আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উন্নয়ন ভাবনায় থিয়েটার (১ম র্পব )



সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতির বিকাশমান ধারায় এদেশের মানুষ আনন্দ-উৎসবমুখরতায় জীবন অতিবাহিত করতে অভ্যস্ত। এজন্য এদেশের মানুষকে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা রাষ্ট্রিয় দুঃসময় পরাহত করতে পারেনি । এমনকি তারা সাময়িক অসহায় বোধ করলেও অল্পসময়ের মধ্যে তা কাটিয়ে উঠে। হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পটভূমি এ দেশে থিয়েটার চর্চার ইতিহাস অনেক পুরোনো। নানা সামাজিক আয়োজনে গ্রাম কিংবা শহরের সাধারন মানুষজন থিয়েটার প্রদর্শন করে।

এদেশের সাধারন মানুষ সংস্কৃতির প্রত্যেকটি ধারাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে চর্চা করে এবং সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত শিল্পী কলা কুশলীদের অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে। গ্রামে গ্রামে পৌষমেলার সময় বা অন্য কোন আয়োজনে যখন পালাগান, যাত্রা বা মানতের গান হয় তখন দেখা যায় আযোজক মানুষটির কত ছুটোছুটি শুধুমাত্র শিল্পী আপ্যায়নে অথবা শিল্পীদের দেখার জন্য দর্শকদের উপচে পরা ভীর তারা কি খায় কেমন করে খায় বিষয়টি জানার জন্য। আবার যাত্রাপালা অথবা অন্যকোন পালা, নাটক শুরু হয় মঞ্চকে ভক্তি করে তার পর একটি দেশের গান অথবা প্রার্থনা সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। দেখা যায় এদেশের শিল্পীরা গান শুরুর আগে বাদ্যযন্ত্র ছুয়ে ভক্তি করে। এটিকে সে প্রর্থনা হিসেবে নেয় এবং যন্ত্রটির প্রতি তার অসামান্য আনুগত্যের প্রকাশ ঘটায়।

অনিচ্ছায় যন্ত্রানুষঙ্গে পা লাগলে চুমু খায় এতে তাঁর অপরাধবোধ প্রশমিত হয়। উল্লেখিত অনুভূতির কারন একটাই বাংলার সুপ্রাচীন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ ছিল আনন্দময় আর একটি সমসাময়িক বার্তা ও চিন্তার প্রয়োগ ভাবনা। নাটকের ইতিহাস পড়লে দেখা যায় পৃথিবীর নাট্য ভাবনাগুলিও সে রকম। এ ক্ষেত্রে মাইকেল এথারটনের সুন্দর একটি প্রশ্ন উল্লেখ করা যেতে পারে- “যদি পুরোনো দিনের অশিতি, নিরর, চাষির নাচ , গান, বর্ণনাত্বক নাট্য ঐতিহ্য, মুখোশ-নৃত্য এবং উৎসবের মাধ্যমে এমন প্রদর্শন যোগ্য শিল্প সৃজন করে থাকেন যা আজকের বুদ্ধিজিবীরা গবেষণার যোগ্য বলে বিবেচনা করেন , তাহলে সামাজিক উন্নয়নের কবলে শুধু এই বুদ্ধিজিবীদের সৃষ্ট নাটকই কেবল অনুধাবনযোগ্য বলে মনে করা হয় কেন?” একটা সবচ্ছ ধারনা বাংলার সংস্কৃতিতে আদিম কাল থেকেই প্রবাহমান। আর সে জন্যই বারে বারে এখানে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে বিদেশী পরাশক্তি তথা অশুভ শক্তিকে হার মানতে হয়েছ্ ে।

বিদেশী শক্তির দ্বারা এদেশের মানুষ বারে বারে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। এদেশের অর্থনিতীর বিভাজন প্রাচীনকাল থেকে বিদ্যমান ছিল কিন্তু বিদেশী পরাশক্তির উদ্দেশ্যই ছিল এদেশের সাধারন মানুষকে পেছনে ঠেলে দেয়া। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর দেশ গড়ার আনন্দে মানুষ চঞ্চল হয়ে উঠল ঠিকই কিন্তু এ আনন্দ অল্পদিনের মধ্যে ম্রিয়মান হয়ে গেল। নানা সংকট আর সমস্যায় বাংলাদেশ একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াল। এই অনিশ্চয়তার মধ্যে কিছু সহজ মানুষের দ্বারা বাংলাদেশে নাটকের আন্দোলন শুরু হল।

তাঁদের নিরলস প্রচেষ্টায় নাটক দাড়াল ঠিকই কিন্তু দেশের অর্থনীতি দাড়ালনা। আস্তে আস্তে রাজনীতি কুলশিত হল। এর মধ্যেও চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দলীয় মেম্বারদের চাঁদার রশিদ ধরিয়ে দিয়ে নাটকের দলগুলো কোনরকমে নাটক চালিয়ে গেল। যে আদর্শকে ল্যকরে নাটকের দলগুলো যাত্রা শুরু করেছিল এই সংকটের মধ্যে তা ছাড়ল অথবা ছাড়লনা অথবা নিষ্ক্রিয় রইল। ফলে আ¯েত আস্তে রেগুলার মহড়া করে নাট্যচর্চা এসে ঠেকল দুইদিনে।

প্রদর্শনী হয়ে গেল মহিলা সমিতি, গাইড হাউস ( এটিও অনেকদিন বন্ধ আছে। )সা¤প্রতিক জাতীয় শিল্পকলা একাডেমীর দুটি হল। ফলে এদেশে নাটকের যে সমাদৃত জনপ্রীয়তার ইতিহাস ল্য করি তাও থেমে গেল। নাটককে জনপ্রীয় করাও যে নাটকেরই কাজ তা আমরা ভূলে গেলাম অথবা ভূলতে বাধ্য হলাম। নাটক হয়েগেল মফশ্বল শহর আর ঢাকার কিছু সংখ্যক মধ্যবিত্ত আর নাট্যকর্মিদের বিনোদন চিন্তা।

এর পর টেলিভিশন আর প্যাকেজ নাটক চর্চা বাঙ্গালীর বিনোদনে নতুন মাত্রা যোগ করে। মঞ্চের মানুষজন এই মিডিয়ার দিকে ঝুকে পড়ল। মঞ্চ কর্মীদের টেলিভিশনের দিকে ধাবিত হওয়ার মূল কারন অর্থনৈতিক। কারন কোনকালেই সম্মানীর বিনিময়ে এদেশে থিয়েটার চর্চা হয়নি। চলবে.....................


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।