আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্রামের মেলা



গ্রামে যারা বড় হয়েছেন তাদের কাছে গ্রামের মেলা অপরিচিত নয়। আগে ছোট বড় সব গ্রামেই সারা বছর বেশ কয়েকটা মেলা হত। এখন অবশ্য আগের মত হয়না। আমাদের গ্রামে আগে বছরে দুটি মেলা হত একটা বৈশাখ মাসে আর একটি পৌষ মাসে। গ্রামের বিনোদনের খুব বেশি ব্যবস্থা না থাকায় তারা সারা বছর এই মেলার জন্য অপেক্ষা করতো।

গ্রামের ছেলে বুড়ো সবার কাছেই মেলা একটি বড় আনন্দের উপলক্ষ্য। বৈশাখের মেলার সাথে থাকে হালখাতার বাড়তি আনন্দ। মেলার সবচেয়ে বড় আনন্দটা উপভোগ করতো ছোটরা। মেলার ছোট ছোট ছুপরি দোকান গুলোতে ছড়িয়ে থাকতো ছোটদের খেলনার হরেক রকম পসরা। গ্রামে খুব একটা বড় দোকান না থাকাতে মেলাই হত ছোটদের খেলনা কেনার সবচেয়ে বড় উপায়।

কি খেলনা ছিলনা সেই দোকানে আমার মত গ্রামের ছোট ছেলে স্বপ্ন দেখতে পারে এমন সব কিছুই ছিল ওখানে। মনে পরে সেই কাঠের বন্দুক গুলোর কথা,গায়ের জোরে বন্দুকের পেছনের স্প্রিং টেনে ওটাতে গুলোতে গুলি ভরতে হত যা আমাদের মত ছোটদের পক্ষে ছিল বেশ কষ্টকর। কিংবা মনে পরে সেই হতে টানা টমটম গাড়িটির কথা, যা টানলে ওটাতে থাকা ঢোলটি ঠাস ঠাস শব্দ করে বাজতো, খুব বাচ্চাই ছিল যারা মেলা থেকে যাওয়ার সময় এই গাড়ি একটা করে না নিয়ে যেত এর শব্দে সারা মেলা মুখর থাকতো। মনে আসে একটা লঞ্চ কেনার জন্য মেলায় গিয়ে কান্না জুড়ে দিয়ে ছিলাম, টিনের তৈরি যে লঞ্চের ভেতরে একটু আগুন ধরিয়ে পানিতে ছেড়ে দিলে ভড ভড করে চলতো যা ছিল আমাদের কাছে খুব বিস্ময়ের ব্যপার। আরও পাওয়া যেত বাশ ও কাঠের তৈরি হাজারও জিনিস।

সেই মেলার সব চেয়ে আনন্দের জিনিস ছিল নাগোরদোলা, যে সেই নাগর দোলায় চড়তে সে মনে করতো পুরো দুনিয়া তার দেখা হয় গেছে আগে তো আর বর্তমানের মত মত উচু দালান ছিলনা। আর ছিল হরেক রকমের মিষ্টি সব চেয়ে মজার চিনির সাচ হাতি ঘোড়া নৌকা আরও কত কিচু ছিল চিনির তৈরি। আমরা কখনই পুরো হাতি বা ঘোড়া টি খেতাম না মজা শেষ হয়ে যাবে বলে। অনেক মেলার শেষ দিনে যাত্রা পালার মতো আয়োজন এখন আগের মত মেলার সেই মজা নেই সেই গ্রামও আর গ্রাম নেই। আগে যেখানে হাতে তৈরি পন্য ছিল মেলার প্রাণ এখন সব কৃত্তিম হয়ে গিয়েছে খাটি পন্যও আর পাওয়া যায়না আধুনিক সব খেলনার কাছে পুরাতন সেই খলনা গুলো হারিয়ে গিয়েছে।

তবুও এখনও মেলা হয় গ্রামীন আনন্দটা এখনও বুঝা যায় সেখানে গেলে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।