বেশ কিছুদিন পরে ক্লাসে গেলাম।
সেই পুরনো ব্যাপার , সবাই হই চই করছে । প্রথম ক্লাসটা করতে পারলাম না । পৌছতে দেরি হয়ে গেল। আরে বাবা ২ টাকার বাস ভারা চায় তিন টাকা ! ভাল লাগে? মিরপুর রোডের জ্যাম সমস্যা বোধ হয় আর সমাধান হবার নয়।
তারপর জ্যাম কাটিয়ে বৃষ্টি ধোয়া দিনের গুমোট গরমে ভাপা পিঠার মত হয়ে অতঃপর ক্যামপাসে । আমার সহপাঠি/ আর সহপাঠিনীরা যার পর নেই বিশ্বিত-করুনা মিশ্রিত দৃষ্টি দান করলেন। ভাব খানা এমন যে
তাঁরা গোল্লায় যাওয়া একজনকে দেখে বড়ই করুনা ভারাক্রান্ত। যাহোক
"গবেষণা নকশা" ছিল অ্যাসাইনমেন্ট, সেটা তারা হুরা করে সম্পন্ন করে ছিলাম। আমি আটকে পরা ( নাকি পড়া) পাকিস্তানীদের উপরে একটা রিসার্স করেছিলাম ।
তারাহুরা ছিল বলে ওটার প্রপোজাল অংশটাই প্রিন্ট করে নিয়ে গিয়েছিলাম।
যথারিতি ক্লাস আরাম্ভ হল। আমার গবেষণা স্যার আসলেন। এই মহতি শিক্ষক আবার বহু গ্রস্থ প্রণেতা! তো তাঁর সম্পাদিত ,সংকলিত, ও রচিত বই
সমুহের উল্টো কভারে পরিচয় হিসেবে লেখা থাকে , " সমাজ বিজ্ঞািন"
এবং অতিঅবস্যই তিনি যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহান শিক্ষক এই পরিচয় ও থাকে। অবস্য কেউ কেউ তাঁকে "গাইড লেখক" ও বলে থাকেন।
তা সমালোচক , ত্রুটি অন্বেষণকারীরা তো কত কথাই বলে। ওসব আমরা আমলে নেই না। আমাদের বিখ্যাত স্যার সাহেব ও নেননা।
যাগগে সেসব কথা। স্যার ক্লাসে প্রপোজালগুলি বিচার করা শুরু করলেন্
কার কোথায় ভুল হয়েছে, তা তার শান্তিনিকেতনী মেয়েলী ঢং করে করে বিবৃত করতে লাগলেন।
স্যার আবার শান্তিনিকেতনে কিছুদিন ছিলেন। কয়েকজনকে মৃদু তিরস্কার করলেন।
এর পর আসল আমার পালা। আমাকে অপমানের চুড়ান্ত করে ছাড়লেন!
ঘটনাটা সামান্ন এবং অতি সংবৃত। সত্যি আমি একদম প্রস্তুত ছিলামনা
স্যার "পড়া " এবং "পরা" এই দুটি বিষয় নিয়ে সামান্ন মাথা ঘামালেন।
মুলতঃ আমি নিজেই ভুলে গিয়েছিলাম আমি "আটকে পড়া" লিখেছি নাকি আটকে পরা লিখেছি।
যাহোক, প্রপোজাল এর ব্যাপারে ওই টুকুই তার আপত্ত্বি ছিল । আমিও অম্লান বদনে আমার দোষ স্বীকারকরে নিয়েছিলাম। ব্যাপারটা সেখানে মিটে যেতে পারত । কিন্তু কোন এক দুবোর্ধ্য কারণে ফট করে তাঁর পন্ডিত সত্বা জেগে উঠল , এবং আমার পোশাক আশাক , আমার অবয়ব , এবং আমাকে তখন ঠিক কী রকম দেখা যাচ্ছিল এইসব বিষয় নিয়ে ঝারা ১০ মিনিট প্রায় ---আমাকে দাড় করিয়ে রেখে ক্লাস হাসানোর চেষ্টা করলেন।
ধন্য শিক্ষক! আচ্ছা! আপনাদের জানিয়ে দেই আমার পরোনে কী ছিল।
আমি আজকে টি সার্ট এবং ফরমাল প্যান্ট পরেছিলাম , পায়ে ছিল চটি। টি সার্ট ছিল ক্যাটস আই এর এবং বুকে লেখা ছিল " দ্যা স্কাই ইজ ফলিং , হেল্প" আমি জানিনা এটা খুব খারাপ কথা কিনা! অথচ তিনি যা ইচ্ছা বল্লেন! হেল্প কে বল্লেন "হেল" । এবং আমাকে নাকি তার কাছে " জেল ভাঙগা কয়েদিদের মত লাগছে। আমি অবস্য কোন দিন জেল ভাঙগা কয়েদি দেখিনি।
বাসায় ফিরে আয়নাতে দেখেছি নিজেকে, জেলভাঙগা কয়েদিকে দেখার মানসে। যাহোক আমার শিক্ষকের কল্যাণে অন্তত জেল ভাঙ্গা কয়েদিকে দেখা হল!
যখন বাসায় ফিরছিলাম তখন একটা কথাই বারে বারে মনে পড়ছিল , এই মহান শিক্ষকের পরিমিতি জ্ঞানের বহর দেখে, একজন অধ্যাপক কি করে এমন অনিয়ন্ত্রিত আচরণ করতে পারেন! কী জানি হয়ত তিনিই ঠিক। কারন কোথায় যেন পড়েছি .. " বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিজেদের বিশ্বের শিক্ষক মনে করে থাকেন" । তো বিশ্বের শিক্ষকগন তো আর এত সহজে ভুল করতে পারেননা!
শেষ পর্যন্ত আমার সান্তনা এই টুকুই যে , ক্লাস শেষে আমার সহপাঠি এবং সহপাঠিনীদের অনেকেই স্যারের আচরন এর নিস্দাবাদ জানিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছে ,!
এখন আমার ভাবার পালা , আমি কবে স্যার এর সাথে বেয়াদবি করেছি!!
একজন অতি নিরিহ ছেলেরাও কখনো কখনো বেয়াদবি করে ফেলতে পারে!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।