আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

য়্যাস ফর্মুলা - ৭

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

উপদেষ্টা পরিষদ ভাবছে সামনের নির্বাচনে হিউম্যান-বিং নয়, হিমম্যান-লাইক-রোবটদের কেবল পদপ্রার্থী হবার অনুমতি দেয়া হবে। আমাদের রপ্তানীকারণ সংঘের মধ্যে দ্বিমত থাকলেও এটাকে একটা মাস-মাইনাস পরিকল্পনা হিশেবে ধরে নিলাম। দেশ থেকে এ মুহূর্তে দশকোটি মানুষ রপ্তানী করার ডিমান্ড তৈরী হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এই বিশাল জনগোষ্ঠী আফ্রিকায় জাম্বিয়া নদীর তীরে নতুন মানববসতি স্থাপন করতে সক্ষম হবে। অভিজ্ঞতার আলোকে আইসিডিআরবিবি জানিয়েছে এই দশকোটি মানুষ ম্যালেরিয়াপ্রুফ - যা কোন কোন ক্ষেত্রে আফ্রিকানদের হারিয়ে দেবে।

বিষদ আলোচনায় যাবার আগে আমরা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে কিছু আলু-আপ‌্যায়নে সমাদৃত হলাম। প্রধান উপদেষ্টা প্রথম চেষ্টায় কিছু আলু প্যান্ট খুলে নিতম্বমুখে চালান করার পরে বেশ একটা তৃপ্তির ঢেকুর ছাড়লেন - আলুময় সুগন্ধীতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় মৌমৌ সুরভিত হয়ে গেল। দেখুন, রোবট-পলিটিসিয়ানদের কাজ হবে সর্বদা স্টেট অর্ডার বাস্তবায়ন করা, রাষ্ট্রনায়ক আলু মুখরিত কণ্ঠে বললেন। ওদিকে তখনও সমরনেতা তার প‌্যান্টের মুখ খুলে আলু খেতে ব্যস্ত। তো যা বলছিলাম! প্রধান উপদেষ্টা আবার শুরু করলেন।

আমাদের রোবট পলিটিসিয়ানরা সাকসেসফুললী রিপ্লেস করতে পারবে এই দশকোটি ম্যালেরিয়া প্রুফ আদমদের! আমার "কিন্তু" তখনও যায়নি। কিন্তু স্যার, কিভাবে এরা ম্যালেরিয়া প্রুফ হলো সেটা একটু যদি সবিস্তারে বলেন? পুরো রুমে গমগম করে হাসির ফোয়ারা ছুটলো। কেবিনেট ডিভিশনের পিয়নটা পর্যন্ত হো হো করে হেসে উঠলো। আপনার কি মনে হয় এতদিন পর্যন্ত আমরা জনগনের সহ্যশক্তি বাড়াই নি! ভেবেছেন এই খাদ্যসংকট আর বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় আমাদের অভূতপূর্ব সাফল্য এমনি এমনি এসেছে! আমাদের নিতম্ব স্ফীত যে লাথি কালচার বিশ্বে সাড়া জাগিয়েছে, আলু ভক্ষণের অভিনব পদ্ধতি মুখের দুর্গন্ধ নাশ করেছে, রাজনীতিবিদদের নিতম্বনাশ করে যে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্তি ঘটেছে এর পরে এই জনগন এখন প্রত্যেকেই বুলেট প্রুফ হয়ে গেছে! মাথায় ঢুকছে না। সমস্যা যেহেতু নেই, তারপরেও বিদেশে দশকোটি মানব সম্পদ রপ্তানী, রোবট পলিটিসিয়ানদের পদপ্রার্থীরা করা বেশ পরস্পরবিরোধী! জিজ্ঞেস করেই ফেললাম।

মূলত এই য়্যাস-ফর্মুলা বাস্তবায়নের পরে দেশে আর মানুষ বলতে অবশিষ্ট নেই। সবাই দেখেন কেমন রোবট হয়ে গেছে। কোন কাজ নাই, কষ্ট নাই, অভাব নাই, এমন পরিবেশে মানুষের তো আর রোবট না হয়ে উপায়ও থাকে না। হুম! আমার একটু বুদ্ধিসু্দ্ধি বাড়তে থাকে। নিজেকে চিমটি কেটে দেখলাম।

কোন অনুভূতি নাই। এটা বেশ অনেকদিন যাবতই ঘটছে। অনেককাল এদেশে এমন শান্তি আগে দেখা যায়নি। আগে সমস্যা ছিল কিন্তু মানুষজন দেশটাকে ভালবাসতো। আগে খেতে পারতো না, কিন্তু স্বপ্ন দেখতো।

দুর্নীতি ছিল, দুঃশাসন ছিল, কিন্তু দেশটাকে নিজের মনে করতো। এখন চারদিকে শান্তি আর শান্তি। এই অফুরন্ত সুখের মাঝে বসবাস করে মানুষের প্রচেষ্টা রহিত হয়ে গেছে। তার কোন স্বপ্ন-অর্জনের যুদ্ধ নেই। দুরাবস্থা উত্তরণের লক্ষ্য নেই।

মানুষজন এখন এই দেশকে আসলেই ভালবাসে না। কিন্তু এই দশকোটি মানুষ দেশ ছেড়ে যেতে কি রাজী হবে? হবে না মানে? আপনি জানেন না, এদেশের মানুষ লাথি দেবার চেয়ে লাথি খেতে পছন্দ করে বেশী! যত বেশী লাথি খাবে তত তাদের ক্রিয়েটিভিটি বের হয়! এখন জনগণ সরকারকে লাথি দিচ্ছে বটে কিন্তু বদহজম হচ্ছে তাদেরই। শান্তি নেই। আমরা প্রতিনিয়ত লাথি খাওয়াটাকে সংস্কৃতি বানিয়ে ফেলেছি। জনগণ বুঝে গেছে এ দেশে এখন আর মানুষ ক্ষমতায় নেই।

যেমন তারাও আর মানুষ নয়। তো? আবার মানুষ হবার জন্য এখন তারা আফ্রিকাতে যেতেও রাজী! আফ্রিকার জংগলের ঘাসপাতাবৃক্ষ খাবে, জীবজন্তু দিয়ে উদরপূর্তি করবে, কিন্তু তারা এই শান্তির দেশে অকর্মণ্য বসে থাকতে চায় না! সেজন্যই তো ভাবছি সামনের নির্বাচনে হিউম্যান-লাইক রোবটদের পদপ্রার্থী করার বিধান সম্বলিত নতুন নির্বাচন বিধিমালা জারি করবো!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।