আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইচ্ছেরা সব হয়না পূরণ

আমি কি হনুরে... ৩ ... ;)

১. ভার্সিটির শেষ টার্ম। সকালের ক্লাস নিয়মিতভাবে করছিনা। কিন্তু যাচ্ছি ঠিকই সকাল ৮.০০ ঘটিকার আগে, সকালবেলায় ভীষণ প্রিয় ক্যাম্পাসের সব রূপ, সব রং, সব গন্ধকে নিজের ভিতরে গেঁথে নেয়ার জন্য। এমনই এক সকালে বসে আছি র‌্যাগ ব্যাচের জন্য নির্দিষ্ট জায়গাটার এক কোনায়, টুকটাক কথা বলছি আর অন্য জুনিয়রদের ব্যস্ত চলাফেরা দেখে ছোট ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলছি। পাশে পোলাপান কার্ড খেলছে, কেউ ওখানেই নাস্তা করছে।

ক্যাম্পাসে ২ টা পিচ্চি আছে যারা নিয়মিত ফুল বিক্রি করে, আজকে বহিরাগত কয়েকটাকে দেখা যাচ্ছে। যাই হোক কিছুক্ষণ পর একটা ছোট মেয়ে সরাসরি আমাকে এসে জিজ্ঞেস করল: "আফনে @@@ ??" "হ্যাঁ, ক্যান??" "লন। এক আফায় আফনেরে দিসে" - এই বলে ২ টা ইয়া বড় বড় গোলাপ ধরিয়ে দিয়ে তুফানের বেগে হাওয়া । পরে খুঁজেও সেই পিচ্চিকে পাওয়া যায়নি, প্রেরকও সামনে আসেনি । বড় ইচ্ছা ছিল একটা থ্যাংকু দেয়ার... ২. 'সিগনাল এ্যান্ড লিনিয়ার সিস্টেমস' পরীক্ষা।

পড়ে মোটামুটি উড়ায় ফেলেছি, বই খাতা ভাজা ভাজা হয়ে গেছে, তারপরও ভয় ভয়, না জানি কি হয় !! হলে গেলাম, প্রশ্ন পেলাম। প্রথম দিকে ভালই মনে হচ্ছিল, কিন্তু তারপর দেখি কিছুই ঠিকমত মেলাতে পারছিনা এবং শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা জঘন্য আকার ধারণ করল । প্রচন্ড ইচ্ছা করছিল খাতায় গোল্লা টাইপ একটা মুখের ছবি এঁকে বড় বড় করে "পড়াশুনার খ্যাতা পুড়ি " লিখে দেই। কিন্তু কোর্সের রগচটা ম্যাডামের কথা ভাবতেই আত্মা শুকায় গেল, নির্ঘাৎ ফেল করায় দিবে ম্যাডামের ২/১ টা ডায়লগ বলি, হ্যাঁ? - "তোমরা আমাকে রাগায়ো না, রাগলে আমি ভাত খাইনা। (তো আমাদের কি?? )" - "আমি (বুকে হাত দিয়ে বলতেন) অন্তর থেকে বিশ্বাস করি তোমরা আমার চেয়ে বেশি পড়াশুনা কর না।

" গররররর.... । উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে অনেকদিন পর ম্যাডামকে দেখলাম রাইফেল্স স্কয়ারে, অনেক শুকনা লাগছে, পি.এইচ.ডি. এর প্রেশার বলে কথা । বড় ইচ্ছা ছিল গিয়ে বলি "ম্যাডাম আমি অন্তর থেকে বিশ্বাস করি যে আপনি পড়তে পড়তে শুকায় গ্যাছেন। " ৩. একদিন ভার্সিটি ক্যাফেতে বসে বিকাল ৩.৩০ এর দিকে চা খাচ্ছি। হঠাৎ খেয়াল করলাম সামনের টেবিলে একটা মেয়ে আর একটা ছেলে বসে ভাত খাচ্ছে, আর মেয়েটা মনে হল খুব মজা পাচ্ছে খাবারে।

বার বার আঙুল চাটছে (মেয়েটার আঙুলগুলো সুন্দর ছিল )। দেখেই আমার খিদে (খাবারের জন্য ) পেয়ে গেল। খুব ইচ্ছা করছিল ঐ প্লেট থেকে এট্টু খেয়ে দেখি ৪. ছোট বেলায় বেশ কামেল ছাত্র ছিলাম । বাসায়ও পড়াশুনার অনেক কড়াকড়ি ছিল। সকালে উঠে পেট চেপে নাক মুখ কুঁচকায় ব্যাথাআআআ..... বলে কোঁ কোঁ করলেও হিড় হিড় করে টেনে স্কুলে নিয়ে যেত যখন কেলাস ফাইভে পড়ি, তখন ১ম সাময়িক পরীক্ষার মধ্যেই হেভি জ্বর আসল।

জ্বর নিয়াই ৩ টা দিয়ে দিলাম। সমস্যা হল ইংরেজি পরীক্ষার আগের দিন, কিছুই ভাল লাগেনা। হঠাৎ মন চাইল ইসসস কোন দিন তো কোন পরীক্ষায় বাংক মারিনাই, এই সুযোগে ট্রাই মারলে কেমন হয় । আম্মার সাথে জীবনের অন্যতম সেরা অভিনয় করলাম যে প্রচন্ড খারাপ লাগছে, কালকে এরকম জ্বর থাকলে কিছুতেই যাব না পরীক্ষা দিতে। অনেক ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যানের পর আম্মা রাজি হল।

শেষ পর্যন্ত পরীক্ষার দিন ভোরে আমার জ্বর নেমে যায় । ৫. রাত ১.৫১ বাজে। বসে বসে ব্লগ পড়ছি। হঠাৎ বাইরে হৈ হৈ শুনে বারান্দায় বের হলাম। নীচে সব গার্ডরা হুইসেল দিচ্ছে, বুঝলাম চোর বাবাজী হানা দিয়েছেন।

কিছুদিন যাবৎ আমাদের হাউজিং এরিয়াতে সমানে ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি হচ্ছে, আজকে অবশ্য বুঝতে পারলামনা প্রথমে যে কি চুরি হয়েছে। যাই হোক, গার্ডরা সমানে হাঁকডাক দিচ্ছে। হঠাৎ দেখলাম 'উনি' আমার বারান্দার নীচে ডান দিকে যে দেয়াল সেটার উপর দিয়ে গুটি গুটি হেঁটে যাচ্ছেন, হাতে সেই ম্যানহোলের ঢাকনা। খালিগা, লুঙ্গি কাছা মারা, স্বাস্হ্য খারাপ না। কোন তাড়াহুড়া নাই, অস্থিরতা নাই।

যাই হোক উনি দেয়ালের ঐপারে একটা একতলার ছাদে ঢাকনা টা রেখে আবার কেন জানি ফেরৎ আসা শুরু করলেন, ঠিক যখন মাঝপথে তখনই একজন গার্ডের টর্চের আলোয় ধরা পড়লেন। গার্ড সাথে সাথে জায়গায় দাঁড়িয়ে লম্ফঝ্ম্ফ আর অন্যদের উদ্দেশ্যে হুইসেল, আগানোর কোন নাম নাই । 'উনি' সুন্দরমত আবারও চিকন দেয়ালের উপর দিয়ে হেঁটে ঢাকনা হাতে নিয়ে আরেক চিপা দিয়ে হাওয়া হয়ে গেলেন । 'উনাকে' দেখার পর একটা চিক্কুর দিতে প্রবল ইচ্ছা করে নাই তা না, কিন্তু এই ইচ্ছাটা ইচ্ছা করে পূরণ করিনাই। তার মানে আসলে আমার ইচ্ছা পূরণ না করার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।