আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেমন আছে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশী মহিলা শ্রমিকরা ?



আমার এই লেখা টি একটু দীর্ঘ। পাঠক মন্ড়লী বিরক্তি বোধ না করে প্লীজ আমার লেখাটি একটু মনযোগ সহকারে পড়ুন। সমাজের সবাই বলে ঘর সংসার দেখা মহিলার কাজ, সংসার সামাল দিতে হিমশিম খাওয়া পুরুটাকে সাহায্য করতে গিয়া অনেক মহিলা দেশে বিভিন্ন পেশায় আত্ন নিবেদন করে যোগ্যতা অনুযায়ী। আবার কেউ বা বেশী লোভে বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন রাতারাতি বড় লোকের স্বপ্ন দেখে। এই লোভে আত্নীয় স্বজন,বন্ধু-বান্ধবী ও সরকারীভাবে ও পথ দেখিয়েছেন।

সেই সুজোগেই আদম ব্যবসায়ীরা ও সুবিধামত পন্য সামগ্রীর মত মহিলাদের কে বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর সম্পদ অর্জন করেছেন। অভাবে স্বভাব নষ্ট অনেকের জন্য সত্য বটে। অনেক মা-বাবা,বিবাহিত,অবিবাহিত,কুমারী,যুবতীদের কে আত্নীয় নামের দালালদের হাতে সপে দেয়। বিয়ে নামে ও অনেক দালাল স্ত্রীকে এনে বিদেশে জোর পুর্বক দেহ ব্যবসা ও অসামাজিক কাজ করায়। বিদেশের কাজ কি রকম বা কি করতে হবেতা বুজার আগেই শিক্ষিত ,অর্ধশিক্ষিত ও মুর্খদের পাঠায়।

এই সব মহিলাদের আত্নীয় স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবীরা বিদেশের বাড়ীতে পরিচারিকার কাজ দেয়। কেউবা দোকানের সেলস লেডী হিসাবে ছোট খাট গার্মেন্টেসে কাজ পায়। এদের অবস্থা মোটামুটি থাকলে ও যারা সরকারীভাবে বিদেশী ক্লিনিং কোম্পানীতে এসে স্কুল কলেজ,হাসপাতাল ও বিমানবন্দরে কাজ পায় তাদের বেতন বেতন নাম মাত্র ১৬/১৮ দিনার, ৮ ঘন্টা কাজ ,ওভার টাইম হতে পারে নাও হতে পারে। মাসের শেষে অনেকের হাতে বেতন নামের স্বর্নের ডিম টি আসেনা। প্রথম ৫/৬ মাসের বেতন মেডিক্যাল চার্জ রেসিডেন্স ফি,ইনসুরেন্স,পোশাক, যাতায়াত ও বাসস্থান এর ভাড়া বাবদ কেটে রাখে,তাই ১০/১৫ দিনার অগ্রীম দেয়।

খাওয়ার জন্য তাও পরে কেটে নেয়। এই হলো ক্লিনিং কোম্পানি গুলোর চিত্র। এখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগবে এদের খাওয়া - দাওয়ার জন্য টাকা কোথায়?বিদেশে আসার খরচ কিভাবে পরিশোধ করবে?পরিবার পরিজনকে কি পাঠাবে?অনেকেই এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে হতভম্ব। তার পরে ও কাজের অজুহাত দেখায় বেতন কাটা,কাজ না ডেওয়ার অভিগ্গতার জন্য। ছেলেরা কোম্পানি থেকে ২/৪ মাস কাজ করে পালায় অন্য কাজের ব্যবস্থা করে।

কিন্তু মহিলারা কো্থায় যাবে বা কি করবে?এমতাবস্তায় কেউবা পর পরুষের সংগীনি হয়ে থাকছে,কেউ অবৈধ ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে,এটাও অনেক কোম্পানির কর্মকর্তাদের দুঃস্কর্মের জন্য। অবিবাহিত সুন্দরী যুবতীদের কে কোম্পানীর আজ্ঞা মানতে গিয়েই হারাতে হচ্ছে ইজ্জত। পরবর্তী বদনামের ভাগি হয়ে কোম্পানি থেকে পালিয়ে যায়। আর যারা স্কুল,কলেজে কাজ পায় তাদের অবস্থা একটু ভালো হলে ও কাজ থাকলে বেতন কাজ না থাকলে বেতন নাই। মানে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকলে মহা বিপদ।

৩/৪ মাস বেতন। কাজ ছাড়া কিভাবে চলবে বা কি করবে ওরা ?এর পরিনতি পেট বাঁচাতে ইজ্জত বেঁচা,অভিসপ্ত জীবন। যারা বাসা বাড়ীতে কাজ করছে তাদের জীবন ও করুনা ভরা,কেউ সকাল ৫ টায় ঘুম থেকে উঠে মেশিনের মত কাজ করে রাত ১২/১ টা পর্যন্ত,বিশ্রাম ও আহারের সময় থাকে না। বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া,খাওয়া শেষ হতেই সাহেবের নাস্তা,মেডামের কপি,বাড়ীর উঠান,বারান্দা ধোয়া মুছা,শোবার ঘর পরিস্কার,গোসল খানা পরিস্কার শেষ হতেই দুপুরের খাবার তৈরিতে লাগতে হয় এর মধ্যেই বিভিন্ন ফরমাস মিটাতে হয়। ড্রইভারের খাওয়া দাওয়া,বাড়ীর কাজের প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের অর্ডার করা ,প্রয়োজনে নিজেরাই বাকালা/জামাইয়া (সুপার মার্কেট ) যাওয়া আসা।

মেশিনে কাপড় ধোয়া ও শুকানো ইস্ত্রি করা। যদি বা সেই বাড়ীতে ২/৩ জন কাজের মহিলা বা খাদ্দামার হাতেই সব কিছু খাওয়া নাওয়া,সেবাযত্ন। এসবে ভুলত্রুটি হলে রক্ষা নাই। গালিমন্দ,এমন কি মারধোর করে,মহিলারা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানা সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে বলে। সাহেবের সহানুভুতি নিতে গেলে মেডামের রাগ।

অনেক সময় মেডামের অনুপস্থিতিতে সাহেবরা লোভী হয়ে জোরপুর্বক ভোগ করে খাদ্দামা। এমন ও অনেক ঘটনার সংবাদ আসে বাড়ীর বড় ছেলেরা সুযোগ ফেলে কাজের মেয়েকে ভোগ করে। বেচারী কাজের মেয়ে নিজ ও সংসার,ছেলে মেয়ের ভবিষ্যত চিন্তা করে অমানবিক অত্যাচার সহ্য করে। আবার কেউ বা ঘর ছেড়ে পালায়। পথে কাহারো নিকট আশ্রয় ও সাহায্য প্রার্থনা করলে প্রথমে আশ্রয় দিলে ও পরে ভক্ষক সেজে ভোগ করে নিষিদ্ধ বস্তিতে বিক্রি করে দেয়,এসবের ঘটনার কথা বিদেশিরা স্বীকার ও করেন।

শুধু যে বাংলাদেশীদের সাথেই হচ্ছে তা নয়। ফিলিপিনী,ভারতীয়,ইন্দোনেশিয়ান,নেপালী,শ্রীলংকান এমন কি নিজের দেশের মেয়েদের উপর ও হচ্ছে। বাংলাদেশী ২/১ জন মহিলার দুঃখের কথা উল্লেখ করতে চাই এখানে। বড় ঘরের কুয়েতীর বাড়ীতে প্রায় ৭/৮ বৎসর যাবৎ কাজ করছে,প্রথমে গৃহ পরিচারিকা,পরে বাবুর্চি তার কাজ সকাল থেকে দুপুর ২/৩ টা পর্যন্ত রান্না,খাওয়ানো,একজনই সবকিছু,তার পরে রান্না ঘর থেকে খাওয়ার ঘর পর্যন্ত খাওয়া পৌঁছাতে,১ম তলা থেকে ২য় তলায় খাওয়া নেয়া আনা সবই। খাওয়া শেষে ৫/৬ জনের জন্য বিভিন্ন চা-কফি।

যে কাজ টা বেশী অসুবিধার তা হল কুকুর দেখা,মুসলমানের ঘরে কুকুর,এর খবরদারী। সাপ্তাহিক ছুটি মাসে ২ বার তাও বেলা ১ টার পর দুপুরের খাবার তৈরি করে। বেতন ৬০ দিনার। ২/৩ বৎসর পর ৫ দিনার বাড়ায়। বাৎসরিক ছুটিতে কম দামের বিমান টিকিট ইত্যাদি।

অন্য এক মহিলার কাহীনি ,সে ইরানী শিয়া কুয়েতীর ঘরে কাজ করতো। এরা এজেন্সীর মাধ্যমে এসেছিল,কোন চুক্তিপত্র ছিল না,মাসে কোন ছুটি নাই। কোন আত্নীয় স্বজনের সাথে দেখা সাক্ষাত নাই। কিশোরগন্জের প্রত্যন্ত অন্চলের মেয়ে নার্গিস। ইরানীর বাড়ীতে প্রায় ৫/৬ বৎসর যাবৎ কাজ করছিল,হঠাৎ তার অর্শ্ব /গেজ রোগ ধরা পড়ে,মালিকরা হাসপাতালে নিবে না বলায় ওরই পরিচিত মুখেবলা ঢাকাবাসী ভাইকে ফোনে বিস্তারিত জানিয়ে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলে,নিজে যেতে না পেরে খালাতো ভাই কে দিয়া কল টেক্সী করে বড় হাসপাতালে নিয়া পরীক্ষা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা হচ্ছিল।

তখনই মালিক এসে ড়াক্তার কে বলে ভর্তি না করতে। কুয়েতী রোগীকে বাড়ী নিয়ে যায় এবং ২ দিনের মধ্যে টিকেট এনে আকামা (রেসিডেন্সী) কেটে দেশে পাঠিয়ে দেয়। বেচারী দেশে অসহায়ের মত গিয়া আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পড়ে,দেশের বাড়ীতে কবিরাজী চিকিৎসায় আরোগ্য লাভ তো হয় নাই। ৪/৫ দিনের মধ্যে মৃত্যুর কোলে শুয়ে পড়ে। এ হলো বাংলাদেশী মহিলার কাহীনি।

হিসাব মতে শতকরা ২/১ জন মহিলাই বাড়ীতে কাজ করে। আমাদের জানার বাহিরে ও অনেক মহিলারা আছেন তাদের খোঁজ খবর নিকট আত্নীয়রা ও জানে না। বাংলাদেশী বেশীর ভাগ মহিলাই ক্লিনিং কোম্পানীতে আছেন তারাই ভোগতোভুগী। বেতন ঠিক মত পায় না,বেতন ও কম,কাজ নাই বেতন ও নাই। ছেলেরা বকশিস,ছালামী পায় ,মেয়েরা তা পায় না।

পাইলে ও অন্যায়ভাবে যার ফলে বদনামী। বর্তমান ভারত ,শ্রীলংকা,ফিলিফিনের শ্রম মন্ত্রনালয় ঐ সব দেশে শ্রমিক পাঠাতে বেতন ধার্য করেছে কুয়েতী ৬০ দিনার,টিকিট খাওয়া-দাওয়া ও চিকিৎসার খরচ বহন করলে মহিলাদের পাঠাবে অন্যথা নয়। এই হল মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশী মহিলা শ্রমিকদের জীবন কাহিনী ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.