আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোনাজাত উদ্দীন - আমাদের চারণ সাংবাদিক - আপনার জন্য ভালবাসা



যেদিন প্রথম শুনলাম মোনাজাত উদ্দীন আর নেই আমি কেঁদেছিলাম। বোধহয় ওটাই প্রথম 'চিনি না' কারো জন্য কান্না। দৈনিক সংবাদে যখন উনি লিখতেন তখন থেকেই তাঁর লেখা পড়ি। 'পথ থেকে পথে', 'কানসোনার মুখ', পায়রাবন্দের শেকড়ের কথা', 'ছোট ছোট খবর'..... কী অসাধারন লেখা! এমন দরদ দিয়ে এখন কেউ লেখে কিনা কে জানে? ঐ 'দুই পয়সা' মানুষগুলোর জন্য কার এত মাথাব্যথা? অনুসন্ধানী লেখা পাওয়া খুব মুশকিল। মাইলের পর মাইল চটি পায়ে একটা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে গ্রামকে গ্রাম নিউজ কভার করা - দেশ বা মানুষের জন্য ভালবাসা-মমতা না থাকলে সম্ভব না।

নেশা ছিল কি তাঁর মানুষকে ভালবাসবার? ছয়ফুট উচ্চতার মেদহীন একজন মানুষ ছিলেন মোনাজাত উদ্দীন। কিভাবে যমুনাতে পড়ে গিয়ে মারা যায়! নদী কি এত নির্দয় হয়? সত্য রিপোর্টের কারনে অজস্র শত্রু তৈরী করেছিলেন কি? তাঁর মৃত্যুর কারন নিয়ে সাংবাদিকরাও খুব একটা ঘাটাঘাটি করেননি! খুব স্বাভাবিকভাবেই সবাই মেনে নিলেন! কেন? মানুষটি কি নিঃসঙ্গ ছিলেন? মানা যায় না। তবে কি স্ব-পেশার মানুষদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন খুব ঘনিষ্টতা না রাখার জন্য? সরাসারি কথা বলার জন্য? কেন তাঁর মৃত্যুর কারন নিয়ে আপনারা এগোলেন না? কেন এটাকে 'স্বাভাবিক বা দুর্ঘটনায় মৃত্যু' মনে করলেন? আমি যতদূর জানি মোনাজাত উদ্দীন 'প্রেস ক্লাব'-এর সদস্যপদের জন্য খুব বেশী মরিয়া ছিলেন না এবং 'সদস্য'-টুকুও ছিলেন না। যে বহুযুগ পরে শেখাল নিরস সংবাদকেও সাহিত্যে উত্তরণ করা যায়, যে আমাদের শেখাল 'গ্রাম সাংবাদিকতা', যে চিনিয়ে দিল গ্রামকে যেখানে আমাদের সবারই নাড়ী পোঁতা, যে দেখিয়ে দিল সমাজের ভন্ডদের, যে খবরের ভিতরের খবর বের করে আনতো অতি সাধারন মানুষের স্বার্থে - তাঁকে আমরা মনে রাখিনি! তাঁর পরিবারের কে কোথায় আছেন কেউ জানি না-খোঁজ নিই না? জানি তাঁর ছেলেটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পড়তে আত্মহত্যা করেছিল, কি দুঃখে তা আর জানা হয়নি। কিন্তু আর অন্য সদস্যরা? ..............আমরা বারবার প্রমান করছি, এ দেশকে যারা ভালবেসেছে সেই মানুষগুলো বড়বেশী অপ্রয়োজনীয় - তাই না? আমরা কি অলক্ষ্যে আমাদেরকে জাতি হিসাবেই এমন প্রমান করছি? উদাসীন, নির্বোধ? ভাবতে কখনোই ভাল লাগে না আমরা তেমন, কিন্তু....? নাকি ঐ মানুষরা যা করছে আমরা সেগুলোকেই Granted ধরে নিচ্ছি? তাহলে তো কৃতজ্ঞতা থাকা উচিৎ।

তার লক্ষণই বা কই? আমি জানি আর বিশ্বাস করি পল্লীর সেই কিষানী বউ, হাটের ছোট্ট দোকানী বা সেই প্রাকৃতজনেরা আপনাকে হয়ত আপনার নামে নয় - আপনার কাজকে ভালবাসবে আজীবন। মনে রাখবে আর আনমনে জিজ্ঞাসা করবে 'একজন ছিল যে আমাদের কথা বলত, সেই মানুষটা কই'? আপনার অভাব কি পূরণ হবার? মোনাজাত উদ্দীন আপনি আমার ভালবাসা গ্রহন করুন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।