আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ : আন্তর্জাতিক আদালতে জবাব দিল বাংলাদেশ

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারতের দাবির বিপরীতে জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে সমুদ্রসীমা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতে বাংলাদেশের পক্ষে এই জবাব পেশ করা হয়। জবাবে ভারতের দাবি করা সম-দূরত্ব পদ্ধতির বিরুদ্ধে যুক্তি ও তথ্য তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশের পক্ষে বলা হয়, বাংলাদেশের উপকূলীয় রেখা অবতল আকৃতির হওয়ায় ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করতে হবে।

সূত্র জানায়, হেগে গতকাল বাংলাদেশের পক্ষে ন্যায্যতাভিত্তিক সমাধানের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রিয়ার এডমিরাল (অব) খুরশেদ আলম স্থানীয় সময় দুপুর একটায় হেগের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস ভবনে স্থায়ী সালিশ আদালতে (পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবি ট্রেশন) বাংলাদেশের পক্ষে জবাব পেশ করেন। নেদারল্যান্ডস এ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আলী সরকার গতকাল রাতে ইত্তেফাক প্রতিনিধির কাছে জবাব পেশের কথা নিশ্চিত করেন। এই সমুদ্রসীমা মামলায় বাংলাদেশের পক্ষে প্রধান এজেন্ট হলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ডেপুটি এজেন্ট অতিরিক্ত সচিব খুরশেদ আলম গতকাল রাতে ইত্তেফাক প্রতিনিধিকে টেলিফোনে জানান, ৩১ জানুয়ারি আমরা জবাব পেশ করলাম।

আগামী জুলাই এর মধ্যে ভারতের কাজ থেকে জবাব নেবে স্থায়ী সালিশ আদালত। এরপর উভয় পক্ষের শুনানি শেষে রায় হবে। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বহু বছর ধরে দুইদেশের মধ্যে চলা আলোচনায়ও বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। ২০১১ সালের মে মাসে সাগরের সীমানা নিয়ে বাংলাদেশ তার তথ্য-উপাত্ত পেশ করে। ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধের মূল জায়গাটি হলো সমুদ্রে মহীসোপানে যাওয়ার রেখা টানা নিয়ে।

ভারত চায় সম-দূরত্বের (ইকুইডিসট্যান্স) ভিত্তিতে রেখা টানতে। কিন্তু বাংলাদেশ চায় সমতার ভিত্তিতে। এতে ভারতের দাবিতে ১৬২ ডিগ্রি এবং বাংলাদেশের দাবি ১৮০ ডিগ্রি রেখা টানতে হবে। বাংলাদেশ-ভারতের দক্ষিণ সীমান্তের শেষে সমুদ্রের লো-টাইড তলদেশ থেকে শুরু করে ২০০ নটিক্যাল মাইল যে লম্বা রেখাটি বাংলাদেশে টেনেছে সেটা নিয়েই ভারতের আপত্তি। এক্ষেত্রে রেখাটি ১৮০ ডিগ্রি ধরা হলে ভারত বলছে এটা বাংলাদেশ অংশ থেকে ১৬২ ডিগ্রি হবে।

তবে এই রেখাটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির করে আন্তর্জাতিক সমুদ্রের সঙ্গে মিশেছে। অন্যদিকে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা মামলার রায়টি ভারতের সঙ্গে বিরোধ মেটাতে বাংলাদেশের পক্ষে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। ভারতের বিপক্ষে মামলার রায় যাই হোক না কেন, বাংলাদেশ কোনোভাবেই আর আন্তর্জাতিক সমুদ্রে 'জোন লকড্' হচ্ছে না। কারণ মিয়ানমারের সঙ্গে রায়ের পর সে আশঙ্কা একেবারেই দূর হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের আপত্তিতে বলা হয়েছিল, ভারত যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা সমুদ্র আইন বিষয়ক জাতিসংঘ কনভেনশন (আনক্লজ) এবং সিএলসিএসের নিয়মকানুন পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

ভারতের দাবি আনক্লজ ও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বঙ্গোপসাগরের মহীসোপান এলাকা, বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা ও সার্বভৌম এলাকা নির্ধারণ অমীমাংসিত রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর মিয়ানমারের বিপক্ষে জার্মানির হামবুর্গের ইটলসে দুই দেশের মধ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ। গত বছরের ১৫ মার্চ ২৩ সদস্যবিশিষ্ট ট্রাইব্যুনাল মিয়ানমারের প্রস্তাবিত সম-দূরত্ব পদ্ধতি, যা বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকাকে ১৩০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেয়, তা প্রত্যাখ্যান করে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত দু'দেশের সমুদ্রসীমা চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করে দেন। ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার রায় পাওয়া যাবে।

মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের সময় 'ন্যায্যতা' ভিত্তি ধরে সীমানা নির্ধারণের বাংলাদেশের দাবির যৌক্তিকতা মেনে নিয়েছিল 'ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ল অব দ্য সি' (ইটলস)। ফলে একই নীতি মেনে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের পক্ষে রায় আসবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে। যদিও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মামলা ইটলসে নিষ্পত্তি হচ্ছে না। সূত্র জানায়, সালিশ সংক্রান্ত স্থায়ী আদালতে এবারের মামলা পরিচালিত হলেও এখানেও পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট বিচারক প্যানেলে ইটলসের তিনজন বিচারক অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। এই তিন বিচারক ইতিপূর্বে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণী রায় দিয়েছিলেন।

ফলে তাদের এই রায়ে নতুন কোনো নীতি অনুসরণের সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট বিচারক প্যানেল নির্বাচন করেছে। সালিশ সংক্রান্ত স্থায়ী আদালতে অপর দু'জন বিচারক অবশ্য ইটলসে বাংলাদেশের মামলা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন না। বাংলাদেশের উপকূল অবতল হওয়ায় বঙ্গোপসাগরের অনেক অঞ্চল দেশের ভূখন্ডের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। এই ভূখন্ড থেকে বিপুল পরিমাণ পলিমাটি সাগরে পড়ছে।

এ ধরনের উপকূলের ক্ষেত্রে সম-দূরত্ব পদ্ধতি যৌক্তিক নয়। এ ধরনের উপকূলের ক্ষেত্রে জার্মানির সমুদ্রসীমা নির্ধারণের একটি মামলায় ন্যায্যতার নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চল নির্ধারণে এই নীতি আরেকবার গৃহীত হলো। ন্যায্যতার নীতি অনুসরণ করা হলে উপকূলের মত্স্যজীবীসহ ঘনবসতিপূর্ণ জনবসতির আনুপাতিক সীমানা নির্ধারণ সম্ভব হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.