সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
সেবার ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার আগে দশবার ভেবেছিলাম যাবো কি যাবো না। ছুটি ঘোষণার আগেই শোনা যাইতেছিল ৩০ জন কি ৫০ জন কি ১০০ জনের লিস্ট তৈরি হইতেছে। লিস্ট হইতেছে, স্যাক হইতেছে এইগুলা যায়যায়দিনের নিয়মিত গসিপের অংশ ছিল। তারপরও ব্যাপারটা মনে কিছু ভয় ধরাইতো।
সেইবার গসিপগুলা কেমন জানি পাকায়া আসতেছিল। দোনামোনা করে ঈদের ছুটি কাটায়া বাড়ি গেছিলাম। ফিরেও আসছিলাম ঈদের পরের দিন রাইতে। সকাল বেলা সমকালের এক কলিগ ফোন দিলেন, উনি লাভ রোড দিয়া অফিস যাইতে গিয়া বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে যায়যায়দিন অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ থাকবে এই নোটিশ দেখছেন। শুনছেন ১০৪ জনকে বরখাস্ত করা হইছে।
সঙ্গে সঙ্গে রাইসু ভাইকে ফোন দিলাম। উনি কইলেন, যা শুনছেন ঠিকই শুনছেন। দুপুর বেলা এক জায়গায় দাওয়াত আছে, গেলে চইলা আসেন। সমস্যা মোকাবেলার রাইসু ভাইয়ের নিজস্ব পদ্ধতি আছে। কারো মাথায় আসবে না এইরকম একটা প্রসঙ্গ থেকে উনি আলাপ শুরু করেন।
টেনশন নিয়া তার কাছে ছুইটা গেলাম। খোঁজ নিয়া জানা গেল, স্যাক হওয়া সাংবাদিকরা যায়যায়দিনের সামনে। আমরা যাইতে যাইতে ওনারা ইস্কাপনের টেক্কায় চইলা গেছেন। সন্ধ্যা নাগাদ আমরা ইস্কাটনে পৌঁছাইতে পারলাম। সেইদিন জানা গেল না, পরের দিন জানা গেল আমার চাকরি যায় নাই, রাইসু ভাইয়ের চাকরি গেছে।
আন্দোলন করতেছি, সবার সঙ্গে আছি কিন্তু মনে মনে এইটা বুঝতেছি রাস্তা আলাদা হয়া যাইতেছে। মিডিয়ার বাজার খারাপ। এইসময় চাকরি গেলে এখনই কেউ চাকরি পাবে না। যারা চাকরি ছাড়ছে তারা ক্ষতিপূরণ পাবে। কিন্তু আমি নিজে থেকে চাকরি ছাড়লে কিছুই পাবো না।
তীব্র অপরাধ বোধ আর লজ্জা নিয়ে দুই/তিনদিন পর যায়যায়দিনে জয়েন করার দিনটা আমার জীবনে সবচেয়ে খারাপ দিনগুলোর একটা। কেউ যদি যায়যায়দিনের জীবনে আমার সবচেয়ে আনন্দময় সময়গুলার কথা জিগান তাইলে আমি বলবো, হ্যাঁ ব্রাত্য রাইসুর সঙ্গে কাজ করার সময়টা। ব্লগে একবার রাইসু ভাই পোস্ট দিয়া আমার চলতি ভাষার ডিকশেনারি করার উদ্যোগকে শুভেচ্ছা জানাইছিলেন। আমি মনে করলাম ব্রাত্য রাইসু এইরকম শুভেচ্ছা জানাইছেন তো আমার বিষয়টারে ক্লিয়ার করা দরকার। চলতি ভাষা চর্চায় ওনার অবদানটা বইলা ফেলি।
একটা পোস্ট দিতেই সবার গাত্রদাহ শুরু হইলো। আমি আনন্দের সঙ্গে পাঁচটা পোস্ট দিলাম। অনেকেই এখনও সেই পোস্টগুলার রেফারেন্স দেয় এই বইলা যে, আমি বুঝি ব্রাত্য রাইসুকে তেল দিছি। সম্ভবত রাইসু ভাইও এইটা মনে করেন। কনটেন্ট রাইখা, মোটিভ দেখার প্রবণতার কারণেই এই মিস রিংডিং হইছে বইলা আমার ধারণা।
আমার বক্তব্য পরিষ্কার, রাইসু ভাই জানে, আমি এডিটোরিয়াল ছাইড়া সাহিত্য পাতায় আসার জন্য আগ্রহী আছিলাম না। যায়যায়দিনের এডিটোরিয়ালেই আসতে চাইছিলাম। রাইসু ভাইয়ের আগ্রহেই সাহিত্যে গেছি। আমার ধারণা, নিজের পাতার জন্য আমার চেয়ে ভাল সিনিয়র সাব-এডিটর উনি পাইতেন না।
পিয়াল একাধিকবার ব্লগে লিখছে, আমি রাইসু ভাইরে সরায়ে দিয়া সাহিত্য সম্পাদক হইছি।
আমি ভাবছি, আর কেউ না হউক রাইসু ভাই এইটার প্রতিবাদ করবে। কারণ, কাউরে সরায়া দেওয়ার মতো সখ্যতা কখনোই শফিক রেহমানের সঙ্গে আমার হয় নাই। পরন্তু ১০৪ জন চাকরিজীবীর মধ্যে শুধু একজনের ক্ষেত্রে সরায়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক। ১০৪ জনকেই যদি থেকে যাওয়া কেউ না কেউ সরায়ে দেওয়ার এন্তজাম করে তাইলে ঈদের আগেই যায়যায়দিনে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার কথা। তা হয় নাই।
বরং কিচেন কেবিনেটের সদস্যরা ছাড়া বাকী সবাই একাট্টা ছিলেন এইটাই আমি জানি।
১০৪ জনের সঙ্গে আমার চাকরি গেল না। পরে অনেকের চাকরি হইছে গেছে। আমার যায় নাই। এইরকম কয়েকজন ছিলেন।
আমরা নিজেদের আদু ভাই বলতাম। বলতাম, সবাই পাশ কইরা যাইতেছে আমরা খালি পুরান ক্লাশে থাইকা গেলাম। কেন গেল না, এইটা একটা রহস্য। একবার দেখলাম, চাকরি যাওয়ার এন্তজাম শেষ। আমার ম্যাগাজিনের ম্যাটার আমার অজান্তে কম্পোজ হয়া তৈরি হয়ে গেছে।
আমি প্রমাদ ও পাওনা টাকার হিসাব গুনতে থাকলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গেল না। কয়েল জ্বালানোর আন্দোলনের পর ভাবলাম, এইবার যাবে। গেল না। তিন মাসের বকেয়া বেতন আদায়ের আন্দোলনে জেনারেল মিটিংয়ে গরম বক্তৃতা দেয়ার পর ভাবলাম, এইবার ক্ষমা নাই।
কিন্তু সে বারও গেল না। শফিক ভাইয়ের সঙ্গে আমার সখ্য ছিল না, নিয়মিত ওঠা বসা ছিল না। তারপরও এই চাকরি না যাওয়ার ঘটনা থেকে আমার ধারণা হইছে উনি আমারে পছন্দ করেন। আমিও ওনারে পছন্দ করি। যায়যায়দিন ছেড়ে আসার দিন তার কথা মনে হয়েই আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল।
আমি তার অনেক কাজ অপছন্দ করেছি, তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে পছন্দ করি। উনি না চাইলে, যায়যায়দিন থেকে কয়েকবার আমার চাকরি চলে যাওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল।
চাকরি গেলে চাকরি হয়তো পেতাম। বাজার ছোট হয়ে এসেছে, নতুন উদ্যোগ নাই, তারপরও অনেকেই অনেক জায়গায় কাজ পেয়েছেন। আমিও হয়তো পেতাম।
কিন্তু শত সমস্যার মধ্যেও ভাবছিলাম, নতুন একটা উদ্যোগ হোক তারপর চাকরিটা ছাড়ি। কিন্তু গণতন্ত্রের মতো সংবাদপত্রের নতুন উদ্যোগও অনেক দূরে।
বলছিলাম রাইসু ভাইয়ের কথা। খুব কম সময় আমরা কাজ করেছি। এরই মধ্যে মতান্তর হইছে, অমত হইছে কিছু সময় কিন্তু কখনো সময় নিরানন্দ কাটে নাই।
গভীর রাত পর্যন্ত অফিসে থাকতাম আমরা। একসঙ্গে খানাপিনা করতাম। সবচেয়ে মজার ছিল গভীর রাত পর্যন্ত মেকাপ করা বিষয়টা। গ্রাফিক্সের মেহেদী ভাই, আমি আর রাইসু ভাই মিলে বেশ কয়েক সপ্তাহ সারারাত করে মাঝে মাঝেই ভোর রাতে বাড়ি ফিরতাম। ফুরফুরে হাওয়ার সকাল বেলার ঢাকা শহর দিয়ে বাসায় ফিরে বিকাল পর্যন্ত ঘুমাতাম।
সন্ধ্যায় আবার অফিসে যেতাম। সেই আমেজটা এখনও মনে পড়ে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।