যেতে চাও যাবে, আকাশও দিগন্তে বাঁধা, কোথায় পালাবে!
গতকাল আটলান্টা ক্রনিকলে একটা সংবাদ পড়তে পড়তে একটা ভাবনা উকি দিয়ে উঠল। ঈদের দিন সবার সাথে কুশল বিনিময়ের পরও দেখলাম চিন্তাটা চলে যায়নি বরং আরো বেশী খচখচ করছে। তাই ভাবলাম চিন্তাটাকে একটু গুছিয়ে লিখেই ফেলি। দেখা যাক সহব্লগাররা ব্যাপারটাকে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ করেন। খুব ছোট্ট সংবাদ "আমেরিকা ভিত্তিক GE (General electric) Energy তাদের পরিবেশ বান্ধব এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্র Jenbacher J620 (সর্বাধুনিক টাইপ ৬) এর জন্য এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় অর্ডার পেয়েছে।
অর্ডারদাতা দেশের নাম বাংলাদেশ ।
বাংলাদেশের Doreen Power Generation & Systems Ltd. (আমি এই নাম আগে শুনিনি, কেউ কিছু জানলে আওয়াজ দিয়েন) নামের একটি প্রতিষ্ঠান ২৮টি Jenbacher J620 ইউনিটের অর্ডার দিয়েছে যা চারটি নতুন পাওয়ার প্ল্যান্ট এ ব্যবহৃত হবে এবং প্রায় ৮১ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করবে। তারমানে প্রতিটি ইউনিট প্রায় ২.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করবে। সাদামাটা একটি ভালো খবর, দেশের বিদ্যুত গ্রীডে কিছু বিদ্যুত যোগ হবে, লোড শেডিং কিছুটা কমবে। কিন্তু আমার চিন্তাটা ভিন্ন ।
আমাদের মাটির নীচে থাকা সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাস নিয়ে আমেরিকা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের মাথাব্যাথার শেষ নেই। এই খাতে বিনিয়োগকারী কোম্পানী, বিশ্ব ব্যাংক, আই এম এফ, দেশের শাসকগোষ্ঠী সবার কন্ঠে মোটামুটি একটাই সুর আর সেটি হলো সম্পদ মাটির নীচে না রেখে রপ্তানী করাটাই একমাত্র গ্রহণযোগ্য সমাধান। এখনও দেশের কিছু বোকা মানুষদের কারণে সেই চমৎকার সামাধানটি বাস্তবায়ন করা যায়নি।
এই গ্যাসকে দেশের উন্নয়নের কাজে কতটা লাগানো সম্ভব সেটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। আর তা নিয়েই এই লেখার অবতারণা।
দেশের প্রান্তিক জনগণের একটা বড় অংশ বিদ্যুত সুবিধা বন্চিত। দেশের উন্নয়নের জন্য এই কর্মমুখর মানুষগুলিকে বিদ্যুৎ সুবিধার মধ্যে আনার বিকল্প নাই। দেশে মোট থানার সংখ্যা ৪৯৬টি, ধরে নিচ্ছি এর মধ্যে সিটি এলাকার আওতাধীন থানা বাদ দিলে প্রায় ৩০০টি থানা সরাসরি গ্রামীণ প্রান্তিক জনগণের সাথে সম্পৃক্ত। দৈনিক ২.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত দিয়ে গড়ে ৪ টি থানার সম্পূর্ন বিদ্যুত চাহিদা (ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য বিদ্যুত সহ) পূরণ হয়ে যাওয়ার কথা। সেই ক্ষেত্রে ৩০০ টি থানার গ্রামীন জনপদের মানুষের বিদ্যুতের সরবরাহের জন্য প্রয়োজন প্রায় ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আর এই বিদ্যুত সরবরাহ করতে সক্ষম হবে ৭৫ টি Jenbacher J620 প্রাকৃতিক গ্যাস চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্র ।
এটি কি খুব দুরূহ একটি প্রজেক্ট? দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস দেশেই ব্যবহার করে দেশের অধিকাংশ মানুষকে উন্নয়নের চাকার ঘূর্ণনের আওতায় আনা!! এর জন্য পূঁজি বিনিয়োগ অন্য অনেক বিনিয়োগের চাইতে নিরাপদ হওয়ার কথা । প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাদের প্রয়োজনীয় বিদ্যুত কিনে নেবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। সীমিত সাফল্যের পল্লী বিদ্যুত আর গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য থেকে জানি যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাদেরকে দেওয়া যে কোন সুবিধার জন্য নিষ্ঠার সাথে অর্থ প্রদান করতে রাজী। কিন্তু তারপরও তারা সুবিধার নাগাল পায় না। অনেকেরই গ্রামীন বা মাইক্রোক্রেডিটের ব্যাপারে আপত্তি আছে, তবে মাইক্রোক্রেডিট যে প্রান্তিক জনপদের মানুষের কর্মময়তা বাড়িয়েছে সেটা বোধকরি অস্বীকার করা যাবেনা।
অনেক বন্ধুই বলতে পারেন বিদ্যুতের সুবিধা প্রান্তিক জনপদের মানুষদের অধিকার এবং প্রস্তাবিত প্রজেক্ট তাদেরকে শোষণের জন্য আরেকটা হাতিয়ার হতে পারে। ঠিক এইখানেই মনের ভিতর একটু খচখচ। এটা কি আসলেই কর্পোরেট বানিজ্যের নতুন শোষণ চিন্তা নাকি প্রান্তিক সংগ্রামী মানুষের জন্য উন্নয়ন ভাবনা??
আলোচনার ইচ্ছা আছে, আশা করি আলোচনার মাধ্যমে ভাবনাটি আরো গোছালো ভাবে প্রকাশ পেতে পারে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।