আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অভিশাপের পংক্তিমালা

তুমি আমার পাশে বন্ধু হে বসিয়া থাকো, একটু বসিয়া থাকো... ♫ ♫♫ ♫ ♫

১৯৯৬ সালের প্রথম দিকের কথা। তখন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। রেজাল্ট হয়নি। আমরা ১০/১৫ জন বন্ধু প্রতিদিন বিকেল হলেই বেশ কয়েক ঘন্টা আড্ডাবাজিতে সময় কাটাতাম। এর মধ্যে আমাদের এক বন্ধু তার প্রতিবেশী এক মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলো।

বন্ধুটি মুসলমান। মেয়েটা হিন্দু। সঙ্গত কারনে এই প্রেম হওয়ার তেমন কোন কারণই ছিলোনা! কাঁচা বয়স বলে কথা! বন্ধুটি আবেগাপ্লুত হয়ে একটা চিঠিও দিয়েছিলো মেয়েটাকে। কিন্তু মেয়েটির দিক থেকে কোন সাড়া নেই। এদিকে একদিন মেয়েটির বাসার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের মধ্যে কেউ একজন তীর্যক মন্তব্য ছুঁড়ে দিয়েছিলো।

ফলাফল, মেয়েটার মা আমাদেরকে চ্যালাকাঠ হাতে দৌড়ানি। আমি অবশ্য বেশ সাহস নিয়ে হেঁটে হেঁটেই চলে এসেছিলাম। আমি আবার খুব ভদ্র টাইপ ছেলে ছিলাম তো, তাই নিশ্চিত ছিলাম আমাকে কিছু বলবেনা! তাছাড়া আমি তো কোন মন্তব্য করিনি! অন্যরা ভয়ে ভোঁ দৌড়! সেদিনই নিশ্চিত হওয়া গেলো এই প্রেম হওয়ার কোনই সম্ভাবনা নাই। যাই হোক, মেয়েটার কাছ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে বন্ধুটির অব্স্থা খারাপ। আমরাও বেশ ক্ষুদ্ধ! শেষে আমি বন্ধুর দূ:খে দূ:খিত হয়ে মেয়েটিকে অভিশাপ দিয়ে মহা বিপ্লবী এক কোবতে লিখে ফেললাম! অবশ্য সেটা মেয়েটিকে দেয়া হয়নি।

নিজেরা নিজেরাই পড়েছিলাম। লেখাটা খুঁজে পেলাম আজ। কাগজ ছিঁড়ে শেষ অবস্থা! পুরোনো অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। বেশ একচোট হেসে নিলাম নিজে নিজেই। সবার সাথে শেয়ার করছি লেখাটা! মজা লাগারই কথা সবার! অভিশাপের পংক্তিমালা (উৎসর্গ: বন্ধু .... ) কোন এক রক্তিম গোধূলীতে ভালোবাসার কাঙাল আমি তোমাকে চেয়েছিলাম।

কোন এক ফেরারী সকালে অসহায় আমি তোমার হৃদয়ে আশ্রয় চেয়েছিলাম। কোন এক স্বপ্নীল জ্যোৎস্নায় খোলা আকাশের নীচে আমার চোখে চোখ রেখে বলেছিলে, ‘তুমি শুধুই আমার’। বুঝিনি এ ছিলো তোমার অভিনয়! আমি প্রতিবাদ করি তোমার এই নিষ্ঠুরতার, আমি প্রতিবাদ করি তোমার এই প্রেম প্রেম খেলার, আমি প্রতিবাদ করি তোমার এই ছলনার, আমি প্রতিবাদ করি তোমার এই স্বার্থপরতার, আমি প্রতিবাদ করি তোমার এই অভিনয়ের, আমি ঘৃণা করি তোমাকে। আমি অভিশাপ দিচ্ছি তোমায় কখনো কেউ তোমাকে বলবেনা ভালোবাসার কথা। আমি ‌অভিশাপ দিচ্ছি পৃথিবীর কেউ কাছে টেনে নেবেনা তোমায় কখনো।

আমি অভিশাপ দিচ্ছি তোমাকে দেখে পৃথিবীর সমস্ত ফু‍ল লজ্জায় ঘৃণায় ঝরে যাবে, কোন পাখি গাইবে না গান মধুর সুরে। আমি অভিশাপ দিচ্ছি তোমায় কোন গাছ ক্লান্ত তোমাকে দেবেনা ছায়া, খাঁ খাঁ রোদ্দুরে কোন মেঘ তোমাকে দেবেনা ছায়া, উত্তপ্ত দুপুরে ঠান্ডা দখিনা বাতাস তোমার শরীর ছুঁয়ে যাবেনা। আমি অভিশাপ দিচ্ছি এই সূর্য তোমায় দেবেনা আলো, এই চাঁদ তোমার আকাশে ছড়াবেনা জ্যোৎস্না। আমি অভিশাপ দিচ্ছি রাতজাগা বিনিদ্র তোমাকে সঙ্গ দেবেনা কোন নক্ষত্র, সঙ্গ দেবেনা কোন প্রজাপতি। আমি অভিশাপ দিচ্ছি তোমার সঙ্গী হবে রাতজাগা কষ্টরা, দূঃখ হবে তোমার পোশাক হতাশা হবে তোমার প্রসাধনী, অনন্ত মহাকাশের মত নিঃসীম শূন্যতা হবে তোমার একান্ত বন্ধু।

আমি অভিশাপ দিচ্ছি পৃথিবীর সমস্ত মানুষ তোমাকে ঘৃণাই করে যাবে। ২৮.৩.১৯৯৬ - - - (শেষ খবর, মেয়েটি এখন আম্রিকা আছে। একটা সন্তানও হয়েছে। বন্ধুটি এখনো অবিবাহিত। )


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।