্বপূর্ন এই মৃত্যুর ঘোষনা।
স্বশরীরে উপস্থিত থেকে আনুষ্টানিকতা মাধ্যমে আমরা পূর্নতা দেই একটা জীবনের। যদিও কষ্টের সেই আনুষ্ঠানিকতা - তারপরও পূর্নতার প্রাপ্তি আছে সেখানে।
প্রবাস জীবনে মাঝে মধ্যে রাতের গভীরে ফোন বেজে উঠে। কোন এক আপন জনের জীবনের সমাপ্তি ঘঠেছে আজ সকালে। তাকে দাফন করার হবে - আমাকে জানানো হলো।
কিন্তু আমি কি কখনও কল্পনা করতে পারবো সেই আপন জনের কাফনে মোড়ানো মৃত দেহটা দেখতে কেমন ছিলো - আমি কি কখনও আতর লোবানের কড়া গন্ধ আর বুক ফাটানো বিলাপ শুনতে পাবো!
সেই রকমেরই একটা মৃত্যু আমার সকল অনুভূতিকে ভোতা করে দিয়েছে। আমার সবচেয়ে আদরের ভাগ্নে - যে অনেক আশা নিয়ে এসেছিলো ঢাকা শহরে - কিন্তু ওর আশার পথটা পিচ্ছিল করে দিয়েছিলো সদ্য জমে উঠা বন্ধুত্ব। গাঁজা থেকে শুরু হয়ে ফেনসিডিল পর্যণ্ত যখন পৌছে - তখন তাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভাল মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু কখনও সম্পূর্ন সুস্থ্য হতে পারেনি ও।
আমি দেশ ছেড়ে চলে আসি।
শুনতে পাচ্ছিলাম ওর মানসিক ভারসাম্য ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি বার কয়েক চেষ্টা করেছি ফোন ওকে সাহসী করে তোলতে। কিন্তু সবসময়ের মতো হাসি মুখে বলেছে - মামা, আপনে চিন্তা করেন না। আমি ভাল আছি।
আমার দেখা সবচেয়ে হৃদয়বান একটা যুক ছিলো ও।
একদিন রাতে ফোন এলো ও আর নেই। বিস্তারিত জানা গেল অনেক পর - মা’র সাথে ঝগড়া করে চলন্ত ট্রেনে নীচে ঝাপ দিয়েছিলো। এ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা আসার পথে ভৈরবের কাছে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। মরার আগে নাকি বাঁচার জন্যে খুবই আকুতি করছিলো ছেলেটা।
পরে যখন দেশে যাই - শুনি ওর মা’র আহাজারি - কেন আমি ওকে বকতে গেলাম ….
আমি এখন ও নির্মল হাসিটা ভুলতে পারি না।
ওর সবকিছুতে এগিয়ে এসে বলা - মামা, চিন্তা বাদ দেনতো, আমি আছি না?
হ্যা, ও এখনও আছে। আমার মগজে র কোষের ভিতরে। আফশোষ করে বোনকে বলেছিলাম - ওর লাশের একটা ছবি তুলে রাখলে পারতি। তা হলে হয়তো ওর মৃত দেহের স্মৃতি ও হাসিমুখটাকে সরিয়ে দিতো।
মাদকের বিষাক্ত ছোবল ওর জীবন প্রদীপটাকে নিবিয়ে দিয়েছে বাইশ বছরে - কিন্তু আমাকে বাকী জীবন ওর স্মৃতি বহন করতে হবে - এইটাই আমার নিয়তি - একজন প্রবাসীর নিয়তি।
(২)
এরপর নানী, চাচীসহ অনেক নিকটতম আত্নীয়ের মৃত্যুর খবর পেয়েছি টেলিফোনে - কিন্তু ধীরে ধীরে সেই খবরগুলো সাধারন খবরে মতোই হয়ে গিয়েছে। এদের মৃত্যু নেই আমার মনো জগত থেকে।
আজ কবি সমুদ্র গুপ্তের মৃত্যুর সংবাদশুনার পর মনে হলো আমার কোন বিকার নেই। আমি এখনও পাবলিক লাইব্রেরীর চত্তরে হন্য হয়ে হেটে যাওয়া সমুদ্র গুপ্তকেই দেখি।
আমি একজন অভিশপ্ত মানুষ হয়ে যাচ্ছি - যে তার স্বজনের মৃত্যুতেও দুঃখ পেতে ভুলে গেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।