আমি পড়ি, লিখি, মুভি দেখি, ঘুরে বেড়াই আর আড্ডা দেই......:)
নীলফামারী। দেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা। এ জেলার উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দেিন রংপুর, পূর্বে লালমনিরহাট এবং পশ্চিমে রয়েছে পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলা।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বৃটিশ আমলের নীল চাষ ও নীলবিদ্রোহ থেকেই নীলফামারী নামের উৎপত্তি। এ এলাকার মাটি নীলচাষ সহায়ক হওয়ায় এখানে অধিক পরিমান নীল উৎপন্ন হত।
তাই এখানে গড়ে তোলা হয় বহুসংখ্যক নীলখামার। শহর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে পুরাতন রেলস্টেশনের কাছে আজও ইতিহাসের সাী হয়ে দাড়িয়ে আছে বড় আকারের এই নীলখামারটি।
বৃটিশদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় নীল চাষে আগ্রহ হারাতে থাকে কৃষকরা । তবে নীলকরদের চাপে বাধ্য হয়ে নীল চাষ করত তারা। কথার অবাধ্য হলে গরীব অসহায় কৃষকদের ওপর নেমে আসত নির্যাতন।
এখনও সেই নির্যাতনের স্ব্যা বহন করছে নীল কারাগার নামের এই ঘরগুলো । ১৯৫৯ থেকে ৬০ সাল পর্যন্ত কৃষকদের নীল বিদ্রোহের মাধ্যমে শেষ হয় নীল চাষ । নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পন নাটকের যেন জীবন্ত ছবি এ নীলখামার ও কারাগার।
শহরের ভেতরে অবস্থিত এই নীলকুঠি আজও নীলকরদের সেই অত্যাচারের ইতিহাস বহন করছে। এক সময় ইংরেজ নীলকরদের আড্ডাখানা হিসাবেও এটি ব্যবহার হত।
পরে এটি মহকুমা প্রশাসকের বাসভবন হিসেবে ব্যবহার হয়। বর্তমানে এটি জেলা অফিসার্স কাব ।
বর্তমান ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার বাগডোকরায় ১৮৭৫ সালের ১৮ই মে নীলফামারী মহকুমার কার্যক্রম শুরু হয় । পরে ১৮৮২ সালের ১৯ মে বর্তমান নীলফামারী জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের পাশে পুরাতন মহকুমার দপ্তর স্থাপিত হয়। অনেকের মতে ডোমার থানার বাগডোকরা নামক গ্রামেই প্রথম নীলফামারী মহকুমার অস্থায়ী কার্যক্রম শুরু হয়।
১৯৮৪ সালে নীলফামারী মহুকুমােেক জেলায় রুপান্তর করা হয়। বর্তমানে ডিমলা, ডোমার, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী সদর এবং সৈয়দপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত নীলফামারী জেলা। কিশোরগঞ্জ উপজেলার নামকরন নিয়ে রয়েছে মতপার্থক্য।
স্বাধীনতা যুদ্ধে নীলফামারীতে শহীদ হন ক্যাপ্টেন বাশার সহ ৪৬জন মুক্তিযোদ্ধা।
নীলফামারীর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে নীলসাগর অন্যতম।
শীতে হাজার হাজার অতিথি পাখির আগমন ঘটে এই নীলসাগরে।
শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গোড়গ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিতনীল সাগর। আয়তন ৫৩.৯ একর । হিন্দুশাস্ত্রের ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব নবম থেকে অষ্টম শতকে এ এলাকার অধিপতি ছিলেন রাজা বিরাট। তার বিপুল সংখ্যক গবাদি পশুর পানি পানের জন্য খনন করেন প্রকান্ড এই দিঘী ।
মেয়ে বিন্নার নামে নামকরন করেন বিন্না দিঘী। পরে ১৯৯৭ সালে নীলফামারী নামের সাথে সংগতি রেখে এর নামকরন করা হয় নীলসাগর।
নীলফামারীতে ঘুরে দেখার মত আরো আছে কুন্দুপকুর মাজার, সৈয়দপুরের চিনিমসজিদ এবং গির্জা।
শহর থেকে চার কিলোমিটার দুরে কুন্দুপকুর ইউনিয়নে অবস্থিত কুন্দুপকুর মাজার। এ এলাকায় ইসলাম প্রচার করতে আসা সুফি হযরত মীর মহিউদ্দিন চিশতি (র) এর মাজার এটি।
তিরিশ একর জমি জুড়ে রয়েছে মাজার ও মাজার সংলগ্ন পুকুর। প্রতিবছর মাঘ মাসের ৫ তারিখ থেকে তিনদিনব্যাপি এখানে ওরস অনুষ্ঠিত হয়।
ঐতিহ্য ও সৌন্দের্যের এক অপার সমন্বয় ঘটেছে সৈয়দপুরের গোলাহাটের চিনি মসজিদে। ৩টি বড় গম্বুজ ও ৩২টি মিনারের এ মসজিদটি উজ্জল পাথরে আবৃত । চিনামাটির টুকরা দিয়ে আঁকা বিভিন্ন ফুল ও গাছের নকশা সকলের নজর কাড়ে।
১৮৬৮ সালে সৈয়দপুর উপজেলার গোলাহাট এলাকায় স্থাপিত হয় এ মসজিদটি। শুরুতেই এটি ছিল দু’তলা বিশিষ্ট টিনের ঘর। পরে ১৯২০ সালে হাজী হাফেজ আব্দুল করিম এটি পাকা করার উদ্যোগ নেয়। ১৯৬৫ সালে এর দ্বিতীয় অংশ পাঁকা করা হয়। ভারত থেকে আনা ২৪৩ টি সংকর ও মর্মর পাথর ব্যবহার করা হয়েছে এ মসজিদে।
জেলার সৈয়দপুরে রয়েছে শত বছরের পুরাতন গির্জা । ধারনা করা হয় এটি উত্তরাঞ্চলের প্রথম এবং প্রাচীনতম গির্জা । আজও কালের সাী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বৃটিশদের নির্মিত নয়নাভিরাম লাল ইটের এই গির্জাটি।
উত্তর অঞ্চলের উঁচু জমিতে সেচ সুবিধার জন্য নির্মাণ করা হয় তিস্তা ব্যারেজ। এটি নীলফামারী ও লালমনির হাট জেলার সীমান্তবর্তী দোয়ানীতে অবস্থিত ।
১৯৭৯ সালে কাজ শুরু হলেও নির্মানের কাজ শেষ হয় ১৯৯০ সালে । এ প্রকল্পের আওতায় উত্তরাঞ্চলের ১৩ লাখ ৩৫হাজার হেক্টর কৃষিজমি সেচ সুবিধা পাচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।