উন্নয়ন নাট্য’র উদ্দেশ্য ও এর প্রয়োগ রীতী ও শিল্পগুন নিয়ে দর্শক,সমালোচক,ও সংম্লিষ্টদের মধ্যে নানা বিরুপ প্রতিক্রিয়া ও নেতিবাচক বিতর্ক লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে উন্নয়ন নাট্য বলতে আমরা বুঝি সরকারী ও বেসরকারী সংস্থা কতৃক পরিচালিত বিভিন্ন থিয়েটার যার বেশিরভাগ বিষয় পরিবার পরিকল্পনা, খালকাটা, সাস্থ্যসম্মত পায়খানা তৈরী ইত্যাদি। এই বিষয়গুলোর নাট্য উপস্থাপনা নিঃসন্দেহে ভাল হবে যদি সেখানে শৈল্পিকতার প্রয়োগ ঘটে। এছাড়াও মানবিক মুল্যবোধ, সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসী ভুমিকা, মানুষের আচরনগত পরিবর্তন, ইতিহাস সচেতনতা, ঐতিহ্য অনুসন্ধান ও সংরন এই নাটকের বিষয়বস্তু হতে পারে। এদেশের সাধারন মানুষ ধিরে ধিরে শিতি হয়ে উঠছে।
তা ছাড়া ইলেক্ট্রনিক দুনিয়ার ব্যপক উন্নয়নের জন্য পৃথিবীর সীমান্ত ছোট হয়ে এসেছে । মানুষ সহজে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তের সংঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সচেতন হচ্ছে এবং আস্তে আস্তে তথ্যসমৃদ্ধ হচ্ছে । ফলে আগের থেকে মানুষকে বোকা ভাবার কোন কারন নেই। সাম্রাজ্যবাদ এবং পুঁজিবাদী শক্তির সাম্রাজ্য বিস্তার ও অর্থনৈতিক শোষনের খবর এখন কমবেশী সকলেই জানে। আগেই বলা হয়েছে তৃতীয় বিশ্বের প্রতিটি মানুষই কোননা কোন ভাবে পুজিঁবাদের দ্বারা আক্রান্ত।
অস্বীকার করার কোন উপায় নেই এই সমস্যাটিই এখন সবচেয়ে প্রকট। কোননা কোন ভাবে তৃতীয় বিশ্বের মানুষ এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই লড়াইটিকে আরো বেগবান ও সকল মানুষের স্বতস্ফুর্ত প্রকাশ ও অংশগ্রহন উন্নয়ন নাট্যের মাধ্যমে হতে পারে। এই নাটকের নির্মাণ শৈলী ও শিল্পগুনের দিকে ল্য দিলে এবং সেই মত নির্মাণ করলে তা ফলপ্রসু প্রভাব ফেলবে নিশ্চিত। উন্নয়ন নাট্যকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য অভিনয় তত্বের আলোকে সুশৃংখল ও শিল্পীত ভাবে প্রযোগ করলে তা সবশ্রেনীর দর্শকের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পাবে।
এ ছাড়াও লোক সংস্কৃতি সমাজের সর্বস্তরের নিজস্ব সম্পদ। সমাজের সকল মানুষের মধ্যে লোক সংস্কৃতির উপাদান ল্য করা যায়। মানুষের জীবনাচরন ও পরিবেশ লোক সংস্কৃতি পরিবৃত এবং ঘূর্ণায়মান। যুগ-যগান্তর ধরে মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশী জড়িয়ে রয়েছে যে আবেগ, অনুভূতি,অনুপ্রেরনা, অনুসন্ধান,আর ভালবাসায় সিক্ত সংস্কৃতির প্রবাহধারা তা হলো লোকসংস্কৃতি। এই লোক সংস্কৃতির সবকিছুই উঠে এসেছে মাটি-মানুষ, পল্লি-নগর, পাহাড়-নদী, বন-বনাঞ্চল এবং প্রকৃতি থেকে।
নদীর প্রবাহ ধারার মতোই ঘূর্ণায়মান লোকসংস্কৃতি বয়ে চলেছে আমাদের জীবনে। চিরায়ত লোকসংস্কৃতিই মানুষকে মুল্যবোধ ও অধিকার চর্চায় সদা জাগ্রত করেছে। জ্ঞান বিজ্ঞানের বিকাশ ও পুঁজিবাদের ভয়ংকর আগ্রাসনে লোকসংস্কৃতি কখনো মলিন বা দৃষ্টি ছিন্ন হয়নি বরং সমৃদ্ধ, বিকশিত, ও উজ্জলতর হয়েছে।
বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি অত্যন্ত সুপ্রাচীন এবং শত বাঁধা বিপত্তির মধ্য দিয়েও তা পদ্মা, মেঘনা, যমুনার মতো বহমান। এদেশের সর্বস্তরের মানুষ বাংলা লোকসংস্কৃতি লালন, চর্চা ও প্রাগসরের নিত্য সহচর।
বিদেশী পুঁজিবাদী সংস্কৃতির বিপুল আমদানী ও ভয়ংকর প্রয়োগ, অর্থনৈতিক, সামাজিক, নৈতিক আগ্রাসন, এদেশের মানুষকে বার বার আপন ঐতিহ্য চর্চায় বাধা গ্রস্থ করলেও সর্বসাধারন নিজস্ব লোকসংস্কৃতির মাধ্যমে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং প্রতিহতও করেছে। এদেশের গ্রাম বাংলার মানুষের ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে নগর এবং সমাজবদ্ধ মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, বিরহÑভালবাসার গল্পকথা, দৈনন্দিন কর্মময় জীবনচারীতা, প্রকৃতি বন্দনা, পকৃতি বিপর্যয়, বহিঃশত্র“র পরাভবতা, যুদ্ধ-বিগ্রহ, সমাজের অভ্যন্তরে নিহিত সামাজিকতা,সবই লোক সংস্কৃতির উপজিব্য; যার প্রকাশ এবং প্রসার ঘটেছে লোক সংগীত, গল্পকথা, জারি-সারি, কবিগান, আলকাপ, গম্ভীরা, ভ্ওায়াইয়া, ভাটিয়ালী, মাদার, পালাটিয়া, বাউল সংগীত, লোককাহিনী, পালাগান, উপকথা, তত্বীয় সংগীত, যাত্রাপালা, খণার বচন, নির্মাণ শিল্পের শ্রমিকদের গান,জন্ম-মৃত্যু বিবাহের গান, অভিনয় পালা ইত্যাদি এবং নানা ধর্মীয় লোকসংস্কৃতির উপস্থাপনা ও পরিবেশনায়।
বাংলাদেশের সংস্কৃতি মূলত লোকসংস্কৃতি । লোকসংস্কৃতির ঘুর্ণায়মান উপস্থাপনের উদ্দেশ্য শুরু থেকেই মানব কল্যান কামী। কালের প্রবাহে চিরন্তর এই লোকসংস্কৃতিকে কিছু প্রতিভাধর ব্যক্তি তাঁদের পারদর্শীতা এবং প্রতিভার সুচিন্তিত প্রয়োগে পেশাগত পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।
উনবিংশ শতকে এদেশের লোকসংস্কৃতি বিকশিত হয়ে চরম উৎকর্ষতায় উন্নিত হয়। উন্নয়নের জন্য লোকসংস্কৃতি ব্যবহার হতে থাকে একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসাবে। তবে মানুষের আত্নিক , সামাজিক, অর্থনৈতিক, ও পরিবেশিক উন্নয়নে লোক সংস্কৃতি যে বিশালাকার ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে বা আরও জোড়ালো ভূমিকা রাখতে পারে সে সম্পর্কে গবেষণানিষ্ঠ পরিস্কার ধারনার শুন্যতা রয়েছে। উন্নয়ন নাট্য লোক সংস্কৃতির এই পর্যায়টিকে সুগঠিত করে সর্বস্তরের মানুষের কাছে থিয়েটার কে জনপ্রীয় এবং মানব কল্যানে অত্যন্ত জোড়ালো ভূমিকা রাখতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।