আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফার্স্ট চয়েস কেয়ার এজেন্সি লি: (বার্মিংহাম-১৪)

ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
আমার ইউনিভার্সিটির পাশেই ওয়ান স্টপ শপিং সেন্টার নামে বিশাল একটা শপিং মল আছে। মূল শপিং সেন্টারের চেয়ে অবশ্য এর কার পার্কটাকেই আমার বেশি বড় বলে মনে হয়। ঢাকায় সাধারণত এতো বড় কার পার্ক দেখা যায় না। এ শপিং সেন্টারে আছে বিশ্বখ্যাত সুপার স্টোর ওয়াল মার্টের আসদা, ম্যাকডোনাল্ডস, কেএফসি, বার্গার কিং আর সাবওয়ের মতো ফার্স্ট ফুডর দোকান। আছে সুপার ড্রাগ আর বুটস-এর মতো বিশাল বিশাল ওষুধের দোকান।

উইলকিনসন, স্পোর্টস ওয়ার্ল্ড, আরগোস ইত্যাদি বিখ্যাত স্টোরগুলোও এখানে আছে। শপিং সেন্টারের চওড়া করিডোরের মাঝে ঢাকার হকারদের মতো কিছু অস্থায়ী দোকানও মাঝে মাঝে বসে। তবে পার্থক্য হচ্ছে, এরা কারও কাছে চাদা দিয়ে এখানে বসেনা। মার্কেটের ভেতরে এরা মার্কেট অথরিটির আর মার্কেটের বাইরে সিটি কাউন্সিলের অনুমতি নিয়ে ব্যবসা করে। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ট্যাক্স-ভ্যাট এগুলো থেকেও এরা মাপ পায়না।

কেনাকাটা করতে ওয়ান স্টপ শপিং সেন্টারে ঘুরার সময় এগুলোর পাশে এক ব্যানার দেখে আকৃষ্ট হলাম। শপিং সেন্টারের মাঝে টেবিল ফেলে দুই মহিলা বসে আছে। ব্যানারে লেখা, ফাস্ট চয়েস কেয়ার এজেন্সিতে লোক নিয়োগ করা হচ্ছে। আমি আর আরেক বাংলাদেশী বন্ধু দুজন ভয়ে ভয়ে গেলাম। বললাম, আমরা এখানে নতুন এসেছি।

স্টুডেন্ট। আপনার এখানে অ্যাপ্লাই করা যাবে কি? আমরা কোথাকার স্টুডেন্ট, কোন দেশ থেকে এসেছি, এগুলো জেনে নিয়ে তারা আমাদের এক পৃষ্ঠার একটা ফর্ম ফিলাপ করতে দিলো। কয়দিন পর মোবাইলে কল আসলো, আমি ফার্স্ট চয়েস কেয়ার এজেন্সি থেকে বলছি। তুমি কি আমাদের অফিসে এসে একটু দেখা করবে? দেখা করলাম, একটা বড় ফর্ম ফিলাপ করলাম। কয়দিন পরে তারা আবার ডাক দিলো।

জুন নামের মধ্যবয়স্ক জ্যামাইকান মহিলা আমার ইন্টারভিউ নিলেন। ইন্টারভিউয়ের পর তারা জানালো, কেয়ার এজেন্সিগুলোর চাকরি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে চাকরি করার আগে সিআরবি চেকিং করাতে হয়। সিআরবি হচ্ছে ক্রিমিনাল রেকর্ড ব্যুরো। কোনো ব্যক্তির নামে পূর্বে অপরাধের রেকর্ড আছে কিনা এটা পুলিশ দিয়ে ভালোভাবে চেক করা হয়।

এই চেকিংয়ের জন্য আমাকে ৫৪.৭ পাউন্ড দিতে হবে। হিসাব করে দেখলাম, প্রায় সাত হাজার টাকা। তাও রাজি হয়ে গেলাম। বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার সময় আমার এক বন্ধুর পরামর্শে স্থানীয় থানা থেকে পুলিশ ভ্যারিফিকেশন রিপোর্ট নিয়েছিলাম। সেখানে লেখা ছিল যে, আমার নামে পুলিশের কাছে কোনো রিপোর্ট নাই।

এ জিনিসটা তারা বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই নিল। আমার সঙ্গে যে বন্ধু অ্যাপ্লাই করেছিলো তাকে সম্ভবত এ রিপোর্টটার অভাবেই তখন ডাকেনি। কয়দিন পর বিকালে প্রতিষ্ঠানের মালিকের মেয়ে মেলিসার ফোন আসলো। হ্যালো, তুমি কি এখন অফিসে আসতে পারবে? খুব তাড়াতাড়ি আসতে হবে। বললাম আচ্ছা।

আমি তখন ইউনিভার্সিটিতে। সবে ক্লাস শেষ হয়েছে। বাসস্ট্যান্ডে গেলাম। বাস আর আসে না। ইংল্যান্ডে তখন শীতকাল।

বিকাল চারটার সময়ই অন্ধকার হয়ে যায়। আমার বাসার সামনে থেকে দুইটা বাস পাল্টিয়ে অফিসে যেতে হয়। আমি তাড়াতাড়ি একটা বাসে চেপে বাসার সামনে আসলাম। তারপর দুইটা বাস পাল্টিয়ে অফিসে গেলাম। যাওয়ার পর মনে পড়লো, ইউনিভার্সিটির সামনে থেকে সরাসরি একটা বাসে অফিসে যাওয়া যেতো।

তাড়াহুড়ায় ব্রেন কাজ করছিলো না। অফিসে যখন গিয়ে পৌঁছলাম তখন বিকাল পাচটা বাজলেও ঘুটঘুটে অন্ধকার। বিশ্রী ঠাণ্ডা আবহাওয়া। তার মধ্যে আবার গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিও পড়ছিলো। অফিসের সামনে গিয়ে দেখি অফিস বন্ধ হয়ে গেছে।

তবু কলিংবেল বাজালাম। মেলিসা এসে দরজা খুলে দিলো। জানালো, সে আমার জন্যই অপেক্ষা করছে। অফিসের ভিতরে পা দিতেই নাকে যে জিনিসটার গন্ধ পেলাম তাকে বাংলায় গাঁজা বলা হয়। আমি মেলিসার দিকে তাকিয়ে গাঁজার গন্ধের উৎসটা বুঝতে পারলাম।

১৯ বছর বয়স্ক এ তরুণীর নাক দিয়ে তখনও হাল্কা ধোঁয়া বেরুচ্ছে। এদেশের বখাটে ছেলে-মেয়েদের মাঝে এ জিনিস খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশের চেয়ে এ জিনিস এখানে নিঃসন্দেহে বেশি চলে। তাই বলে অফিসে বসে বসে গাঁজা টানবে এটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। যাই হোক, ভয়ে ভয়ে ভিতরে গিয়ে বসলাম।

শেষে বৃটেনে এসে মেলিসার সাথে গাঁজা টানতে হবে কিনা বুঝতে পারছিলাম না। আমাকে বসিয়ে রেখে মেলিসা অন্য রুমে গেল। অফিসে দ্বিতীয় কেউ নেই। কিছুক্ষণ পর মেলিসা আবার আসলো। বললো, আগামীকাল থেকে কাজ শুরু করতে পারবে? রাজী না হওয়ার কোনো কারণ ছিল না।

আমার হাতে একটা হলুদ রঙের কাগজ ধরিয়ে দিয়ে জানালো, এখানে আগামী এক সপ্তাহের টাইম শেডিউল লেখা আছে। আগামীকাল সকাল সাতটার সময় জাকিয়ার সঙ্গে কাজে যাবে। কাগজে জাকিয়ার ফোন নাম্বার লেখা আছে। ইশারা পেয়ে কাগজটা নিয়ে এক দৌড়ে বাইরে বের হলাম। যাক বাবা কোনো ঝামেলায় পড়িনি।

গাজাও খেতে হয়নি। কাজটাও পেলাম।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.